Home মতামত জেন-জি প্রজন্ম ও আমাদের তরুণদের কাছে প্রত‍্যাশা

জেন-জি প্রজন্ম ও আমাদের তরুণদের কাছে প্রত‍্যাশা

প্রকৌশলী এমদাদুল ইসলাম
২০১ views

সময়ের আবর্তে এক প্রজন্মের হাত ধরে এগিয়ে আসে আরেক প্রজন্ম। ভিন্ন ভিন্ন দর্শন নিয়ে বেড়ে ওঠে একেক প্রজন্ম। সময়ের পার্থক্যের কারণে চিন্তা -চেতনার ভিন্নতা দেখা যায়। একসময় প্রজন্ম ছিল রেডিওনির্ভর। কম্পিউটার কি জানতো না। পরে টেলিভিশন, ভিসিপি, ভিসিআর, ভিসিডি, ডিভিডি আসে। টিভি চ্যানেলের পর আসে মোবাইল ফোন।  আর এখনকার প্রজন্ম অ্যান্ড্রয়েড ফোন আর এআই-এ ডুবে রয়েছে। ইউটিউব আর গুগলনির্ভর জীবন হয়ে পড়েছে এ প্রজন্ম। 

প্রযুক্তির বিকাশে যুগে যুগে ‘মিলেনিয়াল’, ‘জেনারেশন-এক্স’, ‘বেবি বুমার্স’ প্রভৃতি প্রজন্মের আবির্ভাব ঘটছে। এসব প্রজম্মের কেউ কেউ বিভিন্ন আবিস্কার, বিপ্লব বা সংস্কারের মাধ‍্যমে হয়েছেন কালজয়ী। বিশ্বকে তুলে ধরেছেন অনন্য উচ্চতায়ও। সম্প্রতি হাজির হয়েছে আরেক নতুন প্রজন্ম। নাম ‘জেন-জি’। ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের ভেতর যাদের জন্ম, তাদেরকে ‘জেন-জি’ বা ‘জেনারেশন জেড’ প্রজন্ম বলা হয়। আর ‘মিলেনিয়াল’ প্রজন্মের জন্ম ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ‍্যে; ‘জেন-এক্সের’ প্রজন্মের জন্ম ১৯৬৫ থেকে ১৯৮০ সালের মধ‍্যে এবং বেবি বুমার্সদের জন্ম ১৯৪৬ থেকে ১৯৬৪ সালের মধ‍্যে।

লক্ষ‍্য করলে দেখা যায় যে, বিশ্বের প্রায় দেশেই সমসাময়িককালে এসব বিভিন্ন জেনারেশনের  ছাত্র-তরুণরাই যতসব বিপ্লব এবং অভ‍্যূর্থান ঘটিয়ে বসেছে। স্মরনকালে- আমাদের দেশেও বড় সব আন্দোলন/অভ‍্যূর্থান ঘটিয়েছে ছাত্র-তরুনরাই। যেমন বাহান্নের ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ আন্দোলন ও স্বাধীনতা যুদ্ধ, নব্বইয়ের এরশাদবিরোধী আন্দোলন ইত‍্যাদি। সাম্প্রতিক বৈষম‍্যবিরোধী আন্দোলনও ছিল অনুরুপ। একঝাঁক অপরিচিত ছাত্রদের নেতৃত্ব ও সমন্ময়ে এই আন্দোলনটি সম্পর্কে দেশের রাজনীতিবিদরাও ছিলেন অজ্ঞ বা অন্ধকারে। এই জেন-জিরা ভিন্ন ধরনের কর্মসূচী যেমন ‘কমপ্লিট শার্টডাউন’, ‘ঢাকা ব্লকেড’, ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ ইত‍্যাদির মাধ‍্যমে প্রতিষ্ঠা করেছে ‘নতুন বাংলাদেশ’।

তাদের আন্দোলন শুরু হয়েছিল সরকারী চাকুরীতে কোটা প্রথার সংস্কার নিয়ে। তারা দেশের রাজনীতিতে একটি ভিন্নমাত্রার ধারা তৈরীতেও আগ্রহী! এই জেন-জি প্রজন্মের কয়েকজন তরুন তো অন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্ঠাও হয়েছেন এবং আরো অনেকে নেতৃত্বও দিয়ে চলেছেন। লক্ষণীয় যে, তাদের শব্দচয়ণ, কথা-বার্তা, আচার-আচরণ, ড্রেস এবং ভাষা প্রয়োগ আগের প্রজন্মের লোকজনের চেয়ে ভিন্ন। তারা প্রায় সকলেই ক‍্যাজুয়েল ড্রেস পরে এবং খাদ‍্যাভাসও আমাদের চেয়ে ভিন্ন (আমাদের মতো মাছে-ভাতের মানুষ নয়!)। তারা কথা বলতে ভয় পায়না এবং তাদের লেখাপড়ার ধরনও অন‍্যরকম- অর্থাৎ আমাদের মতো তারা ‘ডিকশনারী’ ব‍্যবহার করেনা। সবমিলে তাদের স্বকীয় চিন্তার বহিঃপ্রকাশও ভিন্ন। 

এই অভ‍্যূর্থানের পর জেন-জি প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সংস্কারে উঠে-পড়ে লেগেছেন। আন্দোলনের বিভিন্ন স্লোগান ও স্মৃতি নিয়ে তারা অভূতপূর্ব আর্ট ও গ্রাফিতির অংকনে দেশের শহর/নগরীর প্রায় সব দেয়াল/খালি জায়গা ভরিয়ে দিয়েছে- যাতে স্বৈরাচারী শাসকের সাথে তাদের নানারকম দ্রোহ-বিদ্রোহের কথা এবং অনুভুতির প্রকাশ ঘটেছে। এমনিতে জেন-জি ও সমসাময়িক প্রজন্মের সাধারণ ছেলে-মেয়েরা সমাজের নানা অন‍্যায়, অনিয়ম ও দুর্নীতিকে ঘৃনা করে। স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর স্বপ্নবাজ জেন-জির ছেলে-মেয়েরা ঢাকাকে একধরনের ক‍্যালিওগ্রাফিক সিটিতে রুপান্তর করেছে বললে ভুল হবেনা! কারণ, এর আগে কখনো দেশের কোন শহর/নগরীর দেয়াল এত রঙিন রুপে দেখা যায়নি। সত‍্যিই জেন-জি প্রজন্মের জ্ঞানগর্ব এসব লেখচিত্রের বিষয়টি খুবই প্রশংসার দাবী রাখে।

বিশ্বব‍্যাপী জেন-জি প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা আসলে অনেক বেশী স্বাধীনচেতা এবং পেশা হিসেবে তাদের নিকট যেকোন ধরনের চাকুরির চেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি-নির্ভর ব‍্যবসাতেই বেশী আগ্রহী। তাদের কাছে গতানুগতিক ব‍্যবসার চেয়ে স্মার্ট টেকনোলজী, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও চ‍্যাটজিপিটির ব‍্যবহার জায়গা করে নিয়েছে। সুইডিশ কর্মী গ্রেটা থানবার্গ তো ইতিমধ‍্যে বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলনের নায়িকা হিসেবেও পরিচিতি লাভ করে বসেছেন। তাই, সংগতকারণে এই প্রজন্মটিকে নিয়ে পৃথিবীতে মাতামাতিও অনেক বেশী! সম্প্রতি এক আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে- ধরাবাঁধা চাকুরীর চেয়ে তাদের মধ‍্যে ভিন্ন প্রতিভার বিকাশ বা আকর্ষনই বেশী। এই সমীক্ষা মতে- ৭৬ শতাংশ জেন-জিরা কারও অধীনে কাজ করতে আগ্রহী নন! নয়টা-পাঁচটার একঘেয়ে কর্মজীবনও তাদের পছন্দনীয় নয়! তাদের বেশীরভাগই মনে করে- যেকোন ব‍্যবসা শুরু করার যোগ‍্যতা তাদের আছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের ‘পিউ রিসার্চ’ এবং “ইয়াহু” ফাইন‍্যান্সের প্রতিবেদনে আগের প্রজন্মের সাথে জেন-জিদের মধ‍্যে বড় ধরনের ব‍্যবধানের কথা বলা হয়েছে। বেশীরভাগ জেন-জি’রা নিজেই নিজের বস বা কর্তা হতে চান। অথচ ‘মিলেনিয়াল’দের মধ‍্যে এই প্রবণতা ছিল ৫৭ শতাংশ; ‘জেনারেশন এক্সে’র মধ‍্যে ৩৬ শতাংশ এবং ‘বেবি বুমার্স’দের মধ‍্যে ২৫ শতাংশ মতো। বেশীর ভাগ জেন-জি মনে করে- এই ডিজিটাল যুগে ব‍্যবসাসংক্রান্ত  সব তথ‍্য ইন্টারনেটেই পাওয়া যায়! এবং ডিজিটাল যুগের বাড়বাড়ন্ত তাদের ব‍্যবসার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধিতে এক ধরনের অনুঘটকের কাজ করছে- যা আগেকার প্রজন্মের লোকজনের মধ‍্যে তেমন ছিলই-না বলা যায়! এজন‍্য তখন তারা পড়াশোনা করে চাকুরীর খোঁজ করতেন এবং দীর্ঘদিন ধরে সেই চাকুরীই করে যেতেন।

জেন-জিরা হলো প্রথম সামাজিক প্রজন্ম- যারা তাদের শৈশব বয়স থেকেই ইন্টারনেট ও পোর্টেবল ডিজিটাল প্রযুক্তির অ‍্যাক্সেস নিয়ে বেড়ে উঠেছে। এখন তারা স্মার্টফোন থেকেই স্বাধীনচেতা ব‍্যবসা-বাণিজ‍্য পরিচালনা করে  চলেছে। আমাদের দেশের জেন-জি প্রজন্মের ছেলে- মেয়েরা ইতিমধ‍্যে নানা ব‍্যবসা-বাণিজ‍্য বা কাজকর্ম করে সুন্দরভাবে নিজেদের ঘর-সংসার চালাচ্ছেন, ফ্রিল‍্যান্সিং করছেন এবং এভাবে অনেকে তাদের স্ব-স্ব ক্ষেত্রে দেশ-বিদেশেও প্রতিষ্ঠিত হয়ে বসেছেন। এও লক্ষণীয় যে, ছোটবেলায় মা-বাবা ও বয়োজ্যেষ্ঠরা আমাদের সাথে যে আচরণ করতো, এখন কেউ এমনকি অফিসেও কেউ তাদের সাথে সে রকম আচরণ করে না। কারণ সবাই জানে, এদের বেশীরভাগই ‘ডিজিটাল নেটিভস’!

এ কথা সত‍্যি যে, জেন-জি প্রজন্ম অনেক বেশী আত্মবিশ্বাসী ও প্রযুক্তিনির্ভর। গত শতাব্দীতে যাদের জন্ম, তাদের তুলনায় জেন-জিদের ব‍্যবসার প্রতি ঝোঁক অনেকটাই বেশী। এই প্রজন্মের তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটা অন‍্যরকমও বটে। কিশোর- কিশোরীদের মধ‍্যে সেক্সিং কম, এমনকি তাদের পিতৃত্বের বা গর্ভধারনের হারও কম। তাদের বেশীরভাগের বিয়ে-শাদীও জেন-জি প্রজন্মের মধ‍্যে। তাদের পেপার ও বই পড়ার প্রবনতাও প্রায় জিরোতে! মদ‍্যপান বা অ‍্যালকোহল আসক্তির হারও তুলনামুলকভাবে অনেক কম। অপরাধ প্রবনতাও অনেক কম। বাস্তবে তারা বাঁধাধরা জীবনের চেয়ে ফ্রিল‍্যান্সিং-এ কাজ করতেই বেশী আগ্রহী। এভাবে বিশ্বব‍্যাপী জনসংখ‍্যার হারও কমে যেতে শুরু করেছে। 

এই বছর যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো-ভিত্তিক অনলাইন মার্কেটপ্লেস “আপওয়াক” যুক্তরাষ্ট্রের ১০৭০ জন জেন-জি প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের উপর একটি জরিপ পরিচালনা করে- যাদের প্রায় সবাই ছিল ফ্রিল‍্যান্সার। দেখা যায় যে, তাদের ৫৩ শতাংশই (জেন-জি) সপ্তাহে গড়ে ৪০ ঘন্টা অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ করে। 

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে জেন-জিদের এই মনোভাবের মূল কারণ হলো- পেশার ও পেশাগত বিকাশের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ আরোপ। নিজেরা যা ভাল মনে তা পেশা হিসেবে দাঁড় করাতে চেষ্টা করে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- নীতি নৈতিকতা সংক্রান্ত পুরনো ধ‍্যান-ধারণার পরিবর্তন অর্থাৎ জেন-জিরা পুরনো নীতি- নৈতিকতা সম্পন্ন কর্তাদের অধীনে বা প্রত‍্যাশা অনুযায়ী কাজ করবে না বা কর্তাদের পছন্দের আলোকে ক‍্যারিয়ার গড়বে না! যেই কারণে- তারা ফ্রিল‍্যান্সিং এর দিকে বেশী ঝুঁকছেন। আর বাংলাদেশে তো তারা (জেন-জিরা) এখন নেতৃত্বের আসনেও চলে এসেছেন। এখন দাবীও ওঠেছে যে- দেশে মেম্বার অব পার্লামেন্ট হওয়ার জন‍্য বয়সসীমা যেন আঠারতে নামিয়ে আনা হয়।

অর্থাৎ জেন-জিরা বয়স্ক নেতা বা বস হিসেবে বা জ‍্যেষ্ঠ সহকর্মী হিসেবে এখন আর কাউকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বা আলাদা করে দেখতে রাজি নন! সবার সঙ্গেই একই রকম আগ্রহ, উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে কাজ করতে চায় তারা। এমনকি পোশাকের বিধান মান‍্য করার ক্ষেত্রেও তাদের আপত্তি দেখা যায়- যা আমরা দেখছি দেশের অন্তবর্তীকালীন সরকারে তরুন দু’জন উপদেষ্ঠা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ এবং প্রায় সব সমন্ময়ক বা সাথীদের মধ‍্যেও! 

তাই, বাংলাদেশে জেন-জিদের কাছে আমার কিছু প্রত‍্যাশা রয়েছে। যেমন প্রথমে “মব জাষ্টিস” বা কিলিং বন্ধ করা। এতদিন দলীয় সরকারের আমলে কিছু দলীয় ছাত্ররা তাদের মতের বিরুদ্ধের ছাত্রদেরকে ধরে নিয়ে গিয়ে বিশ্ববিদ‍্যালয়ের হলের গেষ্ট/গণরুমে আটকিয়ে কথার বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে ও মারধর করে হত‍্যা বা পঙ্গু করে দেয়া যেন একটি নিয়মেই পরিণত হয়ে গিয়েছিল। “আয়নাঘর” নেয়ার কথাও জানা গেছে। অনুরুপ ভিন্ন মতের/বিরোধী দলের মানুষের বিবেচনায় অনেকের ব‍্যবসা-বাণিজ‍্যও দখল করে নেয়া বা বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এটি কোন অবস্থায় আইনের বিধান বা শাসন হতে পারেনা! এভাবে বুয়েট, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ‍্যালয় বা দেশের বিভিন্নস্থানে ইতিমধ‍্যে অনেক ছাত্র বা মানুষজনকে অকারণে আটকিয় পিটিয়ে হত‍্যা বা আহত করা হয়েছে। হালে অনেক জায়গায় বিভিন্ন অজুহাতে মন্দির, মাজারেও অনুরুপ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আমার প্রত‍্যাশা- দেশের জেন-জি তথা বৈষম‍্যবিরোধী ছাত্র-জনতা এসব বিষয়গুলোকে অবশ‍্যই প্রতিরোধ করবে এবং আইনের শাসনে দেশকে চলতে দিবে।

আরেকটি প্রত‍্যাশা হলো- দেশে উপযুক্ত ছাত্র নেতৃত্ব সৃষ্টি করা। স্বাধীনতার আগে দেশে যেভাবে অর্থাৎ দলের লেজুড়বৃত্তি ব‍্যতিরেকে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ‍্যমে ভবিষ‍্যতের নেতৃত্ব তৈরী হয়েছিল, সেভাবে আবারও ছাত্রদের মধ‍্য থেকে দেশের নতুন নেতৃত্ব তৈরী করা প্রয়োজন। তখন বিশ্ববিদ‍্যালয়ের ভাল ছাত্ররাই নেতৃত্বের আসনে ছিল এবং তারা তাদের বিবেক দিয়েই নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু স্বাধীনতার পর এই পরিস্থিতি অন‍্য রকম হয়ে যায়। তাই দেশের জেন-জিরা যেভাবে বৈষম‍্যবিরোধী আন্দোলন করে দেশকে “নতুন বাংলাদেশ” গঠনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, সেভাবে দেশের সব উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব‍্যবস্থা করে ভবিষ‍্যতের নেতৃত্ব গঠন করে যেন গুণগত পরিবর্তন আনতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

তবে জেন-জিদের একটা বড় সমস‍্যা হলো- মাত্রাতিরিক্ত ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব‍্যবহার বিশেষ করে রাত জেগে হ‍্যান্ডহেল্ড বা মোবাইল ফোন ব‍্যবহারের কারণে তাদের অনেকে ‘ডিজিটাল আইষ্ট্রেন’ বা কম্পিউটার ভিষন সিন্ডোমে ভুগে/ভুগছে! এর ফলে অনেক জেন-জিদের চোখে-মুখে প্রায়শ একধরনের বিরক্তভাব, ক্লান্তি, বিরক্ত চোখ, ঝাপসা দৃষ্টি, ফোকাস করতে সমস‍্যা, মাথাব‍্যথা ইত‍্যাদি লেগে থাকে। আবার এসব বিবিধ কারণে অনেকের মধ‍্যে বিভিন্ন ধরনের অ‍্যালার্জিগত রোগও বৃদ্ধি পেয়েছে। আশা করি- জেন-জি এর কর্ম চাঞ্চল‍্য ও উদ্দীপনা দিয়ে একদিন এসব বিষয়গুলো সহনীয় (accustom) হয়ে উঠবে।

তবে এখন থেকে ভাবনা শুরু হয়েছে পরবর্তী প্রজন্ম অর্থাৎ ‘জেন-আলফা’কে নিয়ে! কারণ, এই নতুন প্রজন্ম সবদিক দিয়ে বিশেষ করে প্রযুক্তিগতভাবে আরো সচেতন প্রজন্ম হবে! আক্ষরিক অর্থে- যাদের জন্ম ২০১২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তারাই জেন-আলফা প্রজন্ম হিসেবে পরিচিত। এসব ছেলে-মেয়েরা তাদের জন্ম থেকেই প্রযুক্তিতে নিমগ্ন, আনলাইনে ও কম্পিউটার স্ক্রীনে, স্মার্ট ফোন এবং ট‍্যাবলেটের সামনে আগের যেকোনো গ্রুপের চেয়ে বেশী সময় বহন করে। এভাবে বর্তমানে তাদের অনেকে কিশোর বয়সেও পৌঁছে গেছে!! স্বাভাবিকভাবে জেন-আলফা প্রজন্ম- আধুনিক ন‍্যানো প্রযুক্তি, ব্লকচেইন, সাইবার নিরাপত্তা, স্বায়ত্বশাসিত পরিবহন এবং ভার্চুয়াল বাস্তবতা তথা পরিবর্তিত জলবায়ুর (ক্লাইমেট চেঞ্জের) আলোকে নতুন ক্ষেত্র তৈরী করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

লেখক: সাবেক প্রধান প্রকৌশলী, রাজউক, নগর ও উন্নয়ন বিশ্লেষক

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ