Home বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বাড়ছে ফিডের বাজার

প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বাড়ছে ফিডের বাজার

ইকবাল হোসেন
২০১ views

নানা প্রতিবন্ধকতা মধ্যেও বাড়ছে দেশীয় ফিড বা প্রাণী খাদ্যের বাজার। বিশাল চাহিদার কারণে গত এক দশকে এ খাতে প্রায় ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত ফিডের মান এবং ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার কারণে বাজার দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে। 

প্রাণী খাদ্য খাতের সম্ভাবনা
ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এফআইএবি) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বছরে ৮০ লাখ টনের বেশি পোলট্রি, মাছ ও পশুখাদ্যের চাহিদা রয়েছে। বাজারের আকার প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। 

পোল্ট্রি সংগঠনের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) তথ্য অনুযায়ী, দেশে রেজিস্ট্রিকৃত পশুখাদ্য উৎপাদনকারীর সংখ্যা ২৬১। যদিও বড় কারখানার সংখ্যা ১০ থেকে ১৫টির মতো। বাজারের হিস্যা তাদেরই বেশি। ১৩৫ থেকে ১৪০ টি প্রতিষ্ঠান প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনে তাদের লাইসেন্স নবায়ন করেছে। এছাড়া, রেজিস্ট্রিবিহীন আরও ২০০টি প্রতিষ্ঠান খাদ্য উৎপাদনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

এফআইএবি তথ্য মতে, গত সাত বছরে পশুখাদ্য শিল্পে একলাফে ১৬১ শতাংশ পর্যন্ত উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধুমাত্র পোল্ট্রি খাতেই আছে এই খাতের ৬২.৯ শতাংশ খাদ্য। অন্যদিকে, গবাদি ও মৎস্য খাতে ব্যবহৃত খাদ্যের পরিমাণ যথাক্রমে ১৮ ও ২৩ শতাংশ।

বিগত এক দশকে পশুখাদ্য খাত প্রায় ২৫ শতাংশ পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়েছে। পোল্ট্রিসহ দেশে মৎস্য এবং গবাদি পশুর খামার বৃদ্ধি পাওয়ায় খাতটি দ্রুত বিস্তার লাভ করেছে। দেশে রেস্টুরেন্ট বাণিজ্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ায়, পোলট্রির চাহিদাও বেড়েছে। রেস্টুরেন্টের মেন্যুর বিশাল অংশ জুড়েই আছে মাংসের বিভিন্ন পদ। পোলট্রির চাহিদা বাড়তে থাকায় তাই বেড়েছে পোল্ট্রি খাবারের চাহিদাও।  

দেশের পোল্ট্রি খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ এখন প্রায় কয়েক হাজার কোটি ডলার। আগামী দশকের মধ্যে বিনিয়োগের পরিমাণ দ্বিগুণ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পোল্ট্রি খামারের সংখ্যা বছরে গড়ে প্রায় ১৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দেশের দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্যেও উল্লেখজনক অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে। বর্তমানে, ডেইরি খাতের বার্ষিক বাজার মূল্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। ২০২৯ সালের মধ্যে দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা লাভের পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ। 

২০১৯-২০ অর্থবছরে নয়টি প্রতিষ্ঠান বিদেশে পশুখাদ্য রপ্তানির অনুমোদন লাভ করে। প্রতিষ্ঠানগুলো হল- প্যারাগন গ্রুপ, অ্যাজাটা ফিড মিলস, সিপি বাংলাদেশ, আফতাব, এজি অ্যাগ্রো, কোয়ালিটি ফিডস লিমিটেড, আলিয়া ফিডস, আরআরপি ফিডস এবং নারিশ গ্রুপ। এদের মধ্যে আটটি প্রতিষ্ঠান ভারতের ত্রিপুরা ও আসাম এবং নেপালে কয়েক হাজার টন পোল্ট্রি ও মৎস্য খাদ্য রপ্তানি করেছে।

নানা প্রতিবন্ধকতা
বর্তমানে এ খাতে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, ভেজাল কাঁচামাল, মান নিয়ন্ত্রণে ঘাটতি এবং ভ্যাকসিন আমদানিতে উচ্চ কর, ডলার সংকটে এলসি খোলায় জটিলতাসহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে।

পশুখাদ্য উৎপাদন শিল্পে এখন উচ্চ বিনিয়োগের প্রয়োজন। চাহিদা অনুযায়ী বাড়ছে না উৎপাদন। এছাড়া, প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ইকোনমি অব স্কেল অর্জনও এখন প্রাথমিক সমস্যা বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এফআইএবি) তথ্য মতে, পোলট্রি খাদ্যের মূল উপকরণ ভুট্টা, সয়াবিন ইত্যাদি ভারত ও পাকিস্তান অনেকটাই উৎপাদন করে। বাংলাদেশকে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ব্যয় বেশি। আমদানিতে জাহাজভাড়া ও অগ্রিম আয়কর বাবদ ব্যয়ও আছে।

দেশে পোলট্রি খাদ্যের দাম যে কারণে বেশি
পোলট্রি খাদ্য আমদানিতে শুল্ককরসহ রয়েছে বিভিন্ন ধরনের মান মেনে চলার শর্ত। কিন্তু তারপরও আমদানি উন্মুক্ত নয়। ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমদানি নীতি আদেশ অনুযায়ী খাদ্য আমদানিতে বিভিন্ন শর্ত আরোপের পরও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পূর্বানুমতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকার অতিমাত্রায় সুরক্ষা দেওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের চেয়ে দেশে পোলট্রি খাদ্যের দাম অনেক বেশি বাড়ছে।

কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুরগির ডিম উৎপাদন খরচের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ যায় পোলট্রি খাদ্যের দামের পেছনে। 

এ বিষয়ে ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (এফআইএবি) সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম হ্যালো বাংলাদেশকে বলেন, ৬০-৭০টি পণ্যের সমন্বয়ে ফিড তৈরি হয়। এগুলোর ৬০ শতাংশ উপকরণই আমদানি করতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে ভুট্টা, সয়াবিন মিলসহ ফিড তৈরির অন্যান্য উপকরণ এবং ওষুধের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েছে। ডলার সংকটে এলসি খোলা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনে-র সভাপতি সুমন হাওলাদার হ্যালো বাংলাদেশকে বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে ফিডের দাম চড়া। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যখন বিশ্বব্যপী ফিড উপকরণের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়ে, তখন সব দেশেই ফিডের দাম বাড়ে। কিন্তু যখন গত বছর এসব উপকরণের দাম কমে তখন সে অনুযায়ী প্রতিবেশী দেশ ভারতে দাম কমতে থাকলেও বাংলাদেশে সে হারে দাম কমানো হয়নি।

নামিদামি কোম্পানির নাম ব্যবহার করে ভেজাল খাদ্য
অনুমোদনহীন নিম্নমানের ভেজাল গোখাদ্যে ও পোলট্রি ফিড তৈরিরও অভিযোগ উঠেছে একটি চক্রের বিরুদ্ধে। এসব খাদ্যে উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখসহ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিস্তারিত তথ্যও থাকে না। আবার কখনও কখনও প্যাকেটে নামিদামি কোম্পানির নাম ব্যবহার করে খামারিদের চোখ ফাঁকি দিচ্ছে অসাধু চক্র। সম্প্রতি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে বিভিন্ন এলাকায় ভেজাল প্রাণিখাদ্য তৈরির সন্ধান পাওয়া যায়। পরে জরিমানাসহ সংশ্লিষ্ট কারখানা সিলগালা করে দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ফেনীর খামারি আবদুল হান্নান বলেন, খাদ্যে প্রয়োজনীয় উপকরণের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ আটা, বালু ও সিরামিকসের ধুলা। পরে নামিদামি কোম্পানির সিল দেওয়া বস্তায় ভরে বাজারজাত করা হচ্ছে। কোনটি আসল আর কোনটি নকল, সেটি চেনাই এখন কঠিন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, দেশে প্রাণিজ খাবারের ভেজাল কারখানা আছে অন্তত ৩ হাজার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বগুড়ার শেরপুর ও সিরাজগঞ্জে।

বিপিআইসিসির সভাপতি মশিউর রহমান হ্যালো বাংলাদেশকে বলেন, পোল্ট্রির সমৃদ্ধির উপর নির্ভর করে খাদ্য শিল্প সহযোগী খাত হিসেবে বেড়ে উঠেছে। কিন্তু রেজিস্ট্রিবিহীন প্রতিষ্ঠানগুলো নিম্নমানের খাদ্য তৈরি করছে। ফলে, প্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মানহানি ঘটছে।

 

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ