আধুনিক সময়ের স্মার্ট বাড়ি মানেই সাউন্ডপ্রুফ আর হিম-শীতল পরিবেশ। কিন্তু সেই আরামদায়ক পরিবেশের আড়ালে লুকিয়ে থাকে নীরব বিপদ ঘরের বায়ু দূষণ। যতটা না বাইরের ধুলাবালি ক্ষতি করছে, তার চেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে ঘরের ভেতরের বাতাস।
এর কারণ কম বায়ু চলাচল, কৃত্রিম নির্মাণসামগ্রী, আর নানা ধরনের রাসায়নিক উপাদান।
ঘরের কোণে একটুকরো সবুজ কি সত্যিই ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ করতে পারে? উত্তর হচ্ছে—হ্যাঁ। আর সেই তালিকায় যেসব গাছ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো স্পাইডার প্ল্যান্ট। ঘর সাজানোর পাশাপাশি, পরিবেশকে প্রাণবন্ত ও নির্মল রাখার এক চমৎকার উপায় এই গাছটি।
পরিবেশকে প্রাণবন্ত ও নির্মল রাখার এক চমৎকার উপাদান স্পাইডার প্ল্যান্ট, ছবি : গার্ডেনার্স পাথ
সহজ যত্ন, দারুণ উপকার
স্পাইডার প্ল্যান্টকে অনেকেই এয়ার প্ল্যান্ট নামেও চেনেন। বিশেষ করে জনপ্রিয় হয়েছে তার যত্নের সহজতা আর ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ করার ক্ষমতার কারণে। NASA-র ১৯৮৯ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, এই গাছ ঘরের বায়ু থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিক যেমন ফরমালডিহাইড, কার্বন মনোক্সাইড ও বেনজিন শোষণ করতে সক্ষম। ফলে এটি প্রাকৃতিক বাতাস বিশুদ্ধকরণ হিসেবে ভীষণ কার্যকর।
তবে শুধু বৈজ্ঞানিক তথ্যই নয়, ব্যবহারিক জীবনেও যারা নিয়মিত ঘরের কোনায়, ডেস্কের পাশে বা বারান্দায় এই গাছ রাখেন, তারা বলেন এটি সত্যিই ঘরকে হালকা ও সতেজ অনুভব করায়।
স্পাইডার প্ল্যান্টের রয়েছে ২০০-এরও বেশি প্রজাতি। সামান্য যত্নে এর বেশিরভাগই টিকে থাকতে পারে। এমনকি যদি কয়েকদিন পানি দেওয়া না হয়, তবুও এই গাছ শুকিয়ে যায় না সহজে। ঘরের আলো-ছায়া মিলিয়েই এটি বেড়ে উঠতে পারে।
স্পাইডার প্ল্যান্টের সাদা ছোট ফুল দেখতে বেশ আকর্ষণীয়, ছবি : ইন্টারনেট
এছাড়া এই গাছ মাঝে মাঝে সাদা ছোট ফুল ফোটায়। যা দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। এর পাতা সবুজ ও সাদা ডোরাকাটা রঙের। একেকটি পাতা ঝুলে পড়ে নিচের দিকে, যা একে দেয় এক বিশেষ সৌন্দর্য।
সাধারণত সপ্তাহে ২–৩ বার পানি দিলেই চলে। টবের মাটি যাতে বেশি ভেজা না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। আবার মাসে একবার তরল সার দিলে গাছটি আরও সতেজ ও সবল হয়ে ওঠে। যারা অফিসে বা ব্যস্ত জীবনে হাতে সময় পান না, তাদের জন্য এই গাছ নিঃসন্দেহে আদর্শ।
বিষাক্তমুক্ত হওয়ায় পোষা প্রাণী বা শিশুদের জন্য এই গাছ কোনো ঝুঁকি তৈরি করে না, ছবি : কিনশিপ
নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য
যে পরিবারে ছোট শিশু বা পোষা প্রাণী (বিড়াল, কুকুর) রয়েছে। তাদের জন্য এই গাছ বিশেষভাবে উপযোগী। কারণ এটি একেবারেই বিষাক্ত নয়। অনেক সময় পোষা প্রাণী বা শিশু গাছের পাতা নিয়ে খেলতে যায়, তখন এই গাছ কোনো ঝুঁকি তৈরি করে না।
একটি ঝুলন্ত টবে একটি সতেজ স্পাইডার প্ল্যান্ট শুধু ঘরের সৌন্দর্যই বাড়ায় না, সেই সঙ্গে কাজ করে প্রাকৃতিক এয়ার ফ্রেশনার হিসেবে। অফিস ডেস্ক, স্টাডি টেবিল কিংবা বসার ঘরের জানালার পাশে এই গাছ রাখলে মন ভালো থাকে। কাজের প্রতি মনোযোগও বাড়ে।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, ঘরে এমন সবুজ গাছ থাকলে তা বিষণ্নতা ও স্ট্রেস কমাতে সহায়ক। তাই স্পাইডার প্ল্যান্ট শুধু বাতাস নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও এক ধরনের থেরাপি হিসেবে কাজ করতে পারে।
আধুনিক ভবনে এখন স্বাভাবিক বায়ু চলাচল অনেক কমে গেছে। ফলে ঘরের ভেতরের দূষণ অনিবার্য হয়ে উঠেছে। এর সমাধানে প্রযুক্তির পাশাপাশি প্রকৃতির একটি ছোঁয়া হিসেবে স্পাইডার প্ল্যান্ট হতে পারে কার্যকর পদক্ষেপ।
পরিচর্যা সহজ, দেখতে সুন্দর, বিষমুক্ত ও কার্যকর এই সবকিছুর সমন্বয়ে স্পাইডার প্ল্যান্ট হয়ে উঠেছে নগর জীবনে ঘরের নির্ভরযোগ্য সঙ্গী।
আপনার ঘরে যদি এখনো একটি স্পাইডার প্ল্যান্ট না থাকে, আজই নিয়ে আসুন। কারণ একটুকরো সবুজ মানে শুধু সৌন্দর্য নয়, স্বাস্থ্য ও প্রশান্তির এক নীরব প্রতিশ্রুতি।
সূত্র : হেলথ লাইন
