Home স্বাস্থ্য মাইগ্রেন কি, কেন এবং প্রতিরোধ

মাইগ্রেন কি, কেন এবং প্রতিরোধ

ফাহমিদা বৃষ্টি
১১৮ views

মাথা থাকলে ব্যথা হবে এটাই স্বাভাবিক। এই সমস্যায় ভোগেন নাই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবে মাথাব্যথারও কিন্তু রকমফের আছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে মাথাব্যথা দুই ধরনের। প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি। এর মধ্যে প্রাইমারি মাথাব্যথাও দুই রকমের। টেনশনজনিত মাথাব্যথা ও মাইগ্রেন। টেনশনজনিত মাথাব্যথার ব্যাপারে আমরা মোটামুটি কমবেশি সবাই জানি। কিন্তু আমাদের দেশে অনেকে মাইগ্রেনে ভুগে থাকলেও, এই রোগ নিয়ে মানুষের জানাশোনা কম। জামা নেটওয়ার্ক এর তথ্য মতে বিশ্বে প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ মাইগ্রেনজনিত মাথাব্যথার সমস্যায় ভোগেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে অনুপস্থিতি অথবা কর্মক্ষমতা হ্রাসের অন্যতম কারণ এই মাইগ্রেন।

tired sick male wearing casual style clothing sitting table living room keeping fingers temples trying relax suffering from headache after long hours working computer
ছবি: ফ্রিপিক

মাইগ্রেন কি?  
চিকিৎসকদের মতে, মাইগ্রেন হচ্ছে ক্রনিক নিউরোলোজিক্যাল ডিসঅর্ডার বা দীর্ঘমেয়াদি স্নায়ুবিক রোগ। সাধারণ বা টেনশনজনিত মাথাব্যথা থেকে একদম আলাদা। মস্তিষ্কের স্নায়ু ও রক্তনালির সংবেদনশীলতার জন্য মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হয়। ব্যথা শুরু হয় মাথার একপাশ থেকে। এ অবস্থাকে হেমিক্রেনিয়া বলে। ব্যথা একপাশ থেকে দপদপ করে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে পুরো মাথায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। মাইগ্রেনের ব্যথা চার ঘণ্টা থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ব্যথা কখনো হঠাৎ থেমে গিয়ে কয়েক দিনের বিরতি নিয়েও আবার শুরু হতে দেখা যায়। মাইগ্রেনের সঙ্গে কখনো কখনো দৃষ্টি বিভ্রম বা বমি বমিভাব থাকতে পারে। 

the institute for advanced reconstruction 1
Source: the institute for advanced reconstruction

ট্রিগার ফ্যাক্টর  
অনেক গবেষণা করে  আজ পর্যন্ত মাইগ্রেন কেন হয় তা জানা যায়নি। তবে এর কিছু ট্রিগার ফ্যাক্টর বা যে কারণে ব্যথা হয় সে সম্পর্কে চিকিৎসকেরা কিছু ধারনা দিয়েছেন। যেমন- মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক কার্যক্রম। অর্থাৎ, যখন স্নায়ু ব্যবস্থা, শরীরের রাসায়নিক উপাদান এবং রক্তনালিকে আক্রান্ত করে ফেলে, তখনই এই ধরনের তীব্র ব্যথা মাথার একপাশে অনুভূত হয়। এর আরও কিছু ট্রিগার ফ্যাক্টর রয়েছে। সেগুলো হলো – 

  • নারীদের ক্ষেত্রে অনেক সময় হরমোনজনিত পরিবর্তনের কারণে মাইগ্রেন হতে পারে। এজন্য ঋতুচক্র বা মাসিকের সময় নারীরা এতে বেশি ভুগে থাকেন। মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, হঠাৎ পাওয়া মানসিক আঘাত ইত্যাদি মাইগ্রেন ট্রিগার করতে পারে। 
  • মস্তিষ্কের সুস্থ-স্বাভাবিক ক্রিয়ার জন্য ঘুম অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ঘুম কম বা না হওয়ার কারণে মাইগ্রেন হতে পারে। অতিরিক্ত পরিশ্রমেও মাইগ্রেন হয়। 
  • পরিবেশগত কারণে মাইগ্রেন হয়। যেমন অতিরিক্ত গরম বা রোদে ঘোরাঘুরি, হঠাৎ করে গরম থেকে ঠান্ডা বা ঠান্ডা থেকে গরম পরিবেশে চলাচল করলে এটি হয়। 
  • কারো কারো কিছু নির্দিষ্ট খাবারের কারণে মাইগ্রেন ট্রিগার হতে পারে। যেমন, অতিরিক্ত কফি, পনির, চকলেট, লেবু জাতীয় ফল, আর্টিফিশিয়াল বা কৃত্রিম মিষ্টি, ইস্ট দিয়ে তৈরি রুটি, প্রক্রিয়াজাত মাংসের আইটেম (সসেজ, সালামি ইত্যাদি), টেস্টিং সল্ট, বাদাম ও বীজ ইত্যাদি। 
sick young woman sitting against gray backdrop suffering from headache 1
ছবি: ফ্রিপিক

চিকিৎসা ও প্রতিরোধ  
মাইগ্রেন শুরু হওয়ার আগে অনেকে চোখে আলোর ঝলকানি দেখতে পান। এভাবে ব্যথা শুরুর আগে শরীর সতর্কবার্তা দেয়। এটা এক ধরনের পূর্ব লক্ষণ। আবার কিছু মাইগ্রেনের আগে এমন পূর্ব লক্ষণ, বমিভাব, দৃষ্টি বিভ্রম থাকলেও মাথাব্যথা থাকে না। এ ধরনের মাইগ্রেনকে সাইলেন্ট মাইগ্রেন বলে। 

মাইগ্রেনের চিকিৎসা দুই ধরনের। তাৎক্ষনিক ও প্রতিরোধক। তাৎক্ষণিক চিকিৎসায় সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ দেওয়া হয়। প্রতিরোধক চিকিৎসায় ব্যথা যাতে না ওঠে, তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে মাইগ্রেনের ট্রিগার, অর্থাৎ যেসব কারণে ব্যথা শুরু হয়, সেগুলো খুঁজে বের করে যদি এড়িয়ে চলা যায়, তাহলে মাইগ্রেনের ব্যথা থেকে পুরোপুরি রেহাই পাওয়া সম্ভব। এ জন্য অনেক সময় জীবনযাত্রারও পরিবর্তন করতে হতে পারে।

জীবনযাত্রার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা সবার আগে নিরবিচ্ছিন্ন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে হবে। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় এমন ইলেকট্রিক ডিভাইসের ব্যবহার কমিয়ে ফেলতে হবে। অতিরিক্ত বেশি আলো বা অতিরিক্ত কম আলোতে কাজ করা যাবে না। তীব্র ঠান্ডায় অথবা অতিরিক্ত রোদে বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। 

মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হলে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন মেনে ঔষুধ সেবন করতে হবে। পাশাপাশি তাৎক্ষণিকভাবে প্রচুর পানি পান করতে হবে এবং মাথায় ঠান্ডা কাপড় জড়িয়ে রাখতে হবে।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ