বাংলাদেশের রাজনীতে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট পার্টির কোনো জায়গা নেই। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এমন মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেন, ক্ষমতায় থাকাকালে ফ্যাসিবাদের সব বৈশিষ্ট্যই দেখিয়েছে আওয়ামী লীগ। তাই নিকট ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করলে, দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের কোনো জায়গা নেই। তবে, অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের ভাগ্য নির্ধারণ করবে না।
ড. ইউনূস বলেন, আওয়ামী লীগের সময় জনগণের স্বাধীনতা ছিল না। রাজনীতির প্রতিটি ক্ষেত্র তারা দখল করে রেখেছিল। নিজেদের স্বার্থে তারা সবকিছু করেছে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে কিনা, সে সিদ্ধান্ত ঐক্যমতের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোকেই নিতে হবে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের চার্জ গঠন করা হলে ভারত সরকারের কাছে আপাতত তাকে ফেরত চাওয়া হবে না বলেও জানান বর্তমান সরকার প্রধান।
তিনি বলেন, সাজা ঘোষণা হলে বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় তাকে ফেরাত আনার চেষ্টা করা হবে। এসময়, ভারতের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত সহযোগিতা না পাওয়ার ইঙ্গিত দেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান। বলেন, প্রতিবেশি হওয়ায় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ভালো থাকা দরকার।
তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে ভারত থেকে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে চাইবে না সরকার। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ তার বড় প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক উত্তেজনা এড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন।
এদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা প্রসঙ্গে ড. ইউনূস ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ হয়তো ভেঙে যেতে পারে, কিন্তু তার সরকার এমন কিছু করবে না। কারণ, তারা রাজনৈতিক সরকার নয়।’
নিশ্চিতভাবেই স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার কোনো জায়গা হবে না, আওয়ামী লীগের কোনো জায়গা হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, জানতে চাইলে তিনি জানান, এ বিষয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ‘ঐকমত্যে’র ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তাদেরকেই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক স্থান নির্ধারণ করতে হবে।
নির্বাচনের রূপরেখা চূড়ান্ত করার বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের কাজ সবকিছু স্বাভাবিক করা এবং সংস্কার সম্পন্ন করা। এ সরকার এখন পর্যন্ত নির্বাচনের রূপরেখাও চূড়ান্ত করেনি। নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করব।’
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ড. ইউনূসের সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রায় ৮০০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।তবে, হিন্দুদের ওপর ব্যাপক নৃশংসতা নিয়ে ভারত যে অভিযোগ করছে, তার কোনো সত্যতা নিশ্চিত করেনি মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
এ প্রসঙ্গে ড. ইউনূস ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, ‘হিন্দুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার কিছু ঘটনা ঘটেছে এবং খুব অল্প সংখ্যক প্রাণহানি হয়েছে। তাদেরকে ধর্মের ভিত্তিতে নয়, আওয়ামী লীগের অনুসারী হিসেবে টার্গেট করা হয়েছে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘(আগস্টে হামলার শিকার) অধিকাংশ হিন্দু আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন। এটাকে ভিন্ন রূপ দেওয়া হচ্ছে।’
প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক অব্যাহত রাখার ব্যাপারে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা প্রতিবেশী। আমাদের একে অপরের প্রয়োজন। আমাদের মধ্যে অবশ্যই সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক থাকতে হবে, যেমনটি দুই প্রতিবেশীর থাকা উচিত।’
ভবিষ্যতে রাজনীতিকে যুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে ড. ইউনূস জানিয়েছেন, তার রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার বা রাজনৈতিক দল গঠনের কোনো ইচ্ছা নেই।