এই প্রচণ্ড গরমে সময় মা-দাদিদের পাত থেকে যেসব খাবার নিয়ম করে আসে, তার মধ্যে অন্যতম হল তিতা সবজি—করলা, উচ্ছে, পাট শাক, নিমপাতা বা তিতপুঁই। আধুনিক পুষ্টিবিদরাও বলছেন, গরমকালে তিতা খাওয়ার অভ্যাস শুধুই পারিবারিক সংস্কার নয়, এটি এ সময়ে সুস্থ থাকার অন্যতম কারণ।
তিতা সবজির অন্যতম গুণ হল এগুলো শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। গরমকালে শরীর অতিরিক্ত গরম হয়ে গেলে ঘাম, তাপমাত্রা ওঠানামা, এমনকি হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরি হয়। করলা বা উচ্ছে জাতীয় তিতা সবজি রক্ত পরিশোধনে সাহায্য করে এবং শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখে।
আরও একটি বড় কারণ হল—হজম ক্ষমতা বাড়ানো। গ্রীষ্মকালে হজমশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে, তেল-মশলাদার খাবার সহজে হজম হয় না। তিতা সবজি হজমে সহায়ক, পিত্তরস নিঃসরণ বাড়িয়ে হজমক্রিয়া উন্নত করে। বিশেষ করে নিমপাতা বা নিমফুল ভাজা খেলে পেট পরিষ্কার থাকে, কোষ্ঠকাঠিন্য কমে।
গরমকালে সংক্রমণের আশঙ্কাও থাকে বেশি—ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, ভাইরাস ইত্যাদির কারণে। করলা, উচ্ছে, নিমপাতার মতো তিতা খাবারে থাকে প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক গুণ। এগুলো শরীরে জমে থাকা টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিয়ে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
তিতা সবজি খাওয়ার আরেকটি সাংস্কৃতিক দিকও রয়েছে। বাংলার ঘরোয়া রান্নায় গ্রীষ্মকালে তিতা দিয়ে খাবার শুরু করার রেওয়াজ বহু পুরনো। অনেকে বলেন, তিতা দিয়ে পেট “শুদ্ধ” হয়, ফলে পরবর্তী খাবার সহজে হজম হয়। “তিতকুটে দিয়ে শুরু কর, মিষ্টিমুখে শেষ কর”—এই প্রবাদ আজও অনেক বাঙালির রোজকার খাদ্যতালিকায় জীবন্ত।
গরমে তিতা সবজি খাওয়ার এই ঐতিহ্য শুধু স্বাদের জন্য নয়, বরং এটি একটি সময়োপযোগী, স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাস। শরীরের ভেতরের ভারসাম্য রক্ষা, হজম উন্নত রাখা, আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো—এই সবই সম্ভব হয় নিয়মিত তিতা খেলে।