Home বাংলাদেশ বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ১৯ দশমিক ৪

বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ১৯ দশমিক ৪

নিজস্ব প্রতিবেদক
৬২ views

বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের এবারের স্কোর ১৯ দশমিক ৪। ১২৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৮৪তম অবস্থানে রয়েছে। প্রতিবেদন বিশ্লেষণ অনুযায়ী বাংলাদেশে মাঝারি মাত্রার ক্ষুধা বিরাজ করছে। ক্ষুধা মোকাবেলায় বাংলাদেশ ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের তুলনায় এগিয়ে থাকলেও নেপাল ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে।বু

বুধবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফে বাংলাদেশ এবং কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইডের যৌথ আয়োজনে “ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশের পথে: বাধা এবং উত্তরণের উপায়” শীর্ষক বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক ২০২৪-এর প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। এতে সম্মানিত অতিথি ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন ড. মিশেল ক্রেজা। বিশেষ অতিথি ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাসুদুল হাসান, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ খালেদ হাসান এবং বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফে বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর পঙ্কজ কুমার। সমাপণী বক্তব্য দেন কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর মনীষ কুমার আগরওয়াল। প্যানেল আলোচক ছিলেন মন্ত্রী পরিষদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খালিদ হাসান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাসুদুল হাসান, নথ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. বর্ণালী চক্রবর্তী, আবদুস সালাম, ইয়ুথ নেটওয়ার্কের শায়লা শবনম রিচি। সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম।

SAVE 20241211 200134 1

উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, অনিরাপদ কৃষি চর্চার ফলে আমরা নিরাপদ খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করতে পারছি না। এতে পুষ্টি নিরাপত্তাও নিশ্চিত হচ্ছে না। হাওর, নদীতে মাছের বৈচিত্র্য রয়েছে।

মাছসহ বাংলাদেশে যেরকম প্রাকৃতিক খাদ্য বৈচিত্র্য আছে তা রক্ষার ওপর জোর দেন তিনি। খাদ্য নিরাপত্তায় নারীর লোকজ জ্ঞানকেও গুরুত্ব দেন তিনি। এছাড়া অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও খাদ্যব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে উল্লেখ করেন তিনি।তিনি ক্ষুধা মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব তরুণ প্রজন্মকে দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

ড. মিশেল ক্রেজা বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বহুখাতভিত্তিক উন্নয়নে কার্যক্রমে বাংলাদেশকে সহায়তা দিয়ে আসছে। দরিদ্র মানুষেরা অনেক সময় পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার কিনতে পারে না। তাই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে দরিদ্রসহ অন্যান্য বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীকে আরো অগ্রাধিকার দিয়ে সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তার ব্যবস্থাকে জোরদার করতে হবে।

স্বাগত বক্তব্যে পঙ্কজ কুমার বলেন, “বাংলাদেশ ক্ষুধা হ্রাসে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে, কিন্তু ২০২৪ সালের গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স-এর দিকে তাকালে দেখা যায় এখনও গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। ক্ষুধার-চক্রকে ভাঙতে আমরা কমিউনিটি-ভিত্তিক সমাধান, অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতিমালা এবং জলবায়ু সহনশীলতার শক্তিকে গুরুত্ব দিচ্ছি।“

অনুষ্ঠানে বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন সরকারের নীতিনির্ধারক, বিশেষজ্ঞ, উন্নয়ন অংশীদার, নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ এবং উন্নয়নকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। তাঁরা ক্ষুধা ও অপুষ্টি দূরীকরণের কার্যকর কার্যকর সমাধানের ওপর গুরুত্ব দেন।

সমাপণী বক্তব্যে মনীষ কুমার আগরওয়াল বলেন, “এবারের গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স প্রতিবেদন কেবলমাত্র ক্ষুধার প্রবণতা ও দেশের স্কোর নিয়েই মূল্যায়ন করেনি বরং জলবায়ু সহনশীলতা ও শূন্য ক্ষুধার জন্য জেন্ডার বৈষম্য মোকাবিলার গুরুত্ব নিয়েও গভীর বিশ্লেষণ করেছে।

খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ও অপুষ্টির কারণে সাধারণত নারী ও কন্যা শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারা আবহাওয়ার চরম অবস্থা ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবেও বেশি ভোগান্তির শিকার হয়। জেন্ডার নিরপেক্ষতাকে ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে সামগ্রিক ব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।“

খালিদ হাসান এর মতে, সরকার ৩৯টি মন্ত্রণালয়ে সামাজিক নিরাপত্তায় কাজ করছে। এই কাযক্রমকে সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছি। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন, সামাজিক নিরাপত্তা, দুযোগপূণ এলাকার নারীশিশুরা যাতে বিপদাপন্ন না হয় এজন্য তিনটি কাযক্রম হাতে নিয়েছি।
বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক ২০২৪-এর তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ক্ষুধা নিরসনে বাংলাদেশের অগ্রগতি হলেও এখনও জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২-এর প্রকৃত ক্ষুধামুক্তির প্রতিশ্রুতি থেকে অনেক দূরে আছে।

জলবায়ু পরিবর্তন ও লিঙ্গজ বৈষম্যের কারণে এখনো দেশের বিভিন্ন জায়গায় বহু মানুষ খাবারের তীব্র সংকটে থাকে।

এ বছরের বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ১৯ দশমিক ৪। ২০১৬ সালের তুলনায় ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি ঘটলেও এ স্কোর অপুষ্টিসহ সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকার নির্দেশ করে।
মূলত চারটি সূচকের ওপর ভিত্তি করে ক্ষুধা সূচকের স্কোর নির্ধারিত হয়েছে: এর মধ্যে অপুষ্টির মাত্রা, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের উচ্চতা অনুযায়ী কম ওজন, বয়স অনুযায়ী কম উচ্চতা এবং শিশুমৃত্যুর হার ।

বাংলাদেশে জনসংখ্যার ১ দশমিক ৯ শতাংশ অপুষ্টিতে ভুগছে। পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ খর্বকায়। পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের ১১ দশমিক ০ শতাংশ শারীরিকভাবে দুর্বল। পাঁচ বছর বয়সের আগে ২ দশমিক ৯ শতাংশ শিশু মারা যায়।

বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে জেন্ডার বৈষম্য কীভাবে মানুষকে তার সম্পদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এবং সম্পদ গ্রহণে বাধা দেয়। এ প্রবণতা মানুষকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং খাদ্য নিরাপত্তার ঘাটতি মোকাবিলা করার সক্ষমতাও কমিয়ে দেয়।

প্রতিবেদনে জলবায়ু বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এবং খাদ্যব্যবস্থা রূপান্তরের অন্যতম অনুঘটক হিসেবে জেন্ডার ন্যায্যতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এটি অর্জন করতে হলে ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে সামগ্রিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়েছে রিপোর্টে। এর মধ্যে আইনি অধিকার, আনুষ্ঠানিক শর্তাবলি এবং অনানুষ্ঠানিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক রীতিনীতি, যা প্রায়ই পরিবার ও সমাজে সংঘর্ষ সৃষ্টি করে।

২০২৪ সালে সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ৭৫তম বার্ষিকী এবং খাদ্য-অধিকার নির্দেশিকার ২০তম বার্ষিকী উপলক্ষে ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফে, কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড এবং ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ল অব পিস অ্যান্ড আর্মড কনফ্লিক্ট-এর বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের সহলেখকরা আরো কার্যকর এবং সঙ্গত নীতিমালার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।

তারা বলেছেন, খাদ্য অধিকার নিশ্চিতের জন্য প্রতিটি দেশের দায়বদ্ধতা আরো বাড়ানো প্রয়োজন। সেজন্য জেন্ডার নিরপেক্ষতা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সমন্বিতভাবে বিনিয়োগ করতে হবে।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ