যুক্তরাষ্ট্রে ইলন মাস্কের কর্মকাণ্ড নিয়ে রিপাবলিকান পার্টিতে হতাশা দেখা দিয়েছে। সরকারি কার্যক্রমে তার হস্তক্ষেপ অনেকেই মানতে পারছেন না। রিপাবলিকানদের একটি অংশ মনে করছে, তার কার্যক্রম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনি অঙ্গীকার পূরণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এ নিয়ে রিপাবলিকান পার্টির অনানুষ্ঠানিক বৈঠকও হয়েছে। তবে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকারসহ কিছু রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান মাস্কের কর্মকাণ্ডের প্রশংসাও করছেন।
উল্লেখ্য, বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্ককে দক্ষতা বৃদ্ধি বিষয়ক দপ্তরের (ডিওজিই) দায়িত্ব দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে মাস্কের উপস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যদিও হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, ডিওজিইর প্রধান এবং সেক্রেটারি হিসেবে তিনি উপস্থিত থাকবেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মুখ্য উপদেষ্টা তথা ধনকুবের ইলন মাস্ক গত শনিবার ২৩ লাখ সরকারি কর্মচারীকে ইমেইল করে বলেছিলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাদের জানাতে হবে গত সপ্তাহে তারা ঠিক কী কী কাজ করেছেন। তার মেইলের জবাব না দিলে ধরে নেওয়া হবে সেই সরকারি কর্মী চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে ইচ্ছুক। সেই বার্তা পেয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মীদের মধ্যে। তবে মাস্কের সেই বার্তাকে আমলে নিচ্ছে না খোদ ট্রাম্প প্রশাসন। তার ইমেইল নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন এবং তার দল রিপাবলিকান পার্টিতে অস্বস্তি সৃষ্টি হয়েছে।

প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সাথে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ছবি: নিউ ইয়র্ক টাইমস
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মানবসম্পদ উন্নয়ন দপ্তর হিসেবে কাজ করে ‘অফিস অব পার্সোনেল ম্যানেজমেন্ট’ বা ওপিএম। সেই সংস্থা তার কর্মীদের জানিয়েছে, তারা চাইলে ইমেইলের জবাব নাও দিতে পারেন। তবে ইতিমধ্যেই যেসব কর্মী জবাব দিয়েছেন, সেগুলি নিয়ে কী করা হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে ওপিএমের ভেতরেই। ডিওজিইর আদৌ সরকারি কর্মচারীদের বরখাস্ত করার এখতিয়ার আছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠন।
তাছাড়া পররাষ্ট্র দপ্তর বা গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের মতো দপ্তরের কোনো কর্মী কবে কী কী কাজ করেছেন, তার ব্যাখ্যা দিতে গেলে অনেক সময় অতি সংবেদনশীল জাতীয় নথি ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এসব শঙ্কার বিষয়টি মাথায় রেখেই ট্রাম্প প্রশাসন আপাতত মাস্কের ইমেইলকে তেমন আমল দিতে চাইছে না।
এফবিআই প্রধান ক্যাশ প্যাটেল তার কর্মীদের জানিয়েছিলেন, মাস্কের ইমেইলের জবাব দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তার স্পষ্ট বার্তা, এফবিআইয়ের মতো সংগঠনের কর্মীদের কাজের হিসাব সংস্থার সঙ্গে যুক্ত শীর্ষ কর্মকর্তারাই নিয়ে থাকেন। অন্য কেউ নন।
ইলন মাস্কের কর্মকাণ্ডে ইতিমধ্যে অনেকগুলো পদক্ষেপ আদালতের নির্দেশে আটকে গেছে। অনেক কংগ্রেসম্যান এবং সিনেটররাও প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন। অতি সম্প্রতি রিপাবলিকান পার্টির অনেক নেতা বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেখানে ইলন মাস্কের কর্মকাণ্ডে হতাশা প্রকাশ করা হয়।
তার এসব পদক্ষেপকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘মেইক আমেরিকা গ্রেইট এগেইন’ কমসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হিসেবে মনে করা হচ্ছে। রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান নিকোল ম্যালিওটাকিস জানিয়েছেন, আমাদের একটু পেছনে ফিরতে হবে। আমাদের এটা নিশ্চিত করতে হবে যে আমরা অপচয় রোধ করছি এবং আবর্জনাকে ছুড়ে ফেলছি। আমরা প্রতারকদের বের করছি এবং অব্যবস্থাপনাকে ঠিক করছি। অপরিণামদর্শী কাজ না করে দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে।
সূত্র: সিএনএন ও নিউ ইয়র্ক টাইমস