Home বাণিজ্য দেশে বিদেশি বিনিয়োগে মন্দা

দেশে বিদেশি বিনিয়োগে মন্দা

নিজস্ব প্রতিবেদক
৫০ views

দেশে বিদেশি বিনিয়োগে মন্দাভাব বিরাজ করছে। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটি বলেছে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আগের বছরের চেয়ে ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ কমেছে। 

গত বছর নিট বা প্রকৃত এফডিআই এসেছে মাত্র ১২৭ কোটি (১.২৭ বিলিয়ন) ডলার। বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ১৫ হাজার ৬২১ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে নিট এফডিআইয়ের পরিমাণ ছিল ১৪৬ কোটি ৪০ লাখ (১.৪৬ বিলিয়ন) ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এই অর্থের পরিমাণ ১৮ হাজার ৭২০ কোটি টাকা।

আঙ্কটাডের  ‘ওয়ার্ল্ড ইনেভেস্টমন্ট রিপোর্ট-২০২৫’ শীর্ষক  প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আসার এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভা থেকে এটি প্রকাশ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে রয়েছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বাকি দেশের পরিসংখ্যান।

এতে দেখা যায়, ২০২২ সালে বাংলাদেশে নিট এফডিআই এসেছিল ১৫২ কোটি (১.৫২ বিলিয়ন) ডলার। ২০২১ সালে এই অঙ্ক ছিল ১৫৭ কোটি (১.৫৭ বিলিয়ন) ডলার। ২০২০ সালে এসেছিল ১৪৬ কোটি (১.৪৬ বিলিয়ন) ডলার।  

একটি নির্দিষ্ট বছরের মোট বিদেশি বিনিয়োগ বলতে বাইরের উদ্যোক্তাদের থেকে নতুন পুঁজি, বিদ্যমান বিনিয়োগের মুনাফা থেকে পুনর্বিনিয়োগ ও আন্তঃকোম্পানি ঋণের সমষ্টিকে বোঝানো হয়। একই সময়ের মধ্যে পুঁজি প্রত্যাহার, মূল কোম্পানিকে ঋণ দেওয়া ও আন্তঃকোম্পানি ঋণ পরিশোধ বাদ দিয়ে নিট বিনিয়োগের হিসাব করা হয়।

বাংলাদেশে ২০২৪ সাল শেষে বিদেশি বিনিয়োগের স্থিতি ১ হাজার ৮২৯ কোটি ডলার, যা দেশের জিডিপির মাত্র ৪ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ায় এ ক্ষেত্রে গড় হার ১৩ শতাংশ। ভারতের হার ১৪ শতাংশ। ভুটানের মতো দেশে এ হার ১৭ শতাংশ। গত বছর ভুটানে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ৬ গুণ।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অর্থ বছরে সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আসে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে। ওই বছরে ২৬৩ কোটি (২.৬৩ বিলিয়ন) ডলারের নিট এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করে জাপানের কোম্পানি জাপান টোব্যাকো। আকিজ গ্রুপের তামাক ব্যবসা কেনা বাবদ প্রায় ১৫০ কোটি (১.৫ বিলিয়ন) ডলার বিনিয়োগ করেছিল তারা।

ফরেন ইনভেস্টর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই-ফিকি) সভাপতি জাভেদ আখতার হ্যালো বাংলাদেশকে বলেন, একজন বিনিয়োগকারী তখনই বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন, যখন তিনি বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলোর ওপর ভরসা পান। বিনিয়োগের পরিবেশ ব্যবসাবান্ধব হয়। বাংলাদেশের বিনিয়োগের পরিবেশ কখনোই ভালো ছিল না। এর অন্যতম কারণ হলো—দেশের অঙ্গীকারবদ্ধ থাকার বিশ্বাসযোগ্যতা, রাষ্ট্রের বিনিয়োগ নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা ও দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার অভাব। এর ওপর গত কয়েক বছর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বিনিয়োগ আকৃষ্ট করেনি।

তিনি বলেন, গত ১০ মাসে সরকার যদিও বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তার ফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে, অথর্নীতির চাকা সচল না হলে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসা পর্যন্ত বিনিয়োগের আশা করা শুধু অযৌক্তিক নয়, দুরূহ হবে।

তিনি আরও বলেন, দেশীয় বাজার ও রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমাদের দেশের অবস্থান ভালো। কিন্তু উল্লিখিত তিনটি কারণের জন্য আমরা পিছিয়ে রয়েছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এসব বিষয় খতিয়ে দেখে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগুলোর প্রতিকার না করা পর্যন্ত বিনিয়োগকারীর আত্মবিশ্বাস বাংলাদেশের ওপর কখনোই আসবে না।

আঙ্কটাড শুধু দেশওয়ারি বিনিয়োগ আসার তথ্য প্রকাশ করে না। কোনো দেশ থেকে বাইরে কী পরিমাণ বিনিয়োগ হয়, তার তথ্যও দেয়। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে বিদেশে মাত্র ৭০ লাখ ডলারের বিনিয়োগ হয়েছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২১ সালে দেশের বাইরে সর্বাধিক ৮ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেন বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা। ২০২৪ সাল শেষে বিদেশে বাংলাদেশিদের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৩২ কোটি ২০ লাখ ডলার। আগের বছরের তুলনায় যা ৮ শতাংশ কম।

 

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুন