বর্তমান বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ ও প্রাকৃতিক সম্পদ অপচয়ের মতো গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন। তবে প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাসই পরিবেশ সুরক্ষার বড় উদ্যোগ হয়ে উঠতে পারে। পরিবেশবান্ধব জীবনধারা গড়ে তুলতে দৈনন্দিন অভ্যাসে কী ধরনের পরিবর্তন আনা প্রয়োজন, তার কিছু সহজ ও কার্যকর উদাহরণ এই নিবন্ধে তুলে ধরা হলো-
প্লাস্টিক ব্যবহার কমানো
অপ্রয়োজনীয় প্লাস্টিক বর্জন করা পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কেনাকাটার সময় পলিথিনের বদলে কাপড় বা পাটের ব্যাগ ব্যবহার করুন। পানি পানের জন্য প্লাস্টিক বোতলের পরিবর্তে স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম বা কাঁচের বোতল ব্যবহার করুন। কসমেটিক বা স্কিন ও হেয়ার কেয়ার পণ্য কেনার সময় রিসাইকেলযোগ্য প্লাস্টিকের পণ্য কিনুন।

খাবার সংগ্রহের জন্য কাঁচের বাটি ব্যবহার করুন, ছবি: সিএনএন
খাবার সংরক্ষণের জন্য পরিবেশবান্ধব উপকরণে তৈরি রিসাইকেলযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন। তবে সবচেয়ে ভালো কাঁচের জার, বোতল, বাটি বা অ্যালুমিনিয়ামের বাটি বেছে নেওয়া। এসব বিকল্প পণ্য ব্যবহার পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে।
জ্বালানি সংরক্ষণ
অপ্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বন্ধ রাখা। ঘরের আলোর জন্য এলইডি বাতি ব্যবহার করা। বিদ্যুতের জন্য সৌরশক্তির দিকে নির্ভর হলে পরিবেশের ওপর চাপ কমবে। গাড়ির পরিবর্তে সাইকেল বা গণপরিবহন ব্যবহার করলে জ্বালানি সাশ্রয় হওয়ার পাশাপাশি বায়ুদূষণও কমে আসবে।
পানি সংরক্ষণ
অপ্রয়োজনীয়ভাবে পানির অপচয় রোধ করা জরুরি। ট্যাপ খোলা রেখে ব্রাশ না করা, কম সময় ধরে গোসল করা এবং বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে তা ব্যবহার করা পরিবেশবান্ধব অভ্যাস। এসব অভ্যাস সবার গড়ে তুললে পরিবেশের কম ক্ষতি সাধিত হবে।

অযথা ট্যাপ খুলে রেখে ব্রাশ করা বা মুখ ধোঁয়ার প্রবণতা বন্ধ করা উচিৎ, ছবি: সিডিসি
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
পুনর্ব্যবহারযোগ্য ও কম্পোস্টযোগ্য বর্জ্য আলাদা করা ও অপ্রয়োজনীয় জিনিস ফেলে না দেওয়া পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কাচ, কাগজ ও প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারযোগ্য পদ্ধতিতে ফেলার মাধ্যমে পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারি। সবার সম্মিলিত প্রয়াসে এটি সম্ভব।
অর্গানিক পণ্য ব্যবহার
স্থানীয় কৃষি ও খাদ্যপণ্য ব্যবহার করে চাহিদা মেটানো যায়। এর মাধ্যমে কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানো যাবে। রাসায়নিক মুক্ত, জৈব পণ্য গ্রহণ করা মাটির উর্বরতা সুরক্ষা করে ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য নিশ্চিত করে।
সবুজায়ন
বায়ুদূষণ কমাতে ও পরিবেশকে সজীব রাখতে বেশি বেশি গাছ লাগানো প্রয়োজন। ছাদ বাগান, ব্যালকনি গার্ডেন বা নিজ আঙিনায় গাছ রোপণ করলে অক্সিজেন বাড়ে, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ হয়।

ঘরে গাছ থাকলেও তা বায়ু দূষণ রোধে সহায়তা করতে পারে, ছবি: ফ্রিপিক
সচেতনতা বাড়ানো
পরিবেশ রক্ষার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে পরিবার, বন্ধু ও সহকর্মীদের উৎসাহিত করা জরুরি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কর্মশালার মাধ্যমে মানুষকে পরিবেশবান্ধব জীবনযাপনের গুরুত্ব বোঝানো যেতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ ও প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় রোধে জীবনযাপনে কিছু সহজ পরিবর্তন আনাই যথেষ্ট। প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো, জ্বালানির অপচয় রোধ করা, পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্য বেছে নেওয়া—এসব অভ্যাস ভবিষ্যৎকে নিরাপদ করতে পারে।