ব্যস্ত জীবনযাত্রা, মানসিক চাপ ও প্রযুক্তিনির্ভরতা আমাদের ঘুমের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। ঘুমজনিত সমস্যায় ভোগা মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ঘুম ভালো করতে অনেকেই নানা ওষুধ খেয়ে থাকেন, যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম নয়। অথচ প্রকৃতি আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে এক চমৎকার সমাধান—ক্যামোমাইল চা।
ক্যামোমাইল (Chamomile) একটি সুগন্ধি ভেষজ ফুল, যার শুকনো ফুল দিয়ে তৈরি হয় এই চা। এটি প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদ ও গ্রিক চিকিৎসাশাস্ত্রে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ক্যামোমাইল চায়ে রয়েছে অ্যাপিজেনিন (Apigenin) নামক এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা মস্তিষ্কে নির্দিষ্ট রিসেপ্টরের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে স্বাভাবিকভাবে ঘুম আনতে সাহায্য করে। যারা ইনসমনিয়া বা অনিদ্রায় ভুগছেন, তাদের জন্য এটি হতে পারে এক কার্যকর প্রাকৃতিক বিকল্প।

ক্যামোমাইল ফুল, ছবি: এপিক গার্ডেনিং
ঘুমের উন্নতি ছাড়াও ক্যামোমাইল চায়ের আরও কিছু উপকারিতা রয়েছে। এটি দেহ ও মস্তিষ্ককে শিথিল করে, দুশ্চিন্তা কমায় এবং মানসিক প্রশান্তি আনে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই চা নিয়মিত পান করলে উদ্বেগ কমে এবং মানসিক স্থিরতা বাড়ে। এছাড়া এটি হজমে সহায়ক, পেটের গ্যাস ও অম্বল দূর করে এবং মাসিকের সময় ব্যথা কমাতেও সহায়তা করে।

ক্যামোমাইল চা পান করলে মানসিক স্থিরতা বাড়ে, ছবি: ফ্রিপিক
তবে যাদের গর্ভাবস্থা চলছে বা অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে, তাদের এই চা গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। দিনে এক থেকে দুই কাপ ক্যামোমাইল চা পান করাই যথেষ্ট। রাতে ঘুমানোর এক ঘণ্টা আগে এক কাপ গরম এই চা শরীর ও মনকে প্রশান্ত করতে দারুণভাবে কাজ করে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ঘুম ভালো রাখার জন্য ক্যামোমাইল চা কেবল এক কাপ পানীয় নয়, বরং এটি একটি প্রাকৃতিক থেরাপি। ওষুধের বিকল্প হিসেবে এই চায়ের অভ্যাস গড়ে তোলা আমাদের সুস্থ জীবনযাত্রার পথে এক বড় পদক্ষেপ হতে পারে। প্রকৃতির এই ছোট্ট উপহারটি তাই আমাদের প্রতিদিনের রুটিনে জুড়ে দেওয়া উচিত—শুধু ঘুমের জন্য নয়, বরং সার্বিক সুস্থতার জন্যও।