Home সর্বশেষ দুই যুগ ধরে আমদানির শীর্ষে সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার

দুই যুগ ধরে আমদানির শীর্ষে সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার

ইকবাল হোসেন
১৪৭ views
ক্লিংকারবাহী লাইটার জাহাজ

ক্লিংকার হচ্ছে সিমেন্ট শিল্পের একটি কাঁচামাল। আমদানির পরিমাণে একটানা দুই যুগ (২৪ বছর) ধরেই শীর্ষে রয়েছে পণ্যটি। বিদেশ থেকে প্রতিদিন ৭৫ হাজার টন ক্লিংকার আমদানি হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আমদানির তথ্য পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

এনবিআরের হিসাবে, গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ক্লিংকার আমদানি হয়েছে ২ কোটি ৫ লাখ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ক্লিংকার আমদানি সামান্য কমলেও তা শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। আমদানির তালিকায় দ্বিতীয় শীর্ষ পণ্য কয়লা। গত অর্থবছরে কয়লার চেয়ে ক্লিংকার আমদানির পরিমাণ ছিল ৭৮ লাখ টন বেশি। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভাঙা পাথর। বিদায়ী অর্থবছরে ভাঙা পাথর আমদানি হয়েছে সোয়া কোটি টন।

সিমেন্ট খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, অবকাঠামো নির্মাণে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় সিমেন্ট। আবার সিমেন্ট তৈরির পাঁচটি কাঁচামালের মধ্যে ক্লিংকারই বেশি ব্যবহার করা হয়। এ কারণে এই শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বেশি হচ্ছে।

ক্লিংকার

ছবি: ক্লিংকার

সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানির ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়। ১৯৯৫ সালের আগে দেশে দুটি কারখানা চালু ছিল। ফলে চাহিদা মেটাতে সরাসরি সিমেন্ট আমদানি হতো। এরপর দেশীয় উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসতে থাকেন। সেই সঙ্গে বাড়তে শুরু করে ক্লিংকার আমদানি। ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছর থেকে নিয়মিত ক্লিংকার আমদানি শুরু হয়। ২০০০-২০০১ অর্থবছরে প্রথম ক্লিংকার আমদানি অন্য সব পণ্যকে ছাড়িয়ে শীর্ষে জায়গা করে নেয়।

ক্লিংকারের আগে এই তালিকায় ছিল মূলত খাদ্যশস্য গম কিংবা চাল। খাদ্য বিভাগের হিসাবে, ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে গম আমদানি হয়েছিল ১৬ লাখ ৭১ হাজার টন, যা একক পণ্য হিসেবে ছিল শীর্ষে। এর এক বছর আগে অর্থাৎ ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে শীর্ষ আমদানি পণ্য ছিল চাল। সেবার চাল আমদানি হয়েছিল ৩০ লাখ ৬৪ হাজার টন।

এদিকে বর্তমানে দেশে যত পণ্য আমদানি হয়, তার ১৫ শতাংশই সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার। গত অর্থবছরে ক্লিংকার আমদানিতে খরচ হয়েছে ১৩ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা। শিল্পের এই কাঁচামাল আমদানি থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ৩ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা।

সিমেন্ট খাতের উদ্যোক্তারা জানান, সিমেন্ট তৈরিতে পাঁচ ধরনের কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়। যার বেশিরভাগ আমদানিনির্ভর। কাঁচামাল পাঁচটি হলো– ক্লিংকার, জিপসাম, স্ল্যাগ, চুনাপাথর ও ফ্লাই অ্যাশ। এই পাঁচ পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি ও ব্যবহৃত হয় ক্লিংকার।

চুনাপাথরের সঙ্গে বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে উচ্চতাপে ক্লিংকার তৈরি করা হয়। ক্লিংকার তৈরির প্রধান তিনটি কাঁচামাল হচ্ছে যথাক্রমে চুনাপাথর ৬৫ শতাংশ, লোহার আকরিক ৮ শতাংশ এবং ক্লে ১৫ শতাংশ। সর্বমোট ৮৮ শতাংশ। চুনাপাথর একটি পাললিক শিলা। দেশে এর বিশাল মজুদ থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে প্রতি বছর ১৮ লাখ টন চুনাপাথর ভারত ও ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা হয়।

উদ্যোক্তারা জানান, দেশে সিমেন্ট ক্লিংকারের উৎপাদন শুরুর মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পথে প্রধান সমস্যা হচ্ছে নীতিনির্ধারক মহলের সঠিক পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের অভাব।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ