টানা দরপতনে ডুবতে বসেছে দেশের শেয়ারবাজার। প্রায় প্রতিদিনই পড়ছে সূচক। গত আট মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ১ হাজার পয়েন্টের বেশি কমেছে। কেন সূচক কমছে—তার কারণ বলতে পারছে না কেউ। ক্ষোভে-হতাশায় ফের রাস্তায় নেমেছেন বিনিয়োগকারীরা।
টানা নয় দিনের পতনে সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) শেয়ারবাজারের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫০ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে ৪ হাজার ৯৭২ দশমিক ৫৯ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এই সূচক গত ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর আগে একদিনে ১৪৯ পয়েন্ট হারিয়ে ৫ হাজারের নিচে সূচক নামে গত বছরের ২৭ অক্টোবর। সেদিন ডিএসইএক্স দাঁড়ায় ৪ হাজার ৯৬৫ পয়েন্ট।
সবাই প্রত্যাশা করেছিল ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ঘুরে দাাঁড়াবে শেয়ারবাজার; তেমন লক্ষণও দেখা দিয়েছিল। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন। পরের দিন ৬ আগস্ট ডিএসইএক্স প্রায় ২০০ পয়েন্ট বাড়ে; শতাংশ হিসাবে বাড়ে ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। লেনদেনও বাড়তে থাকে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মাত্র চার কার্যদিবসে ডিএসইএক্স প্রায় ৮০০ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ওই সময় লেনদেনও বেড়ে ২ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করেছিল।
আট মাস পর এসে এখন বাজারের লেনদেন কমে নেমেছে ৩০০ কোটির ঘরে, আর সূচকও ১ হাজার পয়েন্টের বেশি কমে ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে এসেছে।
শেয়ারবাজার লেনদেন কমে গেলে তাতে বিনিয়োগকারীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হন, তেমনি স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে শুরু করে ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংকসহ বাজারের অংশীজনেরাও বড় লোকসানের মুখে পড়েন।
২০১০ সালের বড় ধসের পর থেকে শেয়ারবাজারের এমন পরিস্থিতিই চলছে। মাঝেমধ্যে অবশ্য কিছুটা উত্থান দেখা গেলেও সেটি স্থায়ী হয় না। যার কারণে হঠাৎ হঠাৎ আশার ঝিলিক দেখা গেলেও আবার হতাশার মুখোমুখি হতে হয় বিনিয়োগকারী ও বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।
এমন পরিস্থিতিতে গত বুধবার ফের রাস্তায় নামেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও পুরনো ডিএসই ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। বিক্ষোভ থেকে বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করা হয়। গত বৃহস্পতিবার অবশ্য তারা কোনো মিছিল-সমাবেশ করেনি।
শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে হতাশা প্রকাশ করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মিনহাজ মান্নান হ্যালো বাংলাদেশকে বলেন, সরকার বদলের পর শেয়ারবাজার নিয়ে বিনিয়োগকারী ও বাজার অংশীজনেরা নতুন আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু সে আশা এখন গুড়ে বালি। দীর্ঘদিনের অংশীজন হিসেবে বাজার নিয়ে আমাদের মধ্যে এত বেশি হতাশা আগে কখনো কাজ করেনি। বাজার এখন অনেকটাই দিকনির্দেশনাহীন। বিএসইসির সিদ্ধান্তহীনতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা বাজারকে এক অনিশ্চিত পথে ধাবিত করছে।
তিনি বলেন, বর্তমান বিএসইসি শেয়ারবাজারের মূল সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সেগুলোর সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হচ্ছে। এ কারণে বাজারে আমরা আশার কোনো আলো দেখতে পারছি না।