সৃষ্টি-আনন্দ-লয় এই তিন মিলে মহাবিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর সূত্র রচিত হয়। আচমকা জন্ম মৃত্যুর মাঝে আনন্দ ও পরমানন্দকে জাগিয়ে তুলতে পারে কেবল ‘মানুষ’। মানুষকে সেই সুন্দর মন দিতে পারে প্রকৃতি। প্রকৃতি মায়ের যত দান তার কিছু আমরা ধ্বংস করি, আবার কিছু জোর করে সংরক্ষণ করি। কিন্তু একটা সুন্দর ভারসাম্য আনতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যহত হই। প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে সংগৃহীত উপাদান দিয়ে তৈরি এই শিল্প বর্তমান সময়ের শান্তিদায়ক একটি শিল্পকর্মে পরিণত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই শিল্পকর্ম নিয়ে নানা ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে যেকোনো অবস্থায় এই শিল্প করা সম্ভব। প্রকৃতির চমৎকার ঐ সূত্রের মতো এই শিল্পেরও রয়েছে সৃষ্টি, সুন্দর ও লয়ের সৌন্দর্য।
প্রথমত, একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে দৈনন্দিন জীবনে হাতের কাছে যা কিছু আসছে তা দিয়ে শিল্পকর্ম করার জন্য সেগুলো সতর্কতার সাথে জমিয়ে রাখতে হয়। যেহেতু প্রাকৃতিক এই উপাদানগুলো জৈবিক তাই সেগুলো পচে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন আছে কি নেই তা নিয়ে শিল্পীর সতর্কতা প্রয়োজন। শস্যদানা যেমন, ডাল, চাল, সরিষা থেকে শুরু করে নানাধরনের ফুল, ঘাস, লতাপাতা, ডাল ইত্যাদি দিয়ে এই শিল্পকর্ম করা হয়। ঘরের ভিতরে কিংবা বাইরে কিছুক্ষণ মনোনিবেশ করলেই এই জিনিসগুলি আমরা পেতে পারি। একটি শিল্পকর্ম করার তাগিদে সেই মাফিক উপাদানের খোঁজ করা অথবা যা মনে ধরে তাই সংগ্রহ করা যেতে পারে। তবে গাছ থেকে ছিড়ে বা জীবিত কিছুর ব্যবহার করা চলবে না এখানে। প্রকৃতির উপর জোর খাটিয়ে নিতে হয় এমন কিছুই ব্যবহার করা যাবে না। এরপর রাস্তার উপরে, টেবিলের উপরে অথবা কোনো কাজগের ফ্রেমের উপরে এগুলোর নানা টুকরো ব্যবহার করে একটা ভারসাম্যপূর্ণ শিল্পকর্ম করা হয়। কোনোপ্রকার আঠা বা টেপ ব্যবহার না করে শিল্পীর নিজস্ব শৈল্পিক কায়দায় একটা নান্দনিক শিল্পকর্ম সৃষ্টি হয়।

যেহেতু এই উপাদানগুলি পচনশীল এবং আঠার প্রয়োগ নেই তাই শিল্পকর্মের স্থায়িত্ব কম। বেশিরভার শিল্পী একটি ছবি তুলে স্মৃতি সংরক্ষণ করেন। অনেকে অবশ্য সেটাও করন না। পানির মাঝে সব ফেলে বিসর্জনের স্বাদ নেন অনেকে, আবার অনেকে হাত দিয়ে সব এলোমেলো করে ফেলেন। তবে গোটা বিষয়টা থেরাপিউটিক। কারণ এত সময় নিয়ে যত্ন করে এমন কিছু একটা করা হয় যেখানে নিজের অংশীদারিত্ব জাহির করার কিছুই নেই। কোনো ফলের প্রত্যাশী না হয়েও এত সুন্দর একটি কাজে দীর্ঘসময় মন দিয়ে থাকার মধ্য দিয়ে স্বার্থহীন এক সৌন্দর্যের চর্চা করা হয়। ফলে কেবল শিল্পী নন সাধারণ মানুষের জন্যেও এই শিল্প দারুন এক বটিকা। Ephemeral Art নামেও এটি পরিচিত যেহেতু শিল্পটি ক্ষণস্থায়ী। নিজের সাথে, বন্ধুদের সাথে কিংবা সন্তানকে ডিভাইস থেকে দূরে রাখার জন্যেও এই শিল্প প্রয়োজন।