গত কয়েক দশকে মানুষের নানা কার্যক্রমের মধ্য পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আশার বিষয়, দেরিতে হলেও আমরা বুঝতে পেরেছি পৃথিবীকে বাঁচাতে আমাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য পরিবেশ সচেতন মানুষেরা সাসটেইনেবল বা টেকসই জীবনযাপনের দিকে মনোনিবেশ করেছেন। মিলেনিয়াল ও জেন-জি প্রজন্মের মধ্যে ফ্যাশন থেকে শুরু করে খাদ্যাভ্যাস- সবকিছুতেই সাসটেইনেবিলিটি মেনে চলার প্রয়াস দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের পরিবেশ সচেতন মানুষদের জন্য এক অভিনব উদ্যোগ হাতে নিয়েছে নেদারল্যান্ডসের এক বিজ্ঞানী। বব হেনড্রিক্স নামের এই বিজ্ঞানী প্রথমবারের মতো তৈরি করেছেন মাশরুমের কফিন।
যারা জীবিত সময়ের মতো মৃত্যুর পরও পরিবেশকে সাহায্য করতে চান, মূলত তাদের কথা চিন্তা করেই এমন কফিন উদ্ভাবন করেছেন হেনড্রিক্স। এতে তাকে সাহায্য করেছেন লোননেকে ওয়েস্টহফ। মাশরুমের কফিন প্রস্তুত ও বাজারজাত করার জন্য তারা ‘লুপ বায়োটেক’ নামের একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন।

মাশরুমের কফিন দেখতে মিশরীয় স্যারকোফ্যাগাস বা মমির কফিনের মতো।
ছবিঃ এপি নিউজ।
মৃত ব্যক্তির দাফনের জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় কাঠের কফিন। কাঠ পরিবেশবান্ধব ও বায়োডিগ্রেবল বা জীবাণুবিয়োজ্য উপাদান। কিন্তু সাধারণ কাঠের কফিন মাটিতে মিশে যেতে কয়েক যুগ সময় লেগে যায়। কিন্তু মাশরুম কফিন মাটিতে পুরোপুরি মিশে যেতে সময় নেয় মাত্র ৩০-৪৫ দিন। সাদা রঙের এই কফিন দেখতে অনেকটা মিশরীয় স্যারকোফ্যাগাস বা মমির কফিনের মতো। এটি তৈরি হয় মাশরুমের শিকড় তৈরিতে সাহায্যকারী মাইসেলিয়াম ও হেম্পের আঁশ দিয়ে।
২৯ বছর বয়সী বব হেনড্রিক্স পরিবেশের নানা উপাদান নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। বিশেষ করে মাশরুম নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘মাশরুম পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রিসাইক্লার। তাই ভাবলাম, আমরা আমাদের জীবনচক্রে কেন ওদেরকে ব্যবহার করি না? আর তারপরই আসে মাশরুম কফিন বানানোর চিন্তা।’ এখানে আরেকটি কথা না বললেই নয়। মাশরুমের কফিন মৃতদেহকে দ্রুত মাটিতে মিশিয়ে সেখান থেকে পুষ্টিগুণ নিয়ে গাছের খাবারে পরিণত হবে।

কফিনের পাশাপাশি ‘লুপ বায়োটেক’ কোম্পানিটি মৃতদেহ সৎকারের জন্য মাশরুমের ছাইয়ের পাত্রও তৈরি করছে।
ছবিঃ ইউএসএ টুডে।
কফিনের পাশাপাশি ‘লুপ বায়োটেক’ কোম্পানিটি মাশরুমের ছাইয়ের পাত্রও তৈরি করছে। অনেকে মৃতদেহ পুড়িয়ে শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে চান। মৃতের দেহপোড়া ছাই পরিবেশের কাজে লাগাতে মাশরুমের ছাইয়ের পাত্রটি তৈরি করেন হেনড্রিক্স। ওই পাত্রে পছন্দের গাছও লাগানো যাবে।
ইতিমধ্যে ‘লুপ বায়োটেক’ ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক দেশে মাশরুমের কফিন বিক্রি করছে। কোম্পানিটি প্রতি মাসে ৫০০টি কফিন ও ছাইয়ের পাত্র তৈরি করে। ভবিষ্যতে এর সংখ্যা আরও বাড়বে। মাশরুম কফিনের দাম রাখা হচ্ছে ৬৯৫ থেকে ৯৯৫ ইউরো পর্যন্ত।