উৎসব মানেই আনন্দ, মিলন, আর হাসিমুখে সময় কাটানোর মুহূর্ত। তবে নারীদের জন্য উৎসব মানে কেবল আনন্দ নয়, অন্য একরকম দায়িত্বের উৎসব। নানা পদের রান্না, অতিথি আপ্যায়ন, ঘর সাজানো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, আত্মীয়স্বজনের খোঁজখবর। সব মিলিয়ে উৎসবের দিনগুলোতে নারীদের ব্যস্ততা বেড়ে যায় বহুগুণ।
ছুটির সময় গৃহকর্মে সহায়তাকারীরাও অনেক সময় অনুপস্থিত থাকেন। ফলে ঘরের সব কাজ একাই সামলাতে হয়। এই অতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক চাপ থেকে নারীদের ক্লান্তি, বিরক্তি এমনকি শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। যা ভবিষ্যতে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এ সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সচেতনতা মেনে চলা উচিত।
ঈদ উৎসবে নারীর স্বাস্থ্য সচেতনতা সম্পর্কে ডাঃ সানজানা শবনম বলেন, ঈদ উদযাপন মানেই শুধুই অন্যদের খুশি করা নয়, নিজেকেও ভালোবাসার সময়। স্বাস্থ্যই সবচেয়ে বড় সম্পদ। নিজের যত্ন না নিলে, অন্যের যত্ন নেওয়াটাও অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। তাই নিজের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন।
ঈদের খাবার উপভোগ করুন ঠিকই, তবে পরিমিতভাবে। যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা জরুরি। সবজি, সালাদ ও ফলমূল রাখুন প্রতিদিনের তালিকায়। লেবু ও দই দিয়ে হজম সহজ করুন।
পানি পান ও হাইড্রেশন বজায় রাখা
বেশি সময় রান্নাঘরে থাকলে বা অতিথি আপ্যায়নে ব্যস্ত থাকলে পানি পান কম হয়। তাই প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করুন। তাই বারবার পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। পান করা যায় ডাবের পানি, ফলের রস, লেবুর শরবত, পুদিনা বা জিরা পানিও। কাজের ফাঁকে ফ্যানের নিচে বা শীতল জায়গায় জিরিয়ে নিন।

মডেল প্রীতি, ছবি: মঞ্জুরুল আলম
মানসিক স্বস্তি ও বিশ্রাম
পরিবারের সবার খেয়াল রাখতে গিয়ে অনেক নারী নিজেকে ভুলে যান। ফলে মানসিক চাপ ও ক্লান্তি দেখা দেয়। কাজ ভাগাভাগি করুন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। নিজের জন্য প্রতিদিন অন্তত কিছু সময় রাখুন। প্রয়োজনে না বলতে শিখুন। এটি আত্মমর্যাদার পরিচয়। গভীর নিঃশ্বাস নেওয়ার ব্যায়াম করুন, মন শান্ত থাকবে।
সংক্রমণ ও স্যানিটেশন
কোরবানির সময় পরিবেশ একটু বেশি নোংরা হতে পারে। নারীদের জন্য স্যানিটারি হাইজিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাতে গ্লাভস ব্যবহার করুন কোরবানির সময়। পরিষ্কার পানি ও সাবান দিয়ে হাত ধুতে ভুলবেন না। মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন বজায় রাখুন। কোরবানির জায়গা থেকে বাচ্চাদের দূরে রাখুন । বেশি সময় এক প্যাড ব্যবহার করবেন না। প্রয়োজনে গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ নিন
শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করুন
ঈদের ঠিক আগে-পরে নানা রকম ব্যস্ততার কারণে অনেক সময় নিয়মিত ওষুধ খাওয়া, ব্যায়াম করা বা ঘুম ঠিক রাখা হয় না। এগুলো স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে। ওষুধ বা স্বাস্থ্য-পরামর্শ অনুযায়ী চলুন। অন্তত ২০ মিনিট হালকা হাঁটা বা স্ট্রেচিং রাখুন। রাতে ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন। হরমোন বা পিরিয়ড সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে অবহেলা নয়, চিকিৎসা নিন। রান্নার ফাঁকে ফাঁকে বিশ্রাম নিন। নিজের আবেগ-অনুভূতির যত্ন নিন।
ঈদের সাজেও সচেতনতা
সৌন্দর্যচর্চা ও সাজগোজ ঈদের আনন্দে বাড়তি রঙ আনে। তবে অতিরিক্ত কেমিক্যাল বা অনিয়মিত রুটিন থেকে দূরে থাকুন। হালকা মেকআপ করুন। ত্বকের ধরন বুঝে প্রসাধনী ব্যবহার করুন। ঘরে তৈরি ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন। হেয়ার স্টাইল করার আগে তেল ম্যাসাজ করে নিন। ঘামে ভেজা অবস্থায় মেকআপ দেবেন না। এতে ত্বকের ক্ষতি হয়।
উৎসব হওয়া উচিত সবার জন্য আনন্দের, মুক্তির। তাই উৎসবের প্রকৃত অর্থ তখনই পূর্ণতা পায়, যখন পরিবারের সব সদস্য মিলে দায়িত্ব ভাগ করে নেয়। নারীকেও সময় দেয় একটু নিঃশ্বাস ফেলার, একটু নিজের জন্য বাঁচার। তাই এই ঈদ হোক স্বাস্থ্যসচেতনতা ও আনন্দের অপূর্ব মিলনস্থল।