Home ফিচার হালের আলোচিত ব্যক্তি আশিক চৌধুরী

হালের আলোচিত ব্যক্তি আশিক চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৩৪ views

কয়েকদিন ধরে দেশের সংবাদ মাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। মননশীলতা ও দক্ষতার জানান দিয়ে দেশকে বিশ্ব দরবারে মাথা উচু করে দাঁড় করানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। হ্যালো বাংলাদেশের এই আয়োজনে থাকছে বিডার চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীর অজানা কথা।

সরকারের সঙ্গে পথচলা
গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান আশিক চৌধুরী। যোগদানের দিন থেকে পরবর্তী দুই বছরের জন্য তাকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ৮ মাসের পথচলা শেষে তাকে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা দিয়েছে সরকার। গত ৭ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এতো দিন আশিক চৌধুরী সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় ছিলেন।

পেশা ও প্রশিক্ষণ
আশিক চৌধুরী পেশায় ব্যাংকার ছিলেন। সিঙ্গাপুরে বহুজাতিক দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনের (এইচএসবিসি) রিয়েল অ্যাসেট ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী পরিচালক ছিলেন তিনি। কাজের ফাঁকে থাই স্কাই অ্যাডভেঞ্চার কোম্পানির অধীন স্কাইডাইভিংয়ের ওপর লম্বা প্রশিক্ষণ নেন।

তিনি স্কাইডাইভারের লাইসেন্স অর্জন করেন। এই লাইসেন্স দেখিয়ে অন্যের সহযোগিতা ছাড়া বিশ্বের যেকোনো দেশে স্কাইডাইভিং করতে পারেন তিনি। গত বছরের ২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিসে ৪১ হাজার ৭৯৫ ফুট উঁচু দিয়ে উড়ে যাওয়া বিমান থেকে লাফ দিয়ে বিশ্ব রেকর্ড করেন।

ফেসবুকে স্ট্যাটাস
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূস সরকারের সঙ্গে কিভাবে যুক্ত হলেন সে কথা নিজেই জানিয়েছেন সোশ্যাল প্লাটফর্মে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক স্ট্যাটাসে আশিক চৌধুরী জানান, ‘সেপ্টেম্বর এর মাঝামাঝি এক দুপুরে প্রফেসর ইউনূস স্যার হঠাৎ ফোন করে বললেন, “আশিক, দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ পাওয়া গেছে। আসবা নাকি?” আমি নন্দিনীকে জিজ্ঞেস না করেই রাজি হয়ে গেলাম।

জানতাম ও কোনোদিন মানা করবে না। সো ৫৯ সেকেন্ডের এক হোয়াটসঅ্যাপ কলে আমরা সিঙ্গাপুরের বিলাসী জীবন ছেড়েছুঁড়ে দেশের পথে রওনা দিলাম বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে, বন্ধুদের ভাষায় বাংলাদেশের চিফ মার্কেটিং অফিসার হিসেবে।

গত এক মাস শুক্র-শনিবারসহ দিনে ১৮ ঘণ্টা কাজ করেও কূল পাচ্ছি না। প্রায় আড়াইশো সিইও, ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে বুঝার চেষ্টা করছি তাদের সমস্যাগুলো কোথায় আর কি করে তার সমাধান করতে পারি। নতুন ইনভেস্টমেন্ট কিভাবে আনতে পারি।

চেষ্টা চলছে। ফেইল করা যাবে না। আমরা জনগণের সরকার। তাই প্রত্যাশা অনেক। অনেকটা জাতীয় ক্রিকেট দলের মত। সবাই চায় আমরা জিতি। কিন্তু পরের বলটা একটু খারাপ হলেই সবাই হা হা করে উঠে।

টিম সিলেকশন, বোলার সিলেকশন, ফিল্ড সেটিং, এইসব নিয়ে নানা সমালোচনা। ম্যাচে সবাই ভালো বল করবে না এটাই স্বাভাবিক। তা নিয়ে দলের সমর্থকরা গালাগালি করবে তাও স্বাভাবিক। দলটা তো আমাদের।

কয়দিন আগেও এইসব করা কবিরা গুনাহ ছিল। তাই দিন শেষে টায়ার্ড হয়ে ফেসবুক খুলে যখন মনে হয় আমার বউ ও বিরোধী দল, তখন নিজেকে বুঝাই: এটাই তো আসলে বাক স্বাধীনতা। হোক না সমালোচনা। আমরা ভুল করব। তারপর শুধরাবো। আমাদের দেশটা আস্তে আস্তে ঠিক রাস্তায় হাটবে।’’

নেট দুনিয়ায় প্রশংসা
আশিক চৌধুরীর পরিকল্পনায় বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশের চিত্র। বিশ্ব দরবারে নতুন পরিচয়ে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ। তাই তার ভূয়সী প্রশংসা করছে সবাই।

আশিক চৌধুরী প্রসঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে একজন লিখেছেন, ‘‘আশিক চৌধুরী লোকটা ড. ইউনূস থেকেও বড় খেলোয়াড়। দেশ যদি কোনোদিন আমূল বদলে যায়, তোমরা ইউনূসের সাথে আশিক চৌধুরীর নামটা উচ্চারণ করতে ভুলো না। বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী যে কতোটা শক্ত খেলোয়াড় তা টের পাওয়া যাবে মাস ছয়েক পরেই। এই ছেলেরা ওয়েস্টার্নের আরাম আয়েশের জীবন ছেড়ে দেশে এসেছে টাকা কামানোর জন্য না; দেশ বদলে দেয়ার জন্য। তাদের একটা সুযোগ এবং সাপোর্ট দাও প্লিজ।’’

আরেকজন লিখেছেন, ‘‘ইতিমধ্যেই আশিক চৌধুরীর উদ্যোগে বাংলাদেশে স্টারলিংক সেবা শুরু হয়েছে, মার্কিন মহাকাশ গবেষণা নাসার সাথে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। বিনিয়োগ হিসেবে বাইরের একটা ব্যাংকের সাথে চুক্তি হয়েছে এই বছর ১০০ কোটি ডলার বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে। ৫টা বিশালাকার মালবাহী জাহাজ কিনে নিয়েছে, রিভার ম্যানেজমেন্টের প্লান তৈরি করে বিশাল বিনিয়োগ আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে; বিদেশি বিনিয়োগে ৪টি আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল তৈরির প্রক্রিয়া চালাচ্ছে; ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ইলেকট্রনিক ট্রেন অথবা বুলেট ট্রেন চালুর জন্য বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে। ’’

আরেকজন লিখেছেন, ‘‘ ইতিমধ্যেই ১০টি বৃহত্তর ইকোনমিক জোন তৈরি কার্যক্রম চলছে। মাত্র কয়েক দিনে এসব কাজ করেছেন আশিক চৌধুরী। যদি তিনি ৩৬৫ দিন কাজ করার সুযোগ পায় চিন্তা করছেন কই যাবে তার উদ্যোগগুলো। তার লক্ষ্য ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ নিয়ে আসা এই দেশে। যা দেশের ৩ কোটি মানুষের জীবন পরিবর্তন করে দেবে। কম হলেও ১ লাখ নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে।’’

জীবন বৃত্তান্ত
আশিক চৌধুরী পেশায় ব্যাংকার। সিঙ্গাপুরে বহুজাতিক দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনের (এইচএসবিসি) রিয়েল অ্যাসেট ফাইন্যান্স বিভাগের তিনি সহযোগী পরিচালক।

আশিক চৌধুরীর বাড়ি চাঁদপুরে। বাবার চাকরির সুবাদে তার বেড়ে ওঠা যশোরে। স্কুল-কলেজের পাট চুকিয়েছেন সিলেট ক্যাডেট কলেজে। এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ)।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ