ফলের রাজা আম হলেও মধুমাসে আরেকটি দারুণ জনপ্রিয় ফল কাঁঠাল। শুধু স্বাদেই নয়, পুষ্টিগুণেও এই ফলটি এখন বিশ্বজুড়ে সুপারফুড হিসেবে সমাদৃত। পুষ্টিবিদদের মতে, কাঁঠাল হলো একটি অনন্য মৌসুমি ফল। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অসাধারণ ভূমিকা রাখে।
পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ ফল
প্রতি কাপ কাঁঠালে রয়েছে গড়ে ১৫৭ ক্যালোরি। ৩৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট। ৪০ মিগ্রা ক্যালসিয়াম। ২ গ্রাম ফ্যাট। ৩ গ্রাম প্রোটিন ও ফাইবার। এছাড়াও এতে পাওয়া যায় ভিটামিন A, C, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, কপার, ফসফরাস ও ম্যাংগানিজের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

কাঠাল, দুধ বা দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে স্মুদি বানালে প্রাকৃতিক এনার্জি ড্রিংকের কাজ করে, ছবি ; ইন্টারনেট।
পুষ্টিবিদদের মতামত অনুযায়ী কাঁঠালের রোগ প্রতিরোধী প্রধান ৭টি ভূমিকা হচ্ছে-
হৃদযন্ত্র রক্ষা করে নিঃশব্দে
পুষ্টিবিদ সালমা আক্তার হ্যালো বাংলাদেশকে বলেন, কাঁঠালে থাকা পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ। আর কাঁঠাল এই সমস্যাকে প্রাকৃতিকভাবে প্রতিরোধে সহায়ক। নিয়মিত কাঁঠাল খাওয়ার অভ্যাস হৃদযন্ত্রের কর্মক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
শরীরের প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি
ভিটামিন C-এর পাশাপাশি কাঁঠালে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড ও লিগনানের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা শরীরের ভেতরের নানা রকম প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। দীর্ঘমেয়াদে এই প্রদাহ যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তবে তা আর্থ্রাইটিস, চর্মরোগ ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই কাঁঠাল খাওয়া মানেই শরীরের অপ্রয়োজনীয় প্রদাহ থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখা।

পুষ্টিবিদদের মতে, কাঁঠাল শুধুই ফল নয় এটি পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যসাথী, ছবি ; ইন্টারনেট।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ
নিম্ন গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) থাকার কারণে কাঁঠাল খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা সহজে বাড়ে না। ফলে এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তুলনামূলক নিরাপদ একটি ফল হিসেবে বিবেচিত। কাঁঠালে থাকা ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও রক্তের শর্করার ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে।
ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক
কাঁঠালে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড, স্যাপোনিন ও ট্যানিন নামক প্রাকৃতিক ফাইটোকেমিক্যালস শরীরের কোষকে ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। এই উপাদানগুলো কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে রেখে ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাস করে। বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন প্রক্রিয়াজাত খাবার খেয়ে আসছেন, তাদের জন্য কাঁঠাল একটি চমৎকার ডিটক্স ফল হতে পারে।
ইমিউন সিস্টেমকে করে শক্তিশালী
কাঁঠালে উপস্থিত উচ্চমাত্রার ভিটামিন C শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলে। এটি লিম্ফোসাইট ও ফ্যাগোসাইট নামক রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলোর কার্যকারিতা বাড়িয়ে তোলে। নিয়মিত কাঁঠাল খেলে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও সাধারণ ঠান্ডা-জ্বর থেকেও শরীর রক্ষা পায়।
হজমে সহায়ক ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
কাঁঠালে রয়েছে ফাইবার, যা হজম প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি অন্ত্রে খাবারের চলাচল সহজ করে এবং বর্জ্য সহজে শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে সাহায্য করে। ফলে পেট থাকে পরিষ্কার এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
হাড় ও দাঁতের গঠনে সহায়ক
কাঁঠালে থাকা ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করে। এছাড়া ফসফরাস ও কপারও হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে। যা বয়স্কদের জন্য বিশেষ উপকারী। নিয়মিত কাঁঠাল খেলে অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি কমে ও দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধ হয়।

কাঁঠালের বিচি সুস্বাদু তরকারি হিসেবে জনপ্রিয়, ছবি ; ইন্টারনেট।
শুধু ফল নয়, এক শক্তিশালী সঙ্গী
পুষ্টিবিদদের মতে, কাঁঠাল শুধুই একটি সুস্বাদু মৌসুমি ফল নয়। এটি একাধারে একটি পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যসাথী। এটি হজম, ত্বক, ঘুম, মস্তিষ্কের শক্তি উৎপাদন, থাইরয়েড কার্যক্রম ও পেটের অ্যাসিডজনিত সমস্যা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। তাই কাঠালকে সুপারফুড বলা হয়।
কাঁঠাল যেভাবে খাবেন
আপনি কাঁঠাল খেতে পারেন সকাল বা বিকেলের হালকা স্ন্যাকস হিসেবে। ফ্রেশ অবস্থায় বা ঠান্ডা করে। দুধ বা দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে স্মুদি বানালে এটি হয় একদম প্রাকৃতিক এনার্জি ড্রিংক। কাঁঠালের বিচিও ফেলে না দিয়ে তরকারিতে ব্যবহার করুন। এতে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, যা শরীরের পেশি গঠনে সহায়ক।
এই গ্রীষ্মে কাঁঠাল থাকুক আপনার প্লেটে
পুষ্টিবিদরা একমত যে, গ্রীষ্মে কাঁঠালকে নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখলে শরীর ও মনের উপর এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এটি কেবল একটি মৌসুমি ফল নয়, বরং রোগ প্রতিরোধে প্রকৃতির একটি আশীর্বাদ। এই গ্রীষ্মে শরীরকে প্রাকৃতিক সুরক্ষা দিতে নিয়মিত কাঁঠাল খান।