শেয়ারবাজারে গতি ফেরাতে স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘর্মেয়াদি নীতি সহায়তা দিতে যাচ্ছে সরকার। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অন্তবর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ প্রথমবারের মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) যাচ্ছেন। এমন খবরে বুধবার (৩০ অক্টোবর) দেশের শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়েছে।
এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক বেড়েছে ১৪৭ পয়েন্টের বেশি। এর আগে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরের দিন ৬ আগস্ট মঙ্গলবার ডিএসইর সূচক বেড়েছিল ১৯২ পয়েন্ট। এরপর ৭ আগস্ট বুধবার বেড়েছে ১৯৭ পয়েন্ট এবং ৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার বেড়েছে ৩০৬ পয়েন্ট এবং ১১ আগস্ট রোববার বেড়েছে ৯১ পয়েন্ট। ওই চার দিনে সূচকের উত্থান হয়েছে ৭৮৬ পয়েন্ট।
এরপর ১২ আগস্ট সোমবার থেকেই শুরু হয় ধারাবাহিক পতন। ১২ আগস্ট থেকে ২৮ অক্টোবর (সোমবার) পর্যন্ত আড়াই মাসে সূচকের পতন হয়েছে ১ হাজার ১৪৭ পয়েন্ট। অর্থাৎ শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগের দিন ডিএসইর সূচক ছিল ৫ হাজার ২২৯ পয়েন্ট। গত ২৮ অক্টোবর সেটি আরও ৩৩১ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৪৯৮ পয়েন্টে নেমে যায়।
অবশেষ গতকাল বুধবার থেকে বাজার বড় আকারে ঘুরে দাঁড়ায়। গতকাল ডিএসইর সূচকে বেড়েছে ১১৮ পয়েন্টের বেশি এবং আজ বেড়েছে ১৪৭ পয়েন্টের বেশি। বুধবার ডিএসইর সূচক দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৬৪ পয়েন্টে। শেখ হাসিনা সরকারের সময়ের সূচক থেকে অন্তবর্তী সরকারের সময়ে সূচক এখনো ৬৫ পয়েন্ট পিছিয়ে আছে।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, অন্তবর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা শেয়ারবাজারের গুরুত্ব অনুধাবন করে নিজেই বিএসইসিতে যাচ্ছেন। যেখানে এর আগে কোনো মন্ত্রী বা উপদেষ্টা যাননি। শেয়ারবাজারের জন্য এটি একটি ভিন্ন ম্যাসেজ। শেয়ারবাজারের প্রতি অর্থ উপদেষ্টার এমন আগ্রহের কারণে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৪৭ দশমিক ৫১ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ১৬৪ পয়েন্টে দাঁডিয়েছে। এছাড়া, ডিএসইর অপর সূচক ডিএসইএস ২২ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট বেড়ে ১১৩৬ পয়েন্ট এবং ডিএস-৩০ সূচক ৫৭ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট বেড়ে ১৯১৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
এদিন ডিএসইতে ৫১৯ কোটি ৩১ লাখ ২৭ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছে ৩৪৬ কোটি ৫৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা।
ডিএসইতে বুধবার মোট ৩৯৭টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৩৭৩টি কোম্পানির, বিপরীতে ১৫ কোম্পানির দর কমেছে। পাশাপাশি ৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জানান, শেয়ারবাজারে গতি ফেরাতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা দিতে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এসব সহায়তার আওতাভুক্ত হবেন ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারী, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, উচ্চ সম্পদশালী বিনিয়োগকারী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।
বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, অর্থ উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সমন্বিতভাবে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে নীতি সহায়তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। যার মধ্যে কিছু থাকবে স্বল্প মেয়াদে বাস্তবায়নযোগ্য, আর কিছু বিষয় মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে।
যেসব নীতি পদক্ষেপের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, বাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তহবিল জোগানে সহায়তা, জরিমানার মাধ্যমে বিএসইসির আদায় করা অর্থ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় কাজে লাগাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকারি-বেসরকারি ভালো ও লাভজনক কোম্পানিগুলোকে দ্রুত বাজারে আনতে আইপিও আইন সংস্কার ও কর প্রণোদনার ব্যবস্থা করা, শেয়ারবাজারে লেনদেন নিষ্পত্তির সময় কমিয়ে এক দিনে নামিয়ে আনা, ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে পরিমাণ অনাদায়ি পুঞ্জীভূত ঋণাত্মক ঋণ (নেগেটিভ ইক্যুইটি) রয়েছে চূড়ান্তভাবে সেগুলোর নিষ্পত্তি করা, উচ্চ সম্পদশালী ব্যক্তিদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে মূলধনি মুনাফার করহার কমানো, শেয়ার পুনঃক্রয়ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ, বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে ভবিষ্যতে আর কখনো ফ্লোর প্রাইস আরোপ না করা, সুশাসন ও আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করা।