বাচ্চারা সবজি খেতে চায় না, বাবা-মায়ের কমন একটি অভিযোগ। এ কারণে অনেক মা-বাবা হতাশ হয়ে পড়েন। তবে কিছু কৌশল অবলম্বন করলে তাদের মধ্যে সবজি খাওয়ার আগ্রহ তৈরি করা সম্ভব। শিশুর শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ, মেধার বিকাশ এবং সুস্থতার জন্য সবজি কতটা গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন, জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এবং গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সাইন্স এর সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্ট্রাপ্রেনেউরশিপ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক রীনাত ফওজিয়া।
শিশুরা সবসময় মুখরোচক খাবার খেতে পছন্দ করে। স্বাদ ভালো না লাগলে শিশুরা খেতে চায় না। এ কারণে তাদেরকে পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ানো বেশ কঠিন। অনেক শিশুই প্লেটে এসব খাবার দেখলে খেতে চায় না। এ কারণে অভিভাবকদেরই এমন কিছু পদ্ধতি বের করতে হবে যাতে শিশুরা পুষ্টিকর খাবারের প্রতি আগ্রহ দেখায়।
শিশুদের স্বভাবতই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। তাই শিশুর খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাবার থাকা প্রয়োজন। পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবে শিশুর বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। শরীরে পুষ্টির ঘাটতি হলে শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়।
শিশুর বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য সব ধরনের পুষ্টি উপাদানই গুরুত্বপূর্ণ। তাই শিশুর প্রতিদিনের খাবারে সঠিক অনুপাতে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট এবং ভিটামিন রাখা প্রয়োজন।

স্টার, হার্ট, বা অ্যানিমেল শেপে কেটে পরিবেশন করলে শিশুরা আগ্রহ নিয়ে খায়, ছবি: প্যারেন্টস ওয়েব
সবজির প্রতি শিশুর আগ্রহ তৈরি করতে ডাঃ মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম কিছু সৃজনশীল উপায়ে খাবার পরিবেশনের পরামর্শ দেন।
পছন্দের খাবারে মিশিয়ে দিন
শিশুরা সরাসরি সবজি খেতে চায়না। তাই শিশুর পছন্দের খাবারের সঙ্গে সবজি মিশিয়ে দিন। যেমন: ভাত, মাছ, পাস্তা, পিজ্জা, স্যুপ বা স্যান্ডউইচে সবজি যোগ করুন। ফল বা চিজের সাথে সবজি মিশিয়ে দিলে খাওয়ার আগ্রহ বাড়ে।
স্বাদ ও রঙের বৈচিত্র্য
সবজিগুলোকে বিভিন্ন রঙে সাজিয়ে পরিবেশন করুন। যেমন, লাল, হলুদ, সবুজ, বা কমলা রঙের সবজি একসাথে পরিবেশন করলে বাচ্চারা খেতে আগ্রহী হয়।
মজার আকারে কেটে পরিবেশন
সবজি বিভিন্ন আকৃতিতে কাটুন যেমন- স্টার, হার্ট, বা অ্যানিমেল শেপে কেটে পরিবেশন করুন। কারন শিশুরা মজার আকারে খাবার খেতে পছন্দ করে। এছাড়া সবজি রোল বানিয়ে পরিবেশন করলে শিশুরা বেশি উপভোগ করে।
কার্টুন আকারে সবজি মজাদার করে তুলুন
শিশুদের প্রিয় কার্টুন চরিত্রের সাথে সবজির সম্পর্ক গড়ে তুলুন। যেমন- ঢেড়স খেলে আয়রন ম্যানের মত শক্তিশালী হবে, পালন শাক খেলে গোপাল ভাঁড়ের মত বুদ্ধিমান হবে। এতে করে শিশু খাবারের বিষয়ে আগ্রহী হবে।
নতুন রেসিপি তৈরি করুন
ভেজিটেবেল বা সবজি দিয়ে মাফিন, কেক বা বার্নি তৈরি করে দেখান। অনেক সময় বাচ্চারা দেখতে মজাদার খাবারের প্রতি আগ্রহী হয়। ভেজিটেবল দিয়ে স্মুদি বা শেক তৈরি করে পরিবেশন করলে স্বাদও ভালো হয় এবং পুষ্টি পাওয়া যায়।

আকর্ষণীয় খাবারের পাত্রে বিভিন্ন রঙে সাজিয়ে পরিবেশন করলে শিশু খেতে চাইবে, ছবি, প্যাম্পারস ওয়েব
খাবার তৈরিতে অংশগ্রহণ বাড়ান
বাচ্চাকে রান্নার কাজে অংশ নিতে দিন। তারা নিজে তৈরি করলে খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। সবজি বাছাই, কাটাকুটি এবং পরিবেশন কাজে তাদের উৎসাহিত করুন।
প্রেরণাদায়ক গেম তৈরি করুন
নানা রকম ভেজিটেবল দিয়ে গেম তৈরি করুন। যেখানে বাচ্চা বিভিন্ন সবজি খেয়ে তার নাম মনে রাখতে চায়। এক্ষেত্রে ভেজিটেবল গ্যালারি তৈরি করা যেতে পারে। যেখানে প্রতিটি আইটেম খাওয়ার পর একটি পয়েন্ট দেওয়া হয় এবং শেষে ছোট একটি পুরস্কার দেওয়া যেতে পারে।
চকচকে এবং মজাদার উপস্থাপনা
এই খাবারগুলো এমনভাবে সাজান যা দেখতে আকর্ষনীয় লাগে। চকচকে, উজ্জ্বল উপকরণ দিয়ে পছন্দের ভেজিটেবল সাজালে, বাচ্চার মনে হবে এটি একটি স্পেশাল খাবার। আকর্ষণীয় খাবারের পাত্রে খাবার পরিবেশন করতে পারেন।

পরিবারের সবার সঙ্গে খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে শিশুদের খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়ে, ছবি: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
শিশুকে কতটুকু সময়ের ব্যবধানে খাবার দিতে হবে, কোন ধরনের এবং কি খাবার খাবে এই বিষয়ে অধ্যাপক রীনাত ফওজিয়া বলেন, খাওয়ার জন্য বাচ্চাকে চাপ না দিয়ে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত করুন। শিশুর বয়স ছয়মাস পূর্ণ হলে মায়ের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবার দিতে হবে। এক্ষেত্রে আলাদা খাবার রান্না করার প্রয়োজন নেই। পরিবারের সবাই ভাত, মাছ, ডাল এবং ভেজিটেবল যেসব খাবার খেয়ে থাকেন, শিশুকে ধীরে ধীরে এই খাবারে অভ্যস্ত করুন। তবে খাবারে যাতে পুষ্টিগুণ অটুট থাকে সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
শিশুরা অনেক বেশি খেলাধুলা করে এর ফলে অনেক শারীরিক পরিশ্রম হয়। এ জন্য শিশুকে ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়ানোর প্রয়োজন হয়। শিশুর খাবার এমন হওয়া উচিত যাতে সে প্রয়োজনীয় ক্যালরি পায়।
শিশুদের পাকস্থলী ছোট তাই অন্তত চার ঘণ্টা পর পর খাবার দেয়া যেতে পারে। এই সময়ের আগে শিশুকে খাবার দিলে সে বমি করতে পারে। শিশুকে আলাদা খাবার না দিয়ে পরিবারের সকলের সঙ্গে খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে শিশুর খাবারে আগ্রহ বাড়বে এবং সামাজিকীকরণ গড়ে উঠবে। শিশুর বয়স বাড়ার সঙ্গে প্রয়োজন মত খাবারে বৈচিত্র্য আনুন।