পৃথিবী নিজ অক্ষের উপর ২৪ ঘন্টায় একবার ঘুরে। তবে পৃথিবীর এই ঘূর্ণন গতি ধীরে ধীরে কমে আসছে, এই পরিবর্তনই আমাদের বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের উপস্থিতির একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীর দিন দীর্ঘতর হওয়ার ফলে প্রাচীনকালে সায়ানোব্যাকটেরিয়া নামক অণুজীবগুলো বেশি সময় ধরে সূর্যালোক পেয়েছে। এই সায়ানোব্যাকটেরিয়া অক্সিজেন উৎপাদনে সহায়তা করেছে।
প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর গঠনকালীন সময়ে এর ঘূর্ণন গতি অনেক দ্রুত ছিল। একটি দিন ছিল মাত্র ৬ ঘণ্টা। কিন্তু চাঁদের মহাকর্ষীয় টানের কারণে পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি ধীরে ধীরে কমে আসে, এবং বর্তমানে একটি দিন ২৪ ঘণ্টার। এই দীর্ঘতর দিনের ফলে সায়ানোব্যাকটেরিয়া বেশি সময় ধরে ফটোসিন্থেসিস করতে পারে, ফলে বেশি অক্সিজেন উৎপন্ন হয়।

দীর্ঘতর দিনের ফলে সায়ানোব্যাকটেরিয়া বেশি সময় ধরে ফটোসিন্থেসিস করতে পারে, ফলে বেশি অক্সিজেন উৎপন্ন হয়, ছবি:
গবেষণায় দেখা গেছে, লেক হুরনের একটি সিঙ্কহোলে সায়ানোব্যাকটেরিয়া এবং সালফার-ভিত্তিক অণুজীব একসাথে বসবাস করে। রাতের সময় সালফার-ভিত্তিক অণুজীবগুলো উপরের স্তরে উঠে আসে এবং সায়ানোব্যাকটেরিয়াকে সূর্যালোক থেকে বঞ্চিত করে। দিনের বেলা তারা নিচে সরে যায়, ফলে সায়ানোব্যাকটেরিয়া ফটোসিন্থেসিস করতে পারে। তবে, ফটোসিন্থেসিস শুরু করতে তাদের কিছুটা সময় লাগে, ফলে দিনের দৈর্ঘ্য বাড়লে তারা বেশি সময় ফটোসিন্থেসিস করতে পারে। এতে বেশি অক্সিজেন উৎপন্ন হয়।
এই গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে, পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতি এবং দিনের দৈর্ঘ্য বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেন স্তরের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। এই গবেষণা আমাদের পৃথিবীর ইতিহাস এবং জীবনের বিকাশ সম্পর্কে নতুন ধারণা প্রদান করে।
সূত্র: নেচার জিও সাইন্স