আগামী ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার ঠিক একদিন আগে ১৯ জানুয়ারি দেশটিতে নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে চীনা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ ‘টিকটক’। এক নতুন আইনের মাধ্যমে তাদের শর্ত দেওয়া হয়েছে, মূল চীনা সংস্থা ‘বাইটড্যান্স’-এর থেকে আলাদা হতে হবে এই সংস্থাকে। না হলে নিষেধাজ্ঞার খড়গে পড়তে হবে। সম্প্রতি মার্কিন ফেডারেল বিচারকদের একটি প্যানেল সর্বসম্মতিক্রমে আইনটি বহাল রেখেছে।
তথ্য বলছে, ১ কোটি ৭০ লাখের বেশি মার্কিন নাগরিক এই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেন। অনেকের আয় নির্ভর করছে এই অ্যাপের ওপর। এই নিষেধাজ্ঞা নিঃসন্দেহে তাদের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা বলে ধারণা করা হচ্ছে। ।
টিকটক অবশ্য জানিয়েছে, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে আপিল করবে। টিকটকের মার্কিন মুখপাত্র মাইকেল হিউজ বলেছেন, ‘আমেরিকানদের বাকস্বাধীনতার অধিকার রক্ষার জন্য সুপ্রিম কোর্টের ইতিবাচক ইতিহাস রয়েছে। আমরা আশা করি এই গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ইস্যুতে তারা তাদের স্বকীয়তা বজায় রাখবে।
টিকটকের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে না নিলে ১ কোটি ৭০ লাখের বেশি আমেরিকার কণ্ঠরোধ করা হবে। তবে এ পর্যন্ত বাইটড্যান্স থেকে আলাদা হওয়ার কোনও ইঙ্গিত তারা দেয়নি।
টিকটকের মাধ্যমে মার্কিন নাগরিকদের অনেক সংবেদনশীল তথ্য আদায় করে চীন সরকার। এটাই মার্কিনিদের ভীতির কারণ। যদিও, এর কোনও বাস্তব প্রমাণ নেই। তবে, মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টিকে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন হিসেবেই দেখবে। তাই আইন বহাল রাখার পক্ষেই রায় দিতে পারে সুপ্রিম কোর্ট। আবার, মামলাটি পর্যালোচনা না করার সিদ্ধান্তও নিতে পারে। সেক্ষেত্রে টিকটকের দ্বিতীয় ভরসা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প, আমেরিকায় টিকটক নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, তাঁর সাম্প্রতিক অবস্থান পুরো উল্টো।
গত জুনে তিনি টিকটকে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলেছিলেন, ‘আমি কখনও টিকটককে নিষিদ্ধ করব না।’ আর সেপ্টেম্বরে ভোট এগিয়ে আসার পর বলেছিলেন, ‘যারা আমেরিকায় টিকটককে বাঁচাতে চান, তারা সবাই আমাকে ভোট দিন। টিকটককে নিষিদ্ধ করার অর্থ, শুধু মেটা ও মার্ক জুকেরবার্গকে সাহায্য করা।’ তবে তিনি ক্ষমতায় আসার একদিন আগেই এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হতে চলেছে। তাই সরাসরি তার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়।
তিনি মার্কিন কংগ্রেসকে আইনটি বাতিল করতে বলতে পারেন। যদিও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্কিন কংগ্রেস সম্মতি দেবে না। সেক্ষেত্রে তার হাতে আরও দুটি বিকল্প রয়েছে। প্রথমত, তিনি তার নতুন অ্যাটর্নি জেনারেলকে আইনটি প্রয়োগ না করার নির্দেশ দিতে পারেন। দ্বিতীয়ত, চীনা মালিকা থেকে টিকটক আলাদা হয়েছে কি না তা যাচাই করতে পারেন প্রেসিডেন্ট। এই যুক্তিতে বিষয়টি নিজের হাতে নিতে পারেন ট্রাম্প।
তবে সমস্যায় পড়তে পারে অ্যাপ স্টোরগুলো। আইনে বলা হয়েছে, টিকটক যদি চীনা মালিকানা মুক্ত না হয় এবং অ্যাপ স্টোরগুলোতে ১৯ জানুয়ারির পরও টিকটক থেকে যায়, সেক্ষেত্রে তাদের মোটা অর্থ জরিমানা দিতে হবে। তাহলে ব্যবহারকারীদের কী হবে? তারা কি অন্য কোনও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম বেছে নেবে?
প্রতিটি প্ল্যাটফর্মের নিজস্ব অ্যালগরিদম থাকে। সে অনুযায়ী অর্থ উপার্জন করা যায়। তাই টিকটকে যিনি কন্টেন্ট নির্মাতা হিসেবে সফল, তিনি অন্য কোথাও সেই সাফল্য নাও পেতে পারেন। যেমন লাইফস্টাইল কন্টেন্ট নির্মাতা ক্যারি বার্ক জানিয়েছেন, তার আয়ের একটা বড় অংশ আসে টিকটক থেকে। তাই আমেরিকায় এটি বন্ধ হয়ে যাক, তিনি চান না।
তবে, অধিকাংশ আমেরিকান টিকটকারই আশাবাদী, শেষ পর্যন্ত সেটা হবে না। তারা বলছে, ২০২০ সাল থেকে টিকটক নিষিদ্ধ হওয়ার নিয়ে অনেক আলোচনা শুনেছে। এ পর্যন্ত কিছুই হয়নি। তাই, আগামী দিনেও হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। হয়তো কিছুটা সীমাবদ্ধ করা হবে। কিন্তু, পুরোপুরি বাতিল হবে না বলে আশাবাদী তারা।
ক্যারি বার্কের মতো লাখো মার্কিন নাগরিক আয় নির্ভর করে এই অ্যাপটির ওপর। তাদের আয় কি বন্ধ হয়ে যাবে? আরও কয়েক লাখ প্রতিদিন অ্যাপটিতে আসে তথ্যের খোঁজে। বিনোদনের খোঁজে। কোথায় যাবে তারা? ট্রাম্পেরও টিকটকে ১ কোটি ৪৬ লাখের মতো ফলোয়ার রয়েছে। তিনি কি এতো সহজে তা হারাতে দেবেন? না কি শেষ পর্যন্ত আপোষের রাস্তায় হাঁটবেন টিকটক? আমেরিকায় টিকটকের ভবিষ্যৎ নিয়ে এমন নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।