বর্তমান সময়ে ক্যান্সার এক আতঙ্কের নাম। বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ এই প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হন। তবে সুসংবাদ হলো—নিয়মিত হাঁটার মাধ্যমে ক্যান্সারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব। সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে, প্রতিদিন নির্দিষ্ট সংখ্যক পদক্ষেপ (স্টেপ) হাঁটলেই শরীর এমনভাবে সাড়া দেয়, যা বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
গবেষণার মূল বক্তব্য
যুক্তরাজ্যের একদল গবেষক হাজার হাজার মানুষের দৈনন্দিন হাঁটার অভ্যাস পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান—প্রতিদিনের পদক্ষেপের পরিমাণ সরাসরি ক্যান্সারের ঝুঁকির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এই বিশাল গবেষণাটি ৮৫,০০০ জনেরও বেশি অংশগ্রহণকারীর উপর পরিচালিত হয়েছিল যারা গড়ে ছয় বছর ধরে তাদের দৈনন্দিন চলাচলের পরিমাণ এবং তীব্রতা পরিমাপ করে অ্যাক্টিভিটি ট্র্যাকার ব্যবহার করেছিলেন।

কত স্টেপ হাঁটা হলো তার হিসাব রাখতে ফোন বা স্মার্টওয়াশে অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন, ছবি: হেলথ
বিশেষ করে, ৭,০০০ থেকে ৯,০০০ স্টেপ প্রতিদিন হাঁটা শরীরকে এমনভাবে সক্রিয় রাখে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি ১১% থেকে ১৬% পর্যন্ত হ্রাস করতে পারে। আর এই প্রভাব দেখা গেছে স্তন ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, জরায়ু ক্যান্সার, কিডনি ক্যান্সার এবং লিভার ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও।
এই গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, হাঁটার গতি যতটা না গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মোট কত স্টেপ হাঁটা হয়েছে। অর্থাৎ, আপনি ধীরে হেঁটেছেন নাকি দ্রুত, সেটা বড় বিষয় নয়। আসল বিষয় হচ্ছে আপনি দিনে কতটা নড়াচড়া করেছেন।
কেন হাঁটা এত উপকারী?
হাঁটার মাধ্যমে শরীরে নানা রকম উপকারী পরিবর্তন আসে। এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখে, ইনসুলিন সেনসিটিভিটি উন্নত করে এবং প্রদাহ কমায়—যা ক্যান্সার বৃদ্ধির মূল সহায়ক। নিয়মিত হাঁটা ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে, যা শরীরকে টিউমার কোষের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
কেবল হাঁটা নয়, সক্রিয় জীবনধারাই মূল
শুধু সকাল বা সন্ধ্যায় হাঁটলেই চলবে না, বরং সারাদিনের মোট পদক্ষেপও গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বাড়ির কাজ, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা, বাজার করা, এমনকি অফিসে একটু হাঁটাচলা করেন—তাদের মধ্যে ক্যান্সারের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম।

দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা ধূমপানের মতই ক্ষতিকর, ছবি: নিউ ইয়র্ক পোস্ট
অন্যদিকে, যারা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকেন, যেমন ডেস্ক জব করেন বা ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিভি দেখেন—তাদের মধ্যে ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই বলা হয়, “sitting is the new smoking”—অর্থাৎ অতিরিক্ত বসে থাকা এখন ধূমপানের মতোই ক্ষতিকর।
কীভাবে শুরু করবেন?
দিনে অন্তত ৭,০০০ স্টেপ হাঁটার লক্ষ্য ঠিক করুন।
ফোন বা স্মার্টওয়াচে পেডোমিটার অ্যাপ ব্যবহার করুন।
লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করুন।
অফিসে প্রতি ঘণ্টায় ৫ মিনিট হাঁটুন।
সন্ধ্যায় পার্কে বা বাসার আশেপাশে ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন।
ক্যান্সার প্রতিরোধে ও সুস্থ জীবনের জন্য খুব বেশি কিছু প্রয়োজন নেই। শুধু হাঁটার অভ্যাসই হয়ে উঠতে পারে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর অসাধারণ এক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। প্রতিদিন কিছুটা সময় হাঁটার জন্য বরাদ্দ করুন, স্টেপ গুনুন, এবং নিজের শরীরকে ক্যান্সার থেকে দূরে রাখুন।