Home লাইফস্টাইল হেলদি ফুড ট্রেন্ডের নতুন সংযোজন ‘রাগি’ আটা কতটা উপকারী?

হেলদি ফুড ট্রেন্ডের নতুন সংযোজন ‘রাগি’ আটা কতটা উপকারী?

ফাহমিদা শিকদার
৪০ views

বর্তমান স্বাস্থ্য সচেতন সমাজে ‘রাগি’ আটা নতুন সুপারফুড হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। রাগি আটা হলো এক ধরনের আটা যা তৈরি হয় ‘রাগি’ শস্য বা ফিঙ্গার মিলেট (বৈজ্ঞানিক নাম: Eleusine coracana) থেকে। এটি একটি প্রাচীন ধরণের শস্য, যা বিশেষ করে দক্ষিণ ভারত, আফ্রিকা এবং কিছু হিমালয় অঞ্চলজুড়ে চাষ হয়। বাংলায় একে অনেক সময় মাদুয়া বা নাচনী দানাও বলা হয়। গমের থেকে মোটা দানার রাগি সামান্য মেটে স্বাদযুক্ত। এটি শুধু গ্লুটেন-ফ্রি নয়, বরং পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি প্রাকৃতিক খাদ্য, যা ওজন নিয়ন্ত্রণ, হাড়ের স্বাস্থ্য, ত্বক ও চুলের যত্ন এবং ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ভারতের কর্ণাটক, তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশে এটি খুবই জনপ্রিয়। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে এখন আমাদের দেশের মানুষ ‘রাগি’ আটা সম্পর্কে জানছে। এখানে বেশ সুলভমূল্যে এটি পাওয়া যাচ্ছে।

পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ রাগি আটা

প্রতি ১০০ গ্রাম রাগি আটা থেকে প্রাপ্ত পুষ্টিগুণ নিম্নরূপ:

  • শক্তি: ৩২০ ক্যালরি
  • প্রোটিন: ৭ গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট: ৬৭ গ্রাম
  • ডায়েটারি ফাইবার: ১১ গ্রাম
  • ক্যালসিয়াম: ৩৬৪ মিলিগ্রাম
  • আয়রন: ৪.৬২ মিলিগ্রাম

রাগি আটা উচ্চমাত্রার ক্যালসিয়াম, ফাইবার ও প্রোটিন সমৃদ্ধ, যা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমায়। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

ragi1

গমের থেকে মোটা দানার রাগি সামান্য মেটে স্বাদযুক্ত, ছবি: ন্যাচারালি ইয়রস

হাড় ও দাঁতের জন্য উপকারী
‘রাগি’ আটায় দুধের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি ক্যালসিয়াম আছে। ক্যালসিয়ামে সমৃদ্ধ হওয়ায়, হাড় ও দাঁতের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে শিশুদের হাড়ের বৃদ্ধি এবং বয়স্কদের অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে এটি কার্যকর। যারা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্ট অর্থাৎ যাদের শরীরে দুধ হজম হয় না, তাদের জন্য রাগি হতে পারে প্রাকৃতিক ক্যালসিয়ামের বিকল্প উৎস।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
রাগি আটা কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত হওয়ায় এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সহায়ক।

রক্ত স্বল্পতা কমায়
১০০ গ্রাম রাগি আটায় আয়রন থাকে ৪.৬২ মিলিগ্রাম। এটি একাই আয়রনের দৈনিক চাহিদার ২০–৫০% পর্যন্ত পূরণ করতে পারে। তাই যাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের অভাব আছে তাদের জন্য ‘রাগি’ আটা বেশ উপকারি।

প্রোটিনের ভালো উৎস
প্রতি ১০০ গ্রাম রাগি আটায় প্রোটিনের পরিমাণ প্রায় ৭–৮ গ্রাম। যদিও এতে কিছু বিশেষ অ্যামিনো অ্যাসিডে (যেমন লাইসিন) কম। তবে অন্যান্য খাবারের সাথে মিলিয়ে খেলে এটি একটি সম্পূর্ণ প্রোটিন উৎসে রূপ নিতে পারে। ‘রাগি’ আটা দিয়ে তৈরি খাবারের সাথে ডাল বা ছোলা যোগ করেন, তাহলে আমিষের গুণমান আরও বাড়ে। এই পদ্ধতিতে ভেজিটেরিয়ান বা ভিগানদের জন্য রাগি হতে পারে একটি পরিপূর্ণ ও পুষ্টিকর প্রোটিন উৎস।

74333207

গ্লুটেন-ফ্রি রাগি আটায় দুধের চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি ক্যালসিয়াম আছে, ছবি: টাইমস ফুড

ত্বক ও চুলের যত্নে
‘রাগি’ আটা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা ত্বকের বার্ধক্য প্রতিরোধ করে এবং চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করে। এতে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে।

অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায়
রাগি আটা প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক হিসেবে কাজ করে, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে।

রাগি আটা ব্যবহারের পরামর্শ
রাগি আটা দিয়ে রুটি, পরিজ, পুডিং, লাড্ডু, কেক, পাউরুটি ইত্যাদি তৈরি করা যায়। এছাড়া চাইলে দুধের সঙ্গে মিশিয়েও পান করা যায়। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে এটি শরীরে অক্সালিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে, যা কিডনির পাথরের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই পরিমিতভাবে গ্রহণ করা উচিত।

সার্বিকভাবে, রাগি আটা একটি পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য, যা দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। বিশেষ করে যারা গ্লুটেন-ফ্রি ডায়েট অনুসরণ করছেন বা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাদে

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ