হলিউড তারকাদের সান্নিধ্য পাওয়া কঠিন, কিন্তু তাদের নামের কাছাকাছি যাওয়া বেশ সহজ। ভক্তদের সেই সুযোগ করে দিয়েছে হলিউড। ‘ওয়াক অফ ফেম’ হলো হলিউড বুলেভার্ডের ১৫ ব্লক জুড়ে ও ভাইন স্ট্রিটের ৩ ব্লক জুড়ে বিস্তৃত একটি পাবলিক ফুটপাত। মেরিলিন মনরো থেকে শুরু করে একালের জনপ্রিয় তারকা রায়ান রেনল্ডসসহ প্রায় ২৭০০ জন তারকার নামের তারকা চিহ্ন-খচিত ফলক আছে বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত এই ফুটপাতে।
১৯৫৮ সালে বিনোদন শিল্পের সব অর্জনকে সম্মান জানাতে এই উদ্যোগটি নেওয়া হয়। তাছাড়া হলিউডকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু করাও একটি উদ্দেশ্য ছিল। ১৯৫৮ সালে নির্মাণ শুরু হওয়ার পর ১৯৬০ সালে পরিচালক স্ট্যানলি ক্রেমারের নামে প্রথম ‘স্টার ফলক’ বসানো হয়। তারপর থেকে বুলেভার্ড ও ভাইন স্ট্রিটের ফুটপাত হাজার হাজার সেলিব্রিটির নামের স্টার ফলকে পূর্ণ হয়েছে। ‘ওয়াক অফ ফেম’ বছররের সবসসময়ই খোলা থাকে পর্যকদের জন্য।
তারকাদের মনোনয়ন প্রক্রিয়া
হলিউড ‘ওয়াক অফ ফেমে’ তারকাদের নামের স্টার ফলক যোগ করার কোনো নির্দিষ্ট তারিখ নেই। সাধারণত প্রতি বছর জুনের কাছাকাছি হলিউড চেম্বার অফ কমার্স সম্মানিত তারকাদের একটি দল নির্বাচন করে। পরবর্তীতে নতুন তারকাদের নামের স্টার ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠান হয় সারা বছরজুড়ে।
যদিও প্রতি বছর যোগ করা স্টার ফলকের সঠিক কোনো সংখ্যা নেই। তবে চেম্বার অফ কমার্স বছরে ২০-২৪ জন নতুন তারকার নাম যোগ করার টার্গেট রাখে। সংখ্যাটি বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে, যেমন, নতুন তারকাদের জন্য উপযুক্ত অবস্থানের প্রাপ্যতা এবং যোগ্য মনোনীতদের সংখ্যা।
আরও কত ‘স্টার ফলক’ যোগ করা যাবে?
হলিউড ‘ওয়াক অফ ফেমে’ এখনও কত তারকার নাম যুক্ত হতে পারে তা নির্ধারণ করা কঠিন। নতুন ‘স্টার ফলক’ যোগ করার বর্তমান গতি এবং ফুটপাতে জায়গার পরিপ্রেক্ষিতে অনুমান করা যায় যে আরও বেশ কয়েক বছর নতুন ‘স্টার ফলক’ বসানো যাবে।
হলিউড চেম্বার অফ কমার্স ‘ওয়াক অফ ফেমে’র তত্ত্বাবধান করে এবং ‘স্টার ফলক’গুলোকে অনেক চিন্তাভাবনা করে যুক্ত করে। তাদের ভাষ্যমতে, ভবিষ্যতে সম্মানিত তারকাদের নাম যুক্ত করার জন্য যথেষ্ট জায়গা রয়েছে৷ তারা আশ্বস্ত করেছে যে ‘ওয়াক অফ ফেমে’ আরও বহু বছরের জন্য বিনোদন আইকনদের সম্মানিত করা যাবে।

প্রায় ২৭০০ জন তারকার নামের তারকা চিহ্ন-খচিত ফলক আছে বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত এই ফুটপাতে। ছবি: ট্র্যাভেলিও ডে
স্টার ফলকের জন্য বরাদ্দ অর্থ
‘স্টার ফলক’ কিন্তু বিনা পয়সায় পাওয়া যায় না। যদিও যে কেউ তারকাদের নাম কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে পারেন। কোনো সেলেব্রিটি ‘হল অফ ফেমে’র জন্য নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমে তার সম্মাননা গ্রহণের সম্মতি নেওয়া হয়। সম্মতি নেওয়ার পর সেলিব্রিটি বা তাদের স্পনসরদের তাদের ‘স্টার ফলক’ ডিজাইন, ইনস্টল এবং রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বহনের জন্য গুনতে হয় প্রায় পঞ্চাশ হাজার ডলার, বাংলাদেশি টাকায় প্রায় অর্ধ কোটি টাকা।
‘হল অফ ফেমে’র যত নিয়মকানুন
এই সম্মাননায় তারকার সম্মতিকে খুবই গুরুত্ব দেওয়া হয়। কাউকে মরণোত্তর সম্মান দেওয়া মানে জীবিত অবস্থায় সেই তারকা অবশ্যই এর জন্য অনুমতি দিয়েছেন। এত কঠোর নিয়মের কারণ হলো ‘স্প্রিংস্টিন ধারা’। একজন ভক্ত তার সম্মতি ছাড়াই ব্রুস স্প্রিংস্টিনকে মনোনীত করার পর ‘স্প্রিংস্টিন ধারা’ কার্যকর করা হয়। তাই এখন ফলক বসানোর আগে অবশ্যই তারকাদের সম্মতি নেওয়া হয়।
তারকাদের উপস্থিতিতে তাদের ‘স্টার ফলক’ উন্মোচন করা হয়। সবার জন্য একটি করে স্টার থাকলেও মাইকেল জ্যাকসন (একটি সঙ্গীতের জন্য, একটি চলচ্চিত্রের জন্য) এবং হ্যারিসন ফোর্ডের (একটি নির্বাক চলচ্চিত্র এবং একটি আধুনিক চলচ্চিত্রের জন্য) মতো সেলিব্রিটিদের একাধিক ‘স্টর ফলক’ আছে।
তবে এই ‘ওয়াক অফ ফেম’ও বছরের পর বছর ধরে অনেক বিতর্কের শিকার হয়েছে। কেউ কেউ তারকা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেছেন। অনেকে যুক্তি দেখিয়েছেন, এটি পক্ষপাতদুষ্ট এবং যোগ্য সেলিব্রিটিদের উপেক্ষা করা হয়। এ কারণে কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা চার্লি চ্যাপলিনের ছেলে চার্লি চ্যাপলিন জুনিয়র হলিউড চেম্বার অফ কমার্সের বিরুদ্ধে মামলা করে বসে। তিনি দাবি করেছিলেন, ম্যাকার্থি যুগে রাজনৈতিক চাপের কারণে তার বাবাকে অন্যায়ভাবে সম্মানিতদের প্রাথমিক তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
চ্যাপলিন জুনিয়র তার পিতার সুনামের ক্ষতি হয়েছে দাবি করে তার জন্য চার লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়েছিলেন। কিন্তু দাবির কোনো যোগ্যতা খুঁজে না পেয়ে আদালত মামলাটি খারিজ করে দিয়েছিল।
অনেকে অভিযোগ করেছেন, ‘স্টার ফলক‘ প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা ভেঙে যায়। এত আলোচনা-সমালোচনা সত্ত্বেও প্রতি বছর লাখ লাখ দর্শনার্থী এখানে আসে তার প্রিয় তারকার নামের সাথে ছবি তুলতে। ‘ওয়াক অফ ফেম’ আমেরিকার একটি বিখ্যাত ল্যান্ডমার্ক এবং হলিউডের স্থায়ী প্রতীক হিসেবে সমগ্র বিশ্বে সমাদৃত।