বর্তমান বিশ্বে ফ্যাশন শিল্প শুধু স্টাইলের পরিবর্তন নয়, বরং এটি বিশাল অর্থনৈতিক-পরিবেশগত ইস্যু হয়ে উঠেছে। ধীরগতিতে হলেও ফাস্ট ফ্যাশন থেকে মুখ সরিয়ে নিচ্ছে ফ্যাশনপ্রেমীরা। গত দশকের শেষ কয়েক বছর সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাকের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বেড়েছে। পরিবেশ ও ফ্যাশনসচেতন জেন-জিদের জন্য পুরনো সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাক কেনা একটি ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। কারণ এটি শুধু খরচ সাশ্রয়ের উপায় নয়, পরিবেশ সংরক্ষণেরও দারুণ মাধ্যম।
চলুন জেনে নেওয়া যাক সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাক ক্রয় কিভাবে পরিবেশ সুরক্ষায় সহায়তা করে-
সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাক ও পরিবেশ সংরক্ষণ
- প্রতি বছর কোটি টন পোশাক বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া হয়, যা ল্যান্ডফিল বা আবর্জনার স্তূপে জমা হয়ে পরিবেশ দূষণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাক ব্যবহারের মাধ্যমে এই বর্জ্যের পরিমাণ কমানো সম্ভব।
- একটি সাধারণ কটন টি-শার্ট তৈরিতে প্রায় ২,৭০০ লিটার পানি ব্যবহার হয়। নতুন পোশাকের পরিবর্তে পুরোনো পোশাক ব্যবহার করলে এই বিপুল পরিমাণ পানির অপচয় রোধ করা সম্ভব।

প্রতি বছর কোটি টন পোশাক বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া হয়, যা ল্যান্ডফিল বা আবর্জনার স্তূপে জমা হয়ে পরিবেশ দূষণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, ছবি: নিউ ইয়র্ক টাইমস
- পোশাক উৎপাদন ও পরিবহন প্রক্রিয়ায় কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়, যা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী। পুনঃব্যবহারযোগ্য পোশাক ব্যবহারের মাধ্যমে কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমিয়ে পরিবেশবান্ধব জীবনধারা গড়ে তোলা সম্ভব।
- নতুন পোশাক তৈরিতে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক রং ও প্রক্রিয়াজাতকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যা পানি ও মাটির দূষণ সৃষ্টি করে। পুরোনো পোশাক ব্যবহার করলে নতুন পোশাক তৈরির এই চক্র কমে যায়।
সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাক কেনার আরও যত সুবিধা
- সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাক সাধারণত নতুন পোশাকের তুলনায় অনেক কম দামে পাওয়া যায়। ভালো ব্র্যান্ডের পোশাকও অর্ধেক বা তার চেয়েও কম দামে পাওয়া সম্ভব, যা বাজেটবান্ধব কেনাকাটার জন্য আদর্শ।
- অনেক সময় সেকেন্ডহ্যান্ড দোকানে এমন ব্র্যান্ডের পোশাক পাওয়া যায়, যা নতুন হলে অনেক ব্যয়বহুল হতো। বিশেষ করে, বিদেশি ব্র্যান্ডের টেকসই ও উন্নত মানের পোশাক কম দামে কেনার সুযোগ থাকে।
- নতুন ফ্যাশনের তুলনায় ভিন্টেজ বা ক্লাসিক স্টাইলের পোশাক অনেকেই পছন্দ করেন। সেকেন্ড হ্যান্ড শপে এমন অনেক অনন্য ডিজাইনের পোশাক পাওয়া যায়, যা সাধারণ বাজারে সহজলভ্য নয়।
- ফাস্ট ফ্যাশনের কারণে পোশাকের ব্যবহার কমে যাচ্ছে এবং পোশাক তৈরির জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি ও রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহৃত হচ্ছে। সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাক কেনার মাধ্যমে নতুন পোশাক উৎপাদনের চাহিদা কমানো সম্ভব, যা পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
- অনেক সেকেন্ড হ্যান্ড শপ বা থ্রিফট স্টোর দাতব্য সংস্থার অধীনে পরিচালিত হয়। এখানে কেনাকাটা করলে সেই অর্থ বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে ব্যবহৃত হয়, যেমন- দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সহায়তা বা পরিবেশ সংরক্ষণ প্রকল্প।

সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাক কেনার মাধ্যমে নতুন পোশাক উৎপাদনের চাহিদা কমানো সম্ভব, যা পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, ছবি: নিউ ইয়র্ক টাইমস
ভালো সেকেন্ডহ্যান্ড পোশাক কেনার উপায়
- বিশ্বাসযোগ্য দোকান বা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে কিনুন।
- কাপড়ের অবস্থা ভালোভাবে যাচাই করুন—কোনো দাগ বা ছেঁড়া অংশ আছে কি না।
- পোশাক ধুয়ে ও পরিষ্কার করে নিন ব্যবহারের আগে।
- নিজের সাইজ ও ফিট নিশ্চিত করুন।
সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাক কেনা কেবলমাত্র অর্থ সাশ্রয়ের জন্যই নয়, এটি পরিবেশ রক্ষার জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দ্রুত ফ্যাশনের ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে ও পৃথিবীকে টেকসই রাখতে সবারই সচেতন হওয়া জরুরি। তাই পরবর্তী কেনাকাটার সময় সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাকের বিকল্পটি বিবেচনা করুন। একদিকে এটি হবে আপনার জন্য লাভজনক অন্যদিকে পরিবেশের জন্য কল্যাণকর একটি সিদ্ধান্ত।