প্রতিদিন আমরা নানা ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করি। যেমন ফাউন্ডেশন, লিপস্টিক, শ্যাম্পু, নেইল পলিশ এবং স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট। কিন্তু আমরা কখনো ভেবে দেখেনি যে, এসব পণ্যে থাকা কিছু উপাদান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। অনেক প্রসাধনীতে এমন রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা কার্সিনোজেন হিসেবে পরিচিত—অর্থাৎ, ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
কার্সিনোজেনিক রাসায়নিক কী?
কার্সিনোজেন হলো এমন রাসায়নিক বা পদার্থ যা শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়ায়। এই ধরনের উপাদান দীর্ঘ সময় ব্যবহার করলে শরীরে বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে। এ ছাড়া কোষের ডিএনএ পরিবর্তন করে সূত্রপাত হতে পারে ক্যান্সারের।
বিউটি প্রোডাক্টে ব্যবহৃত কার্সিনোজেন
অনেক বিউটি প্রোডাক্টে নিম্নলিখিত কার্সিনোজেনিক উপাদান পাওয়া যায়:
পারাবেনস (Parabens): এটি এক ধরনের সংরক্ষণকারী (Preservative) যা অনেক প্রসাধনীতে ব্যবহৃত হয়। সৌন্দর্যপণ্যে অনেক ধরণের প্যারাবেন ব্যবহার করা হয়। যেমন- মিথাইলপ্যারাবেন, প্রোপিলপ্যারাবেন, বিউটাইলপ্যারাবেন এবং ইথাইলপ্যারাবেন। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত করতে পারে এবং স্তন ক্যান্সারের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।
ফরমালডিহাইড (Formaldehyde): এটি চুলের স্ট্রেইটেনিং প্রোডাক্ট, নেইল পলিশ এবং কিছু স্কিনকেয়ার আইটেমে পাওয়া যায়। এটি শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

যত ভালো ব্র্যান্ডের পণ্যই হোক না কেন; কিছু না কিছু কার্সিনোজেন উপাদান থাকেই, ছবি: দ্যা এভরিগার্ল
থ্যালেটস (Phthalates): পারফিউম, নেইল পলিশ এবং চুলের স্প্রে-তে ব্যবহৃত হয়। এটি হরমোন সংক্রান্ত সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
টলুইন (Toluene): এটি নেইল পলিশ ও হেয়ার ডাইতে ব্যবহৃত হয়, যা স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে এবং ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।
অ্যাসবেস্টস (Asbestos): কিছু ট্যালকম পাউডারে এটি পাওয়া গেছে, যা ফুসফুস ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। এ ছাড়া ফেনাসিটিন, কোল টার, বেনজিন, অপরিশোধিত বা হালকাভাবে শোধন করা খনিজ তেল, মিথিলিন গ্লাইকল, ইথিলিন অক্সাইড, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম এবং এর যৌগ, আর্সেনিক এবং স্ফটিক সিলিকা বা কোয়ার্টজও কার্সিনোজেনিক উপাদান।

অর্গানিক ও ন্যাচারাল প্রোডাক্ট ত্বক ও শরীরের জন্য নিরাপদ, ছবি: ফ্রিপিক
কীভাবে নিরাপদ থাকবেন?
- বিউটি প্রোডাক্ট কেনার আগে লেবেল পড়ে নিন এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক আছে কি না দেখে নিন।
- অর্গানিক ও ন্যাচারাল প্রোডাক্ট ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
- সার্টিফাইড প্রোডাক্ট কিনুন। ইউএসএফডিএ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বা অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত প্রসাধনী বেছে নিন।
- ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন। যদি ত্বকের সমস্যা হয়, তাহলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে প্রসাধনী পরিবর্তন করুন।
সৌন্দর্যের জন্য আমাদের বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করতে হয়, কিন্তু সচেতন না হলে এ গুলো স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই কেনার আগে উপাদান সম্পর্কে জানুন, নিরাপদ বিকল্প বেছে নিন এবং সৌন্দর্যের সঙ্গে সুস্থতাকেও গুরুত্ব দিন।