আজকের দিনে বিড়াল বলতে আমরা বুঝি শান্ত স্বভাবের আদুরে গৃহপালিত বিড়াল। বাঘ, সিংহ কিংবা চিতার গোত্রের হলেও বিড়াল আমাদের জন্য কোনো ভয়ংকর প্রাণী নয়। তবে একসময় পৃথিবীতে এমন কিছু বিড়াল প্রজাতি বাস করত যারা ছিল ভয়ংকর ও রহস্যময়।
দানবীয় দাঁত, বিশালাকৃতির শরীর আর নিখুঁত শিকারের ক্ষমতা—এইসব গুণে গুণান্বিত প্রকৃতির নিঃশব্দ শিকারি ছিল বিড়াল। চলুন, মিলিয়ন বছর পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি—কীভাবে বিড়ালরা পৃথিবী শাসন করত, আর কীভাবে তাদের উত্তরসূরিরা আজও আমাদের জীবনে ছাপ রেখে চলেছে।
প্রথম বিড়াল ‘প্রোআইলুরাস’
ইঁদুর, ছুঁচো নয় বরং এই বিড়ালের খাদ্যতালিকায় ছিল ছোট হরিণ ও প্রাথমিক স্তন্যপায়ী প্রাণী। প্রোআইলুরাসকে আধুনিক বিড়ালদের প্রথম পূর্বপুরুষ হিসেবে ধরা হয়। প্রায় ৩০ মিলিয়ন বছর আগে ইউরেশিয়ায় এদের আবির্ভাব ঘটে। ছোট আকৃতির, প্রায় ৯ কেজি ওজনের, লম্বা লেজ ও ধারালো নখরযুক্ত বিড়াল ছিল এরা। ইঁদুর, ছুঁচো নয়, খাদ্যতালিকায় ছিল ছোট হরিণ ও প্রাথমিক স্তন্যপায়ী প্রাণী।
স্মাইলোডন, ছবি: বিবিসি ওয়াইল্ড লাইফ
বড় দাঁতের ‘স্মাইলোডন’
দেখতে বিড়াল কম, ভালুকের মতো ছিল স্মাইলডন নামক লম্বা দাঁতের বিড়াল। স্মাইলোডন ছিল আইস এজ যুগের বিখ্যাত শিকারি বিড়াল। এরা প্রায় ১০,০০০ বছর আগে পর্যন্ত উত্তর আমেরিকায় বাস করত। ২৮ সেন্টিমিটার লম্বা দাঁত ও শক্তিশালী পেশির শক্তিতে এরা বড় শিকার ধরতে সক্ষম ছিল। লস অ্যাঞ্জেলেসের ‘লা ব্রেয়া টার পিটস’ থেকে শত শত স্মাইলোডনের জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়েছে।
সিম্বাকুবওয়া, ছবি: বিবিসি ওয়াইল্ড লাইফ
আফ্রিকান শিকারি ‘সিম্বাকুবওয়া’
সিম্বাকুবওয়ার নাম সোয়াহিলিতে ‘মহান সিংহ’। হায়েনোডন প্রজাতির প্রাণীটি প্রায় ২৩ মিলিয়ন বছর আগে আফ্রিকায় বাস করত, ওজন ছিল প্রায় ১,৩০০ কেজি, যা সিংহের চেয়ে অনেক বেশি। এর ধারালো দাঁত ও শক্তিশালী চোয়াল এটিকে গণ্ডার ও প্রাচীন হাতির মতো বড় প্রাণী শিকার করতে সক্ষম করত।
মিরাসিনোনিক্স, ছবি: বিবিসি ওয়াইল্ড লাইফ
আমেরিকান চিতা ‘মিরাসিনোনিক্স’
মিরাসিনোনিক্স ছিল একটি বিলুপ্ত বিড়াল প্রজাতি যা প্রায় ২.৫ মিলিয়ন বছর থেকে ১৬,০০০ বছর আগে উত্তর আমেরিকায় বাস করত। দেখতে আধুনিক চিতার মতো হলেও, এর গঠন ছিল আরও শক্তিশালী। এর প্রধান শিকার ছিল প্রংহর্ন নামক দ্রুতগতির হরিণ।
আফ্রিকান ওয়াইল্ডক্যাট
প্রায় ১০,০০০ বছর আগে মধ্যপ্রাচ্যের ফার্টাইল ক্রিসেন্ট অঞ্চলে আফ্রিকান ওয়াইল্ডক্যাট মানুষের খুব কাছাকাছি বসবাস শুরু করে। মানুষের সঙ্গে সহাবস্থানের ফলে এরা ধীরে ধীরে গৃহপালিত বিড়ালে রূপান্তরিত হয়।আফ্রিকান ওয়াইল্ডক্যাটদের বর্তমানে বিশ্বের সব গৃহপালিত বিড়াল প্রজাতির পূর্বপুরুষ ধরা হয়।
সূত্র: বিবিসি ওয়াইল্ড লাইফ
