Home বিজ্ঞান ইউরোপে ৩০ লাখ বছর আগের মানুষের জীবাশ্ম প্রদর্শনী

ইউরোপে ৩০ লাখ বছর আগের মানুষের জীবাশ্ম প্রদর্শনী

মোহাম্মদ রবিউল্লাহ
৬৭ views

প্রথমবারের মতো ইউরোপে প্রদর্শিত হতে যাচ্ছে ৩০ লাখ বছর আগে পৃথিবীতে বসবাস করা মানুষের জীবাশ্ম। ইউরোপের দেশ চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগে অনুষ্ঠিত হবে ৩.১৮ মিলিয়ন বছরের পুরোনো নারী মানব লুসির জীবাশ্ম প্রদর্শনী। অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস গোত্রের প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ এই জীবাশ্ম (ফসিল) ১৯৭৪ সালে ইথিওপিয়ায় আবিষ্কৃত হয়। এই ফসিল আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে মানুষের পূর্ব পুরুষ সম্পর্কে আরও তথ্য পাবেন গবেষকরা।

লুসির প্রদর্শন প্রসঙ্গে চেক প্রধানমন্ত্রী পিটার ফিয়ালা বলেন, প্রথমবারের মতো ইউরোপে লুসির জীবাশ্ম প্রদর্শন করা হবে। এক্সিভিউশনটি আগামী ২৫ আগস্ট শুরু হয়ে দুই মাস চলবে। প্রদর্শনীতে অংশ নিতে যাওয়া লুসির জীবাশ্ম বর্তমানে গ্রাগের জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

লুসি ছাড়াও সেলাম নামের অস্ট্রালোপিথেকাসের গোত্রের আরেকটি শিশুর জীবাশ্মও উপস্থাপন করা হবে। যেটি বয়সে লুসির চেয়ে প্রায় ১ লাখ বছরের বড়। লুসির আবিস্কারের ২৫ বছর পরে একই জায়গায় (ইথিওপিয়ায়) সেলামের সন্ধান পাওয়া যায়। লুসির সঙ্গে এক্সিভিউশনে দেখা যাবে সেলামকে।

লুসির ফসিল

প্রাগ জাদুঘরে সংরক্ষিত মানব পূর্বপূরুষ লুসির ফসিল, ছবি: সান ফ্রান্সিসকো এক্সামিনার

ইথিওপিয়ার পর্যটনমন্ত্রী সেলামাউইত কাসা বলেছেন “এই ঐতিহাসিক প্রদর্শনী পর্যটক ও গবেষকদের প্রাচীন মানুষ সম্পর্কে সরাসরি জানার সুযোগ করে দেবে। এই অমূল্য জীবাশ্মগুলো নতুন করে বিজ্ঞানপ্রেমীদের মনে উন্মাদনা জাগাবে। বিজ্ঞানমনস্ক ও প্রাচীন মানুষ নিয়ে আগ্রহীরা এই প্রদর্শনীতে আসলে অন্য রকম অনুভূতি পাবেন।’’

লুসির জীবাশ্মতে দাঁত, খুলির টুকরো, পেলভিসের কিছু অংশ ও ফিমার রয়েছে। লুসির আকার হচ্ছে ১.১ মিটার লম্বা (৩.৬ ফুট), ওজন ২৯ কিলোগ্রাম (৬৪ পাউন্ড)। লুসির জীবাশ্মযুক্ত কঙ্কালটি ২০০৭-২০১৩ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জাদুঘরে পরিদর্শন করার জন্য ইথিওপিয়া থেকে পাঠানো হয়। তবে আমেরিকার নাগরিকরা মানুষের পূর্বপুরুষ লুসিকে দেখার সুযোগ পেলেও ইউরোপবাসী প্রথমবারের মতো লুসিকে দেখার সুযোগ পাচ্ছে।

লুসি নারী

শিল্পীর কল্পনায় প্রাচীন মানব নারী লুসি, ছবি: দ্য স্টার ইউকে

ইংল্যান্ডের লিভারপুলের রক ব্যান্ড দল বিটলসের “লুসি ইন দ্য স্কাই উইথ ডায়মন্ডস” গান অনুসারে এই হোমিনিডের নামকরণ করা হয়েছিল। গবেষকদের ধারণা, লুসি দুই পায়ে হাঁটতেন। ধারণা করা হয় ১১-১৩ বছর বয়সে মারা যায় লুসি। ২০০১ সালে চাদে “তুমাই” আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত লুসিই ছিল প্রাচীন মানব পূর্বপুরুষ। তুমাই ৬০-৭০ লাখ বছর পুরোনো একটি খুলি।

২০১৬ সালের এক গবেষণায় বলা হয়, লুসির হাত বেশ শক্তিশালী ছিল, কারণ তিনি নিয়মিত গাছে চড়তেন ও রাতে ডালে বাসা বাঁধতেন। তবে লুসির পা তুলনামূলকভাবে দুর্বল থাকায় গাছে উঠার সময় হাত ব্যবহার করত। একই বছরের আরেক বিশ্লেষণে লুসির একটি হাড়ের ফ্র্যাকচার দেখা যায় বলে জানানো হয়।

গবেষকরা জানান, সম্ভবত লুসি লম্বা গাছ থেকে পড়ে মারা যায়। ১৯৭৪ সাল থেকে দীর্ঘজীবী মানব নারী আত্মীয় হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন লুসি। তবে ১৯৯৪ সালে আর্দি নামে ইথিওপিয়ায় ৪৫ লাখ বছর আগে বসবাসকারী আর্ডিপিথেকাস র‍্যামিডাস গোত্রের আরেকটি নারীর জীবাশ্ম আবিষ্কারের পর লুসি মানব আত্মীয়ের মর্যাদা থেকে ছিটকে যান।

তথ্যসূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস, দ্য স্টার ইউকে ও সানফ্রান্সিসকো এক্সামিনার

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ