Home মতামত পাকিস্তানের কথা শোনে না বন্ধু তালেবান

পাকিস্তানের কথা শোনে না বন্ধু তালেবান

চঞ্চল ঘোষ
১২২ views

দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ফের ২০২১ সালে তালেবান গোষ্ঠী কাবুলের মসনদে বসায় সবচেয়ে বেশি খুশি হয় প্রতিবেশি পাকিস্তান। কিন্তু গত কয়েক বছরে সেই সম্পর্ক মধুর না হয়ে বরং তিক্ত হয়েছে। উভয় দেশের মধ্যে কমেছে ব্যবসা-বাণিজ্য। আর বেড়েছে সীমান্ত সংঘাত ও হামলা। এতোদিন বিষয়গুলো সামনে না এলেও ধীরে ধীরে তা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে বিশ্ববাসীর কাছে। আর আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্কের টানাপোড়েনের লাগাম ধরতে আপাতত কোনো উপায় দেখছেন না আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।

বিষয়টা এতোটাই জটিল আকার ধারণ করেছে। গত মাসে একটি অনুষ্ঠানে অনেকটা অভিযোগের সুরে পাকিস্তানের ক্ষমতাধর সেনাপ্রধান অসিম মনির বলেছেন, আমাদের কথা শোনে না তারা (তালেবান)। প্রত্যেক দেশ-ই ভ্রাতৃত্বসূলভ প্রতিবেশি আশা করে। তাতে সীমান্ত থেকে সন্ত্রাস পাকিস্তানে ছড়িয়ে পড়বে না। আফগান তালেবান থেকে আগের মতো সেটা-ই চাওয়া আমাদের।

তবে সেনাপ্রধান মনির যেমনটা ভাবছেন হয়েছে তার উল্টো। গত বছরের ডিসেম্বরে সীমান্ত এলাকায় তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) হামলায় প্রাণ গেছে ১৬ পাকিস্তানি সেনা সদস্যের। তালেবানের পাকিস্তানি শাখা হচ্ছে টিটিপি। এ হামলার পর আফগানিস্তানের টিটিপির গোপন আস্তানায় বোমা হামলা চালিয়েছে পাক সশস্ত্র বাহিনী।

এ ঘটনার পর সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে কাবুল ও ইসলামাবাদের মধ্যে। তালেবান গোষ্ঠী নিজেদের অতিথি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে পক্ষ নিয়েছে টিটিপির। পাশাপাশি এই বোমা হামলার কঠোর জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে একই মাসে সীমান্তে পাক সেনাদের ওপর আক্রমণ করে তালেবান।

blast

পাকিস্তানের কুয়েটা রেলস্টেশনে গত বছর  বোমা হামলার পর ঘটনাস্থলে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা, ছবি: নিক্কেই এশিয়া

এমন প্রতিবেশিকে জ্বালাতনকারী বন্ধু হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছে ক্ষুব্ধ পাকিস্তান। ইসলামাবাদ কেন্দ্রিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক দ্য পাকিস্তান ইনস্টিটিউট ফর পিস স্টাডিসের তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালে পাকিস্তানে ৫২১টি সন্ত্রাসী হামলার ঘটেছে। ওই বছর হামলার বিবেচনায় তা বেড়েছিল ৭০ শতাংশ। এ ঘটনায় হতাহত হয়েছে প্রায় দুই হাজার জন। অথচ ২০১৪ সালের পর থেকে ক্রমেই কমছিল হামলার ঘটনা। কিন্তু আফগানিস্তান থেকে ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর ক্ষমতায় আসে তালেবান। এরপর থেকেই বাড়ছে হামলার ঘটনা।

গত বছর এসব হামলার মধ্যে তিনশটির জন্য দায়ী টিটিপি। পাকিস্তানের কর্মকর্তাদের হিসেবে সীমান্তে নজরদারি রাখতে মোতায়েন রাখা হয়েছে দশ হাজার সেনা। টিটিপি আগের মতো যেখানে সেখানে হামলা না করে বরং তারা এখন শুধুই টার্গেট করছে সেনা স্থাপনাসমূহের ওপর। দেশটিতে এই গোষ্ঠীটির শক্ত অবস্থান রয়েছে উপজাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলোয়।

আমেরিকাভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইউনাইটেড স্টেটস ইনস্টিটিউট অব পিসের কর্মকর্তা অ্যান্ড্রু উইল্ডার জানান, পাকিস্তান ভেবেছিল তালেবান কাবুলের ক্ষমতায় আসলে দেশটির খুবই নির্ভরশীল ও বিশ্বস্ত বন্ধু হবে। কিন্তু তালেবান নিয়ে ইসলামাবাদের হিসাব ভুল ছিল। আফগান তালেবানের বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে একপাক্ষিক সম্পর্ক-ই জটিল সমস্যা তৈরি করেছে।

পাকিস্তান সেনাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক কাবুলের ক্ষমতার অংশীদার হাক্কানি নেটওয়ার্ক। অন্যদিকে টিটিপি অনুসরণ করে তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদাকে। যার সঙ্গে পাকিস্তানি জেনারেলদের সম্পর্ক মধুর নয়।

kabul

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির সঙ্গে তালেবানপররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুক্তাকি, ছবি: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

আঞ্চলিক সম্পর্ক বাড়াচ্ছে তালেবান
গত মাসে কাবুল সফর করেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। সীমান্ত নিরাপত্তাসহ ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা করে দুই পক্ষ। এ ছাড়া জানুয়ারির শুরুতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুক্তাকি। এ সব নিয়ে পাকিস্তানের একজন ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তা অভিযোগ জানালেও কোনো কিছুর-ই পরিবর্তন হয়নি। শুধু তাই নয়, গত মাসে কাবুল সফর করে গেছেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল তালক আল-বুকামি।

কাবুলে বন্ধু নেই ইসলামাবাদের
তালেবানের আগে কাবুল শাসন করা নর্দান অ্যালায়েন্স গোষ্ঠীর সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো নয় পাকিস্তানের। টিটিপির আগে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে মদদ দেওয়ার জন্য পাকিস্তান দায়ী করেছিল এই গোষ্ঠটিকে। অবশ্য নর্দানের সঙ্গে খুবই ভালো সম্পর্ক ইসলামাবাদের আরেক প্রতিবেশি ভারতের। এ জন্য ঘরে-বাইরে চাপে থাকা পাকিস্তান চাইছে, তালেবানের সঙ্গে আগের মতো সুসম্পর্ক গড়তে, যেন ঐক্যবদ্ধভাবে সবকিছু মোকাবেলা করা যায়।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট ও কাবুল নাউ  

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ