বিশ্বের ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস আজ সোমবার সকালে মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। স্থানীয় সময় সোমবার সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে তিনি মারা যান।
তিনি ছিলেন ৭৪১ সালের পর প্রথম নন-ইউরোপিয়ান পোপ। ৭৪১ সালে সিরিয়ান বংশোদ্ভূত তৃতীয় গ্রেগরির মৃত্যুর পর রোমে আর কোনো নন-ইউরোপিয় পোপ আসেননি। তিনি ক্যাথলিক গির্জায় সংস্কার কখনো বন্ধ করেননি। তারপরও তিনি সকলের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন।
প্রায় ৬০০ বছরের মধ্যে স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়া প্রথম পোপ ছিলেন ফ্রান্সিসের পূর্বসূরি ষোড়শ বেঞ্জামিন। প্রায় এক দশক তারা একসঙ্গে ভ্যাটিকান গার্ডেনে ছিলেন। ষোড়শ বেঞ্জামিনের পর যখন ২০১৩ সালে পোপ নির্বাচিত হন ফ্রান্সিস, তখন তার বয়স ছিল সত্তরের কোটায়।

২০১৯ সালে ভ্যাটিকানে পোপ ফ্রান্সিস ও ব্রিটিশ রাজা চার্লস, ছবি: বিবিসি
মৃত্যৃকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের গুরুতর জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। এর আগে ইতালির রোমে একটি হাসপাতালে বেশ কিছুদিন চিকিৎসা চলেছে তার। ভ্যাটিকানের কাসা সান্তা মার্তায় নিজ বাসভবনে মারা যান তিনি।
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত পোপ ফ্রান্সিসকে এ বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে বেশ কয়েকবার শারীরিক অবস্থা বেশ গুরুতর পর্যায়ে চলে যায়। শ্বাসপ্রশ্বাস-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে পোপকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। কদিন আগে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরেন পোপ।

২০১৭ সালে পোপের সাথে দেখা করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ছবি: বিবিসি
পোপ ফ্রান্সিসের আগের নাম জর্জ মারিও বারগোগ্লিও। জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর, আর্জেন্টিনার বুয়েনস এইরেসের। বাবা মারিও আর রেগিনা সিভোরি। ইতালীয় অভিবাসী বাবা মারিও ছিলেন রেলওয়ের হিসাবরক্ষক।
কেমিস্ট হিসেবে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর ধর্মের পথে পা বাড়ান জর্জ মারিও। পরবর্তী সময়ে তিনি দর্শন ও ধর্মতত্ত্বে পড়াশোনা করেন। ১৯৬৯ সাল ধর্মযাজক হন। ১৯৯৮ সালে আর্জেন্টিনায় আর্চবিশপ হন তিনি।
বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০১৩ সালে তৎকালীন পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট পদ ছেড়ে দিলে পোপ নির্বাচিত হন জর্জ মারিও। নতুন নাম নেন ফ্রান্সিস। দক্ষিণ আমেরিকার কোনো দেশ থেকে নির্বাচিত প্রথম পোপ তিনি।

২০২৩ সালে পোপের সাথে দেখা করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো ,ছবি: বিবিসি
১২ বছর ধরে রোমান ক্যাথলিক চার্চের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে পোপ ফ্রান্সিস বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ২১ বছর বয়সে তার একটি ফুসফুসের কিছু অংশ কেটে ফেলতে হয়েছিল।
ক্যাথলিক গির্জার বেশকিছু উদারনীতি ও সংস্কারের জন্য পোপ ফ্রান্সিস চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ক্যাথলিক খ্রিষ্টান, নন–ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মের মানুষের মধ্যে ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস।
ধর্মযাজকের হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের এবং কানাডার আদিবাসীদের কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চেয়ে তিনি আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন। সমলিঙ্গের যুগলদের আশীর্বাদ করতে রোমান ক্যাথলিক যাজকদের অনুমতি দিয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডের লেইন ও পোপ ফ্রান্সিস ,ছবি: বিবিসি
পোপ ফ্রান্সিস বলেছিলেন, ক্যাথলিক গির্জার দরজা সবার জন্য খোলা। এমনকি সমকামী, উভকামী ও রূপান্তরকামীদের (এলজিবিটি) গির্জায় আসতে বাধা নেই। তাঁরা গির্জায় এসে প্রার্থনা করতে পারবেন। তবে, তাঁদের গির্জার নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে।
এ বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পেঙ্গুইন র্যানডম হাউস থেকে প্রকাশিত হয়েছে পোপ ফ্রান্সিসের আত্মজীবনী ‘হোপ’।
সূত্র: বিবিসি ও এপি