কড লিভার অয়েল হলো এক ধরনের পুষ্টি উপাদান। এটি কড মাছের যকৃত থেকে সংগ্রহ করা হয়। তেল হলেও এটি কখনো রান্নায় ব্যবহার হয় না। সাধারণত ক্যাপসুল বা সিরাপ আকারে এটি যেকোনো ফার্মেসিতে কিনতে পাওয়া যায়। কড লিভার অয়েলের গুণের কোন শেষ নেই। এটি একই সঙ্গে শরীরের বেশ কয়েকটি রোগ নিরাময় ও প্রতিরোধের কাজ করে।
পুষ্টি গুণ
এক চামচ বা ৫ মিলিলিটার কড লিভারে রয়েছে মাত্র ৪১ ক্যালরি, ৪.৫ গ্রাম ফ্যাট, ২.১ গ্রাম মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট, ১ গ্রাম স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ১ গ্রাম পলিআনস্যাচুরেটেড। এতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ ৮৯০ মিলিগ্রাম। কড লিভার অয়েল এতটাই পুষ্টিকর যে, এটি মানুষের দৈনিক চাহিদা অন্তত ১৫০ শতাংশ ভিটামিন এ এবং ৫৬ শতাংশ ভিটামিন এ-এর চাহিদা পূরণ করতে পারে। ভিটামিন এ চোখ, মস্তিষ্ক ও ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে ভিটামিন ডি হাড়ের সুস্থতা বজায় রাখে।

শরীরের ইনফ্ল্যামেশন কমায়
ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যা শরীরকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং বিভিন্ন আঘাত নিরাময় করতে সহায়তা করে। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে এই প্রক্রিয়া চলতে থাকলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে ওঠে। ফলে শরীরে বাত, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগের মতো বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ে। কড লিভার অয়েলের ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন এ ও ডি এক সঙ্গে মিলে ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।
হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করে
কড লিভার অয়েল মানুষের দৈনিক চাহিদার ৫৬ শতাংশ ভিটামিন ডি-এর চাহিদা পূরণ করতে পারে। আমরা মোটামুটি সবাই জানি এই ভিটামিন হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এটি বিভিন্ন খাদ্য থেকে ক্যালসিয়াম শোষণ করে হাড়ের সুস্থতা নিশ্চিত করার ক্ষমতা রাখে।
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের উপশম
আগেই বলা হয়েছে কড লিভার অয়েল ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন এ ও ডিতে সমৃদ্ধ। এরা যেকোনো ধরনের ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহের চিরশত্রু। মূলত ইনফ্ল্যামেশনের কারণে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এবং অন্যান্য বাতজনিত সমস্যা দেখা দেয়। নিয়মিত কড লিভার অয়েল খেলে এগুলো হওয়ার আশঙ্কাও থাকে না। যদি রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস হয়ও তাহলে এটি সেবনে রোগের প্রতিক্রিয়াগুলোর উপশম হয়।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় উপশম
ট্রাইগ্লিসারাইড এক ধরনের ফ্যাট। একে লিপিডও বলে। এটি আমাদের রক্তের মধ্যে সঞ্চালিত হতে থাকে। মাখন, তেল, প্রাণীজ চর্বি থেকে ট্রাইগ্লিসারাইড আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। শরীরে এর পরিমাণ বেড়ে গেলে আমাদের হৃদযন্ত্র ক্ষতির সম্মুখীন হয়। কড লিভার অয়েলে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে পারে। অন্যদিকে, এটি রক্তে এইচডিএল-এর মাত্রা বাড়াতে পারে। এই কোলেস্টেরল হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
মানসিক স্বাস্থ্যে ভালো রাখে উপশম
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, শরীরের ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহজনিত সমস্যার সঙ্গে মানসিক হতাশা ও উদ্বেগের একটি সম্পর্ক আছে। ইনফ্ল্যামেশন বেড়ে গেলে মানুষের হতাশা বা উদ্বেগের পরিমাণও বাড়ে। এক্ষেত্রেও কড লিভার অয়েল ত্রাতার ভূমিকা পালন করতে পারে। বেশ কয়েকটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, নিয়মিত কড লিভার অয়েল সেবন করলে হতাশা, উদ্বেগ বা স্ট্রেসের মতো মানসিক সমস্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসে।