বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির জন্য বিশ্বে লিথিয়ামের ব্যবহার বাড়ছে। বৈদ্যুতিক গাড়ি ছাড়াও ল্যাপটপ ও স্মার্টফোনের ব্যাটারির ক্ষেত্রে লিথিয়াম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এবার মরুর দেশ সৌদি আরব তেলের খনি থেকে সফলভাবে লিথিয়াম উত্তোলন করেছে।
সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় জ্বালানি প্রতিষ্ঠান ‘আরামকো’র তেলক্ষেত্র ব্রাইন থেকে পাইলট প্রকল্প হিসেবে লিথিয়াম উত্তোলন করা হয়েছে বলে সৌদির জ্বালানি বিষয়ক উপমন্ত্রী খালিদ আল-মুদাইফার জানিয়েছেন।
কিং আবদুল্লাহ ইউনিভার্সিটি ফর সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তির মাধ্যমে লিথিয়াম আহরণ করা হচ্ছে। এই প্রকল্পে আরামকো ও ম্যাডনও কোম্পানি তাদের সহযোগিতা করছে।
গত কয়েক দশক ধরে সৌদি আরবের অর্থনীতি তেলের ওপর নির্ভর করে চলছে। তবে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বিকল্প সম্পদ খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেন। সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেশটিকে বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির কেন্দ্র হিসেবে পরিণত করতে চান তিনি। এ জন্য শত শত কোটি ডলারও ব্যয় করছেন মোহাম্মদ বিন সালমান।
সৌদি আরামকো ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি বা অ্যাডনক এতদিন লিথিয়াম নিষ্কাশনসংক্রান্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনার খুব প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল। তবে বর্তমানে লিথিয়ামকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ মনে করা হয়। তাই এই খনিজটি উৎপাদনে আরও মনযোগ বাড়াচ্ছে দেশ দুটি।

লিথিয়ামের দাম বাড়লে সৌদি আরবও শিগগিরই বাণিজ্যিকভাবে প্রকল্পটি চালু করবে, ছবি: জিও নিউজ
তবে লিথিয়াম নিষ্কাশন প্রযুক্তির ধরন সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে অস্বীকার করেছেন তারা। সৌদি আরামকো এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। অ্যাডনকও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি আরব ও আমিরাত বর্তমানে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে দেশ দুটি চাইলে এ খাতে দক্ষতা অর্জন করতে পারে। সাধারণত উন্মুক্ত পিট মাইন থেকে লিথিয়াম আহরণ অনেক ব্যয়বহুল ও পরিবেশের জন্য চ্যালেঞ্জিং। তবে লোনা জল থেকে লিথিয়াম নিষ্কাশন করার ক্ষেত্রে তেমন অসুবিধা নেই।
বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির জন্য বিশ্বে এই খনিজের ব্যবহার বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে লিথিয়ামের বড় প্রক্রিয়াজাতকারী ও ভোক্তা দেশ হচ্ছে চীন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে বিশ্বজুড়ে নতুন যানবাহন কেনা কমেছে। তাই গাড়ির চাহিদা কমায় লিথিয়ামের দামও কমেছে। ২০২২ সালের নভেম্বরে বিশ্ববাজারে লিথিয়ামের দাম সর্বোচ্চ হয়েছিল।
এরপর থেকে খনিজ পদার্থটির দাম প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গেছে। তবে শীর্ষ গাড়ি নির্মাতারা ভবিষ্যৎ চাহিদার কথা চিন্তা করে লিথিয়াম মজুত করে রাখছে। তবে এই খনিজের দাম বাড়লে সৌদি আরবও শিগগিরই বাণিজ্যিকভাবে প্রকল্পটি চালু করবে বলে জানিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী বছরগুলোতে বৈদ্যুতিক যানবাহন বা ইভি শিল্প লিথিয়ামের ওপর নির্ভর করবে। তবে ব্রাইন থেকে লিথিয়াম আহরণের একটি সমস্যা হলো এই প্রক্রিয়ায় লিথিয়ামের ঘনত্বের মাত্রা কম হতে পারে। তবে আরামকো ও অ্যাডনক লিথিয়াম পরিস্রাবণে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহ দেখিয়েছে।
সৌদি আরব ২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক ৫ লাখ ইভি উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। বর্তমানে সৌদি আরবের কোম্পানি ম্যাডেন সমুদ্রের পানি থেকে লিথিয়াম আহরণের কাজ করছে।
সৌদি শিল্প ও খনিজ সম্পদবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, তেলক্ষেত্র থেকে লিথিয়াম নিষ্কাষণের বিষয়ে ম্যাডেন ও আরামকো মিলেমিশে গবেষণা কাজ চালাচ্ছে। কোম্পানি দুইটি ভালোভাবে সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও লিথিয়াম নিষ্কাশনের কাজ করছে। যদিও এর জন্য ব্যবহৃত প্রযুক্তিগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তবে এখানে ভালো বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।
তথ্যসূত্র: আরব নিউজ ও জিও নিউজ