Home বাণিজ্য আস্থাহীনতায় টালমাটাল শেয়ারবাজার, সূচক ৫ বছরের সর্বনিম্নে

আস্থাহীনতায় টালমাটাল শেয়ারবাজার, সূচক ৫ বছরের সর্বনিম্নে

ইকবাল হোসেন
৫৩ views

টানা দরপতনে ডুবতে বসেছে দেশের শেয়ারবাজার। লেনদেন শুরু হলেই পড়ছে সূচক। ক্ষোভে-হতাশায় ফের রাস্তায় নেমেছেন নি:স্ব  বিনিয়োগকারীরা। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দরপতনের প্রধান কারণ হচ্ছে আস্থার অভাব। এ ছাড়া ব্যাংক খাতে উচ্চ সুদের হার, মার্জিন ঋণের বিপরীতে কেনা শেয়ার বিক্রি (ফোর্সড সেল), নিয়ন্ত্রক সংস্থায় অস্থিরতাসহ নানা কারণে অনেক বিনিয়োগকারী বাজার ছাড়ছেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মাত্র চার কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৮০০ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ১১ আগস্ট ডিএসইএক্স ৬ হাজার ১৫ পয়েন্টে উঠেছিল। ওই সময় লেনদেনও বেড়ে ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল। নয় মাস পর এসে এখন বাজারে লেনদেন কমে ৩০০ কোটি টাকার নিচে নেমেছে। আর ডিএসইর প্রধান সূচক বৃহস্পতিবার (১৫ মে) পর্যন্ত ১ হাজার ২৩৪ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৭৮১ পয়েন্টে নেমেছে। আজ ডিএসইএক্স ৫৪ পয়েন্ট কমে ২০২০ সালের ২৪ আগস্টের পর সর্বনিম্ন অবস্থানে চলে এসেছে। 

এপ্রিল মাসজুড়ে ধারাবাহিক দরপতনে ডিএসইর মূলধন কমেছে ১৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। মাসের শুরুতে ডিএসইর মোট বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। এপ্রিল শেষে তা কমে দাঁড়ায় ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকায়। অর্থাৎ মাত্র এক মাসেই শেয়ারবাজার থেকে ১৭ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা উধাও হয়ে গেছে। মাসের শুরুতে বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ২১৯ পয়েন্টে। মাস শেষে তা নেমে আসে ৪ হাজার ৯১৭ পয়েন্টে, অর্থাৎ সূচক কমেছে ৩০২ পয়েন্ট। পুরো মাসে ১৮ কার্যদিবসের মধ্যে ১৫ দিনই ছিল দরপতনের।

সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্য অনুযায়ী, শুধু এপ্রিল মাসেই ১১ হাজার ৪২৯ জন বিনিয়োগকারী তাদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্ট থেকে সব টাকা তুলে নিয়েছেন। জিরো ব্যালান্সের বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৩ লাখ ৮০ হাজার। পাশাপাশি সক্রিয় বিও অ্যাকাউন্টের মোট সংখ্যা এক মাসেই কমেছে ১০ হাজারের বেশি।

বাজার অংশীজন থেকে শুরু করে বিনিয়োগকারী সবারই এখন একটাই বক্তব্য, কেউ ভালো নেই। কারণ, শেয়ারের অব্যাহত দরপতনে সবাই বড় অঙ্কের পুঁজি হারিয়েছেন।

বাজার অংশীজনরা বলছেন, সরকার বদলের পর শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নেতৃত্বের বদল হলেও বাজারে কোনও আশার আলো দেখা যায়নি। বিদ্যমান সঙ্কটেরও যেন কোনও সমাধান নেই। যে কারণে বাজার কেবলই দরপতনের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে; হতাশা বাড়ছে সব মহলে।

বিনিয়োগকারী নজরুল ইসলাম হ্যালো বাংলাদেশকে বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ব্যাপক সংস্কারের কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার, যার জের ধরে দেশের ব্যাংক খাতসহ কয়েকটি খাতে উন্নতি দৃশ্যমান। কিন্তু এখনো শেয়ারবাজারে সংস্কারের কোনো প্রভাব নেই। তাই আস্থার সংকট কাটেনি। এখন আস্থা ফেরানোর বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের কাছে মুখ্য। 

সাইদুর রহমান নামে আরেক বিনিয়োগকারী হ্যালো বাংলাদেশকে বলেন, শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক পতন ঘটছে এবং প্রতিদিন বিনিয়োগকারীরা তাদের শেয়ার ফোর্সড সেলে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাদের বিনিয়োগের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ হারিয়ে গেছে। 

ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান হ্যালো বাংলাদেশকে বলেন, সরকার বদলের পর শেয়ারবাজার নিয়ে বিনিয়োগকারী ও বাজার অংশীজনরা নতুন আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু সে আশা এখন গুড়ে বালি। দীর্ঘদিনের অংশীজন হিসেবে বাজার নিয়ে আমাদের মধ্যে এত বেশি হতাশা আগে কখনও কাজ করেনি। বাজার এখন অনেকটাই দিকনির্দেশনাহীন। বিএসইসির সিদ্ধান্তহীনতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা বাজারকে এক অনিশ্চিত পথে ধাবিত করছে।

ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ হ্যালো বাংলাদেশকে বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে, মূল্যস্ফীতি কমতির দিকে যাচ্ছে, ডলারের বাজার এখন স্থিতিশীল রয়েছে। তবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কম, বেসরকারি বিনিয়োগ কমে গেছে, সুদের হারও বাড়তি। এসব কারণে ট্রেজারি বন্ড অনেক টাকা নিয়ে গেছে শেয়ারবাজার থেকে। ট্রেজারি বন্ডে তারা সাড়ে ১২ শতাংশ সুদ পাচ্ছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই শেয়ারবাজারে আগ্রহ কমেছে। যারা মার্জিন ঋণ নিয়েছে তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সুদের হার বেশি হওয়ায় তারা লাভ করতে পারছে না। তাদের অনেকে ফোর্সড সেলের শিকার হচ্ছে।

তিনি  বলেন, মার্কেটে সরবরাহ ঠিক থাকছে না। মিউচুয়াল ফান্ডগুলো তেমন কিছুই করতে পারছে না। শেয়ারবাজারের অপশনগুলো কমে গেছে। আগের মতো মার্জিন ঋণ নিয়ে ট্রেডিং করে লাভ করবে, তা আর হয়ে উঠছে না। এগুলো নিয়ে অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে। আইসিবিরও বিনিয়োগ সক্ষমতায় সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু একসময় না একসময় শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াবে। দলীয় সরকার ক্ষমতা আসার আগেই শেয়ারবাজার চাঙ্গা হতে পারে।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ