রমজান মাসে সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতার হল একপ্রকার শক্তি পুনরুদ্ধারের মুহূর্ত। কিন্তু অনেকেই লক্ষ্য করেন, ইফতারের পর হঠাৎ করে প্রচণ্ড ক্লান্তি চলে আসে, যা কাজের মনোযোগ ও কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এই ক্লান্তি দূর করার জন্য কিছু কার্যকরী উপায় অনুসরণ করা যেতে পারে।
ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন
ইফতারের সময় অতিরিক্ত তৈলাক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার খেলে শরীরে অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট প্রবেশ করে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয় এবং পরে হঠাৎ কমিয়ে দেয়। ফলে ক্লান্তি অনুভূত হয়। তাই হালকা ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ইফতার খেজুর দিয়ে শুরু করুন, যা ধীরে ধীরে রক্তে গ্লুকোজ সরবরাহ করে।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন
দিনভর পানির অভাবে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে, যা ক্লান্তির অন্যতম কারণ। তাই ইফতারের পর ধীরে ধীরে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। ইফতারের সময় খুব বেশি পানি পান না করে ছোট ছোট বিরতিতে পানি পান করাই উত্তম।
ক্যাফেইন গ্রহণ কমান
অনেকেই ইফতারের পর চা বা কফি পান করেন, যা সাময়িকভাবে সতেজতা দিলেও পরে ক্লান্তি বাড়িয়ে দিতে পারে। অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ করলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে, যা ক্লান্তির অন্যতম কারণ। ইফতারের পরপরই কফি বা চা না খেয়ে অন্তত ১ ঘণ্টা পর পান করুন।

ইফতার করার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়া যাবে না, ছবি: ইজিপশিয়ান ষ্ট্রীটস
সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন
প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও আঁশযুক্ত খাবার সমৃদ্ধ সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন। জটিল কার্বোহাইড্রেট (যেমন—ডাল, ওটস, চিড়া, লাল আটার রুটি) এবং প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর চর্বি খান (যেমন—ডিম, মাছ, বাদাম) ইফতারের পর দীর্ঘ সময় শক্তি ধরে রাখতে সহায়তা করে।
ইফতারের পর হাঁটাহাঁটি করুন
ইফতারের পরপরই শুয়ে পড়লে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এবং শরীর আরও অবসন্ন অনুভব করে। তাই খাওয়ার পর অন্তত ৩০-৪৫ মিনিট হালকা নড়াচড়া করুন বা ১০-১৫ মিনিট হালকা হাঁটাহাঁটি করুন। এ ধরনের কার্যক্রম হজমের জন্য সহায়ক।
পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন
পর্যাপ্ত ও গভীর ঘুম ক্লান্তি কমানোর মূল চাবিকাঠি। রাতে অন্তত ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। ঘুমের মান উন্নত করতে ঘুমানোর আগে মোবাইল বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস কম ব্যবহার করুন।
চিনি ও মিষ্টি খাবার পরিমিত পরিমাণে খান
অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয় এবং পরবর্তীতে কমিয়ে দেয়, যা ক্লান্তির অন্যতম কারণ হতে পারে। তাই পরিমিত মিষ্টিজাতীয় খাবার খান।
ইফতারের পর ক্লান্তি এড়ানোর জন্য খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন আনলেই অনেক ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া সম্ভব। সুস্থ ও সতেজ থাকার জন্য সচেতনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।