Home বিশ্ব যে পরীক্ষায় বদলে যায় কোরিয়ান তরুণদের জীবন

যে পরীক্ষায় বদলে যায় কোরিয়ান তরুণদের জীবন

ফাহমিদা শিকদার
১৫৮ views

কোরিয়ান পপ কালচার বা কে-পপের জনপ্রিয়তা বিশ্বজোড়া। এই পপ কালচারের অংশ কোরিয়ান ড্রামা সিরিজ ও মুভি। অনেক ধারাবাহিক নাটক বা সিনেমাতে উঠে এসেছে যে কোরিয়ানরা তাদের পড়াশোনা ও ক্যারিয়ারের ব্যাপারে কতটা সিরিয়াস। অনেক সিনেমা বা ড্রামা সিরিজে দেখা গেছে নায়ক-নায়িকা বা তাদের বন্ধুরা রাতদিন এক করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির এক বিশেষ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই এই পরীক্ষা নিয়ে আমাদের আগ্রহ জন্মানোটাই স্বাভাবিক।

সুনেং

দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হলো এই ‘কলেজ স্কলাসটিক অ্যাবিলিটি টেস্ট’ বা সিএসএটি। স্থানীয় ভাষায় একে ‘সুনেং’ বলে। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবেন সেটা নির্ধারণ করে এই পরীক্ষা। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতের চাকরি, আয়, এমনকি সামাজিক সম্পর্কও প্রভাবিত করতে পারে ‘সুনেং’। এ বছর এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ৫ লাখ ২২ হাজার ৬৭০ জন শিক্ষার্থী। যা গত বছরের তুলনায় ১৮ হাজার ৮২ জন বেশি। সারা দেশে ৮৫টি জেলার ১ হাজার ২৮২টি কেন্দ্রে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

‘সুনেং’-এ পাঁচটা বাধ্যতামূলক বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয়। কোরিয়ান ভাষা, অঙ্ক, ইংরেজি, কোরিয়ান ইতিহাস ও সোশ্যাল স্টাডিজ বা সামাজিক বিজ্ঞান। এছাড়া ঐচ্ছিক হিসেবে রয়েছে ফরাসি, চীনা, জাপানি, রাশিয়ান বা আরবি ভাষার যেকোনো একটি। সব মিলিয়ে ৮ ঘণ্টার এই পরীক্ষা। প্রত্যেকটা বিষয়ের মাঝে ২০ মিনিটের বিরতি। খাবারের জন্য ৫০ মিনিট সময় দেওয়া হয়। ৮০ থেকে ১০৭ মিনিট দীর্ঘ প্রতিটি পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন প্রচণ্ড একাগ্রতা।

প্রস্তুতি

‘কঠিন প্রশিক্ষণ, সহজ যুদ্ধ’ বলে একটা কথা প্রচলিত আছে। দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষার্থীরা যেন এই মন্ত্রেই দীক্ষিত! ‘সুনেং’-এর জন্য কয়েক বছর ধরে তারা কঠিন প্রস্তুতি নিতে থাকে। এ জন্য তারা জীবনযাত্রার রুটিন, এমনকি খাদ্যাভাসও পরিবর্তন করে ফেলে। প্রতিদিন সেই খাবারই খায় যেটা তারা পরীক্ষার দিন খাবে, যাতে ওই নির্দিষ্ট দিনে হজমে কোনো সমস্যা না হয়। পরীক্ষার নির্দিষ্ট বিরতির ২০ মিনিটেই যাতে শৌচালয় ব্যবহার করা যায়, সেই প্রস্তুতিও নেয় তারা। শরীরকে সেভাবেই প্রস্তুত করে।

অল্পবয়সী শিক্ষার্থীরা তাদের অগ্রজ ভাইবোন বা বন্ধুদের জন্য ‘চিয়ার লিডারে’র ভূমিকা পালন করে।
ছবি ঃ রয়টার্স

দক্ষিণ কোরিয়ার উচ্চ বিদ্যালয়গুলো সাধারণত বিকেল ৪টায় ছুটি হয়। কিন্তু বাড়তি পড়াশোনার জন্য পরীক্ষার্থীরা রাত ১০টা বা ১১টা পর্যন্ত স্কুলে অবস্থান করে। এ সময় শিক্ষকরা তাদের পড়াশোনার তদারকি করেন। পাশাপাশি তাদের অনেকগুলো মক টেস্টে অংশগ্রহণ করতে হয়। প্রতি বছর তিনটি জাতীয় স্তরে মক টেস্ট হয়। তবে শিক্ষার্থীরা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত মক টেস্টও দিয়ে থাকে।

আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য যেমন ভর্তি কোচিং আছে, তেমনই দক্ষিণ কোরিয়ায় ‘সুনেং’-এর প্রস্তুতির জন্য আছে ক্র্যাম স্কুল। সে দেশে এমন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বেশ জনপ্রিয়। ‘সুনেং’-এর প্রস্তুতি নিতে পড়ুয়াদের সাহায্য করে ক্র্যাম স্কুলগুলো।

ডি-ডে

পরীক্ষার্থীদের সাহায্যের জন্য পরীক্ষার দিন দেশের সবাই তৈরি থাকে। যেসব পরীক্ষার্থী দেরি করে ফেলে তাদের সাহায্য করতে পুলিশ অফিসার ও দমকলকর্মীরা একেবারে ভোর থেকেই প্রস্তুত থাকেন। প্রয়োজন হলে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়। অ্যাম্বুলেন্সও তৈরি রাখা হয়। যানজট কমানোর জন্য অফিস-আদালত, স্টক মার্কেটও দেরিতে খোলে। ইংরেজি পরীক্ষার লিসেনিং টেস্টের সময় ৩৫ মিনিটের জন্য বিমান উড্ডয়ন বন্ধ থাকে। কিছু বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়। পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে স্কুলগুলো।

আর এর বাইরে রীতিমতো উৎসব চলতে থাকে। অল্পবয়সী শিক্ষার্থীরা তাদের অগ্রজ ভাইবোন বা বন্ধুদের জন্য ‘চিয়ার লিডারে’র ভূমিকা পালন করে। সকালবেলা পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে প্ল্যাকার্ড হাতে অপেক্ষা করে। পরীক্ষার্থীদের উৎসাহ দিতে তারা ড্রাম বাজায়, গান করে।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ