কথা, বুদ্ধি ও কৌশলে শাহরুখ খানের মতো দ্বিতীয় কাউকে উপমহাদেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না। প্রশ্ন আসার আগেই তার মাথায় উত্তর তৈরি থাকে— এটি সবাই বলেন, আবার বিশ্বাসও করেন। সেই শাহরুখেরও পিছু ছাড়েনি গুজব, রটনা। সফল মানুষের ক্যারিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্যালাইনের মতো— বলেন সমালোচকরা। এক চিমটি পরিমাণ হলেও বিতর্ক থাকবেই। শাহরুখও পারেননি নিজেকে এর থেকে বাঁচাতে।
‘দ্য জেন্টেলম্যান’ শাহরুখও জড়িয়ে গিয়েছিলেন নারীকেন্দ্রিক জটিলতায়। সেই নারীও যে-সে নয়। বিশ্বসুন্দরী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। অনেকের ধারণা, ২০০৬ সালে ‘ডন’ সিনেমা করার সময়ই দুজন দুজনের প্রতি আকৃষ্ট হন। সেই গুজবের দাপট এতটাই ছিল যে শাহরুখপত্নী গৌরি খান একসময় করণ জোহরেরও সাহায্য নেন। গৌরি ও তার গ্যাংয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শাহরুখ আবার গৌরীর কাছে ফিরে আসেন। তবে প্রিয়াঙ্কার হাত থেকে চলে যায় বলিউডের বিভিন্ন বড় বড় প্রজেক্ট। শোনা যায়, করণ ও তার দল অর্থাৎ তাদের সকল বন্ধুবান্ধব একপ্রকার একঘরে করে রাখেন প্রিয়াঙ্কাকে। এ কারণেই নিজেকে দেশের বাইরের জন্য প্রস্তুত করতে আরও মরিয়া হন ‘দেশি গার্ল’। তবে এখনও প্রিয়াঙ্কা প্রসঙ্গে শাহরুখ বলেন, আমার জন্য একজন নারীকে কটু কথা শুনতে হয়েছে বলে আমি অত্যন্ত লজ্জিত।
এরপরের বিতর্কটিও বেশ অবাক করা। ২০১২ সালের মে মাসে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড় স্টেডিয়ামের স্টাফদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন শাহরুখ। তিনি কলকাতা নাইট রাইডার্সের অন্যতম মালিক হিসেবে তখন স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতেন। কলকাতার ম্যাচ শেষে সেদিনও শাহরুখ খান মাঠে প্রবেশ করেন। কিন্তু মাঝরাতে তাকে স্টেডিয়াম ছাড়তে বলা হলে স্টাফদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করার অভিযোগ ওঠে। শাহরুখ সেসময় মদ্যপ ছিলেন বলে দাবী করে স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ।
পরে এ ঘটনা নিয়ে শাহরুখ খান বলেছিলেন, আমি মদ্যপ ছিলাম না এবং স্টাফদের সঙ্গে খারাপ আচরণও করিনি। কিন্তু তারা আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এমনকি তারা আমার সঙ্গে থাকা শিশুদের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করেন। সে কারণেই আমি তাদের সঙ্গে তর্কে জড়াই।
এ ঘটনার পর মুম্বাই ক্রিকেট সংস্থা শাহরুখকে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে। ফলে কলকাতা রাইডার্সের মালিক হওয়ার পরও মাঠে প্রবেশ করতে পারতেন না শাহরুখ। ২০১৫ সালের আগস্টে এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।
শাহরুখ খানের সম্পর্কে আরেক গুজব দীর্ঘদিনের বন্ধু করণ জোহরকে নিয়ে। ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’ পরিচালক করণ জোহরের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে রটনা অনেকটা ওপেন সিক্রেট উপমহাদেশে। তার সমলিঙ্গের প্রতি অনুরাগ থেকেই পছন্দের তালিকার শীর্ষে আছেন শাহরুখ খান— এ ধারণা অনেকরই। এ কারণে ক্যারিয়ারের বাজে সময়ে কিং খানকে উভকামী তকমা দেওয়ার নানা পায়তারা করেন বলিউডের গসিপ-লেখকরা এবং এতে তারা সফলও হন। তবে এখন শাহরুখ খান নিজেই বিষয়টা নিয়ে মজা করেন। কখনো কখনো বলেন, বিছানায় উঠে নায়িকা না, হয়তো করণকেই পাবো আমি। বর্তমানে বন্ধু হিসেবেই করণের সাথে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে ফেলেছেন শাহরুখ।
সালমানের সঙ্গে শাহরুখের দ্বন্দ্ব নিয়েও গল্পের শেষ নেই। ২০০৮ সালে বলিউড অভিনেত্রী ক্যাটরিনা কাইফের জন্মদিনের পার্টিতে রীতিমতো হাতাহাতিতে জড়ান সালমান খান ও শাহরুখ খান। সেই পরিস্থিতি সামাল দেন শাহরুখের স্ত্রী গৌরি খান। এ নিয়ে একাধিক সংবাদমাধ্যম খবরও প্রকাশ করেছিল। এরপর দীর্ঘ পাঁচ বছর কথা বলেননি এই দুই তারকা। ২০১৩ সালে রাজনীতিবিদ বাবা সিদ্দিকী, যিনি সদ্য প্রয়াত হয়েছেন, তিনি এক ইফতার পার্টিতে ডেকে নিয়ে এই দ্বন্দ্বের অবসান ঘটান। আবার দুজন ‘ভাই’ হয়ে যান।
২০১৫ সালের নভেম্বরে ভারতের ধর্মীয় অসহিঞ্চুতা নিয়ে মন্তব্য করে দারুণ বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন শাহরুখ খান। সে বছর তার জন্মদিনে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে শাহরুখ বলেছিলেন, ‘ভারতে ধর্মীয় অসিহষ্ণুতা বাড়ছে।’ মূলত, এরপরই শাহরুখের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠেছিল। শাহরুখকে ‘পাকিস্তানি গুপ্তচর’ বলেও অভিহিত করা হয়েছিল। পরে শাহরুখ জানান, তার মন্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এরপর থেকে তাকে বহুবার ভারতের বর্তমান সরকারদলীয় লোকেরা আকারে ইঙ্গিতে ভারত থেকে চলে যাওয়ার কথাও বলেছেন।
তবে তার আবেগ বা ক্রোধের কোনো কিছুই যে ঘটনাতে প্রকাশ পায়নি তা হলো নিজের বড় ছেলে আরিয়ান খানের গ্রেফতারের ঘটনা। ছেলের এতবড় দুর্যোগে তিনি বরাবরের মতো মাথা ঠাণ্ডা করেই নিজেকে সামলে গেছেন। কোনো ক্যামেরা, কোনো মাইক্রোফোন তাকে একটি শব্দও উচ্চারণ করাতে পারেনি। সবার কথা মাথা নত করে শুনে গেছেন। ছেলের মুক্তির পর পাঠান-জওয়ান দিয়ে ঠিকই ফিরে এসেছেন শাহেন শাহের মতো। এ কারণেই বলিউডের কাছে শাহরুখ মানেই বাজিগর, যিনি যেকোনো অবস্থাতেই জয়ের স্বাদ পান।