কফিপ্রেমীদের জন্য খারাপ সময় অপেক্ষা করছে। শিগগিরই তাদের সকালের এই প্রিয় পানীয়টির দাম আরও বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে কফি ও এর সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আন্তর্জাতিক পণ্য বাজারে কফির দাম বর্তমানে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। ১০ ডিসেম্বর অ্যারাবিকা বিনের দাম প্রতি পাউন্ড (০.৪৫ কেজি) ৩.৪৪ ডলার ছাড়িয়েছে, যা এই বছরের মধ্যেই ৮০% এরও বেশি বেড়ে গেছে। অন্যদিকে, রুবস্তা বিনের দামও সেপ্টেম্বর মাসে নতুন রেকর্ড করেছে।
একদিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই কফি উৎপাদক দেশ ব্রাজিল ও ভিয়েতনামে বৈরি আবহাওয়ার কারণে উৎপাদন কমছে, অন্যদিকে কফির জনপ্রিয়তা বাড়ায় এর দামও তরতর করে বাড়ছে। কফি ব্র্যান্ডগুলো ২০২৫ সালে দাম আরও বাড়ানোর কথা বিবেচনা করছে।
খরা ও বৃষ্টিপাত
স্যাক্সো ব্যাংকের কমোডিটি স্ট্র্যাটেজির প্রধান ওলে হ্যানসেন বলেন, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ৭০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরার মুখে পড়েছিল ব্রাজিল। তারপরের মাস অক্টোবরে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে, যার কারণে কফির ফুলগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তাই ২০২৫ সালে ব্রাজিলের কফি ফসল উদ্বেগের শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলেও তিনি জানান।
উল্লেখ্য, ১৯৭৭ সালে ব্রাজিলে অস্বাভাবিক তুষারপাতের কারণে বাগানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর কফির দাম সর্বশেষ সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়েছিল।

কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করছে কফি শিল্প, ছবি: বারচার্ট ডটকম
শুধু ব্রাজিলের কফি বাগানগুলোই নয়, অ্যারবিকা বিন উৎপাদন করা বেশিরভাগ বাগানই খারাপ আবহাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কফি উৎপাদক ভিয়েতনামে খরা ও ভারী বৃষ্টিপাত হয়। তাই রোবাস্তা বিনের সরবরাহও অনেক কমে যাচ্ছে।
ব্যবসায়ী-বিশ্লেষক অভিমত
ডাউয়ে এগবার্টস ব্র্যান্ডের স্বত্তাধিকারী জেডিই পিট বলেন, নেসলেসহ অন্যান্য ব্র্যান্ডগুলো কাঁচামালের উচ্চ মূল্যের চাপ এতদিন নিজেরা বহন করায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রধান কফি রোস্টাররা দাম বাড়লেও গ্রাহকদের আগ্রহ বজায় ছিল। তবে এবার সেই ট্রেন্ড বদলে যাবে। কারণ অনেক ব্র্যান্ডই ২০২৫ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে সুপারমার্কেটগুলোতে দাম বাড়ানোর চিন্তা-ভাবনা করছে জানান তিনি।
গত মাসে বিনিয়োগকারী এক ইভেন্টে নেসলের শীর্ষ এক নির্বাহী জানান, কফি শিল্প ‘কঠিন সময়ের’ মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করছে। দাম ও প্যাকেটের আকার নেসলে পরিবর্তন করতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল কমোডিটি ইনসাইটস-এর কফি মূল্য বিশ্লেষক ফার্নান্দা ওকাদা বলেন, ‘পণ্যটির চাহিদা বেশি, অন্যদিকে উৎপাদক ও রোস্টারদের মজুদ নিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। কফির দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইতালির সবচেয়ে বড় কফি কোম্পানি লাভাজা জানায়, কফি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ায় আমাদের কফির দামের সমন্বয় করা হবে। তবে গুণগতমান মান ঠিক রেখে এবং দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই থাকবে।
শেষ কথা:
অপরিশোধিত তেলের পরে কফি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যবসা পণ্য। চীনে কফি খাওয়ার পরিমাণ গত দশ বছরে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। চীনের মতো বিশ্বের অন্যান্য দেশেও দিন দিন কফির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এর কারণে দামও বাড়ছে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি