গাজায় দখলদার ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে ডাচ সরকারের কঠোর অবস্থানের দাবিতে নেদারল্যান্ডসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে এক লাখ মানুষ। রোববার ( ১৫ জুন) হেগ শহরে অভূতপূর্ব এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, প্রায় এক লাখ বিক্ষোভকারী এই মিছিলে যোগ দিয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই লাল পোশাক পরে গাজায় ইসরায়েলের অবরোধের বিরুদ্ধে ‘রেড লাইন’ নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন।
বিক্ষোভকারীরা হেগের কেন্দ্রস্থলে ৩ মাইল (৫ কিলোমিটার) হেঁটে প্রতীকীভাবে লাল রেখা তৈরি করে। তারা বলছেন, সরকার গাজায় ইসরায়েলের অভিযান বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হেগে ব্যাপক বিক্ষোভে অংশ নেন ডাচ জনতা, ছবি : এপি
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, সেভ দ্য চিলড্রেন ও ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্সের মতো সংগঠন এই মিছিলের আয়োজন করে। তাদের দাবি, দেড় লাখের বেশি শান্তিপূর্ণ জনতা বিক্ষোভে অংশ নেয়। তবে স্থানীয় গণমাধ্যম এই সংখ্যা প্রায় এক লাখের কাছাকাছি বলে জানিয়েছে।
এদিকে নেদারল্যান্ডসের প্রতিবেশি দেশ বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে প্রায় ৭৫ হাজার মানুষ রাস্তায় নামেন, যাদের অনেকেই লাল পোশাক পরেন। গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য বেশ কয়েকটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে, তবে রোববারের সমাবেশটি ছিল এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় সমাবেশ।
এবারের বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা মে মাসের বিক্ষোভের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। মে মাসেও একই ধরনের বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করেছিল অক্সফাম নোভিব। মে মাসের মিছিলটি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের সামনে যায়।

হেগে ইসরায়েল বিরোধী ’রেড লাইন’ প্রতিবাদ, ছবি : ইউরো নিউজ ডটকম
এই আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে মামলা করেছিল। ওই মামলায় গত বছর দক্ষিণ গাজা শহর রাফায় সামরিক আক্রমণ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। তবে ইহুদিবাদী ইসরায়েল গণহত্যার অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। আদালতে তারা যুক্তি দিয়েছে যে গাজায় তাদের অভিযান আত্মরক্ষার জন্য এবং ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আক্রমণকারী হামাস যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে।
চলতি মাসের শুরুতে ডাচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাসপার ভেল্ডক্যাম্প জানিয়েছিলেন, তিনি চান ইইউ ইসরায়েলের সাথে তাদের সহযোগিতা চুক্তি পুনর্বিবেচনা করুক। কিন্তু ডাচ সরকার এ পর্যন্ত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করা থেকে বিরত রয়েছে এবং সরকারি জোটের বৃহত্তম দলের নেতা গির্ট ওয়াইল্ডার্স বারবার ইসরায়েলের প্রতি অটল সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।
ডাচ সরকারের এমন অবস্থানের বিরোধিতা করে লাখো জনতা নিয়ে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগই লাল পোশাক পরেছিল, ছবি : ইউরো নিউজ
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক মঙ্গলবার (১৭ জুন) ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাত নিয়ে আলোচনা করার জন্য ২৭টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে একটি জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। ভার্চুয়াল মাধ্যমে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিক হবে। বৈঠকে তেল আবিব ও তেহরানের সাথে কূটনৈতিক যোগাযোগের সমন্বয়, সম্ভাব্য পরবর্তী পদক্ষেপের সুযোগ তৈরি হবে। ইইউর পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাজা কালাসের কার্যালয় এক বিবৃতিতে ১৫ জুন এ তথ্য জানিয়েছে।
বিবৃতি বলা হয় ‘আমরা (ইইউ) উত্তেজনা কমাতে এবং ইরানের পারমাণবিক সমস্যার স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করার জন্য সব কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় অবদান রাখব, যা কেবল আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব।’
সূত্র : এপি, রয়টার্স ও এএফপি