ইউরোপের মোস্ট ওয়ান্টেড নারী তানিয়া গোমেজ। ‘কোকেন কুইন’ খ্যাত প্রভাবশালী এই সুইডিশ নারী মাদক সরবরাহ, পরিবহন, অর্থ ও প্রাণি পাচারের সঙ্গে জড়িত। তিনি স্টকহোমের একটি সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের সঙ্গে যুক্ত। নিজ দেশ সুইডেন থেকে প্রায় চার বছর আগে স্পেন পালিয়ে থাকার পর অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়ল লাস্যময়ী এই নারী।
গত সপ্তাহে স্পেনের ল্যাঞ্জারোটে ৩২ বছর বয়সী তানিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। স্প্যানিশ পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে, দুই পুলিশ সদস্য তাকে থানায় নিয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালে সুইডেন থেকে পালানোর পরে ইউরোপের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় উঠে তার নাম।

কুকুরের দাতব্য সংস্থার মাধ্যমেই অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন তানিয়া গোমেজ, ছবি: টেলিগ্রাফ
তানিয়ার অপরাধমূলক কর্মকান্ডগুলো প্রকাশ পাওয়ার আগে সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকের একজন ইনফ্লয়েন্সার হিসেবে নেট দুনিয়ায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেন। এ ছাড়া পথের কুকুরকে উদ্ধারকারি দাতব্য সংস্থা চ্যারিটি হুন্ডগরিনের মালিক হিসাবেও পরিচিত ছিলেন আবেদনময়ী এই নারী। হুন্ডগরিন পথের কুকুরকে থাকা-খাওয়াসহ নতুন জীবন দেওয়ার জন্য কাজ করে। নেট দুনিয়ায় প্রাণি প্রেমিক হলেও বাস্তবে তিনি অবৈভাবে বিদেশি প্রাণি পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত।
২০২০ সালের গ্রীষ্মে সেন্ট্রাল স্টকহোমের অফিসগুলোতে সুইডিশ পুলিশ অভিযান চালায়। সে সময় অবৈধভাবে অর্থ পাচারের সঙ্গে তানিয়া গোমেজের জড়িত থাকার প্রমাণ পায় পুলিশ। শুধু ২০২০ সালেই ১.৮ মিলিয়ন ক্রোনার (১,৩৩,০০০ ইউরো) মাদক লেনদেন করেন এই নারী।

তানিয়াকে গ্রেপ্তারের পরে ধরে নিয়ে যাচ্ছে স্প্যানিশ পুলিশ, ছবি: ডেইলি মেইল
অভিযানের সময় রান্নাঘর, সিলিং ও গোপন হ্যাচ থেকে পুলিশ মোট ১৫ মিলিয়ন ক্রোনার (সুইডিশ মুদ্রা) নগদ অর্থ খুঁজে পায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সুইডেনের বিভিন্ন অপরাধী চক্রের নাম লেখা একাধিক ব্যাগ পাওয়া যায় তার পরিচালিত অফিসে।
পুলিশ জানায়, স্টোকহোমের মানি এক্সচেঞ্জ থেকে ৪ মিলিয়ন ক্রোনারের লেনদেনের রেকর্ড পাওয়া যায়। জার্মানি, সার্বিয়া, তুরস্ক, স্পেনসহ অন্য দেশের সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল। মানি এক্সচেঞ্জ এর মাধ্যমে মানি লন্ডারিং করতেন তানিয়া।
গত ১৮ মাসে তিনি ২২০ মিলিয়ন ক্রোনার মানি লন্ডারিং করেছেন। এই কাজে তাকে সহায়তা করতেন ১২ জন সহযোগী। ব্যাগে করে তারা ব্যাংক নোট নিয়ে গিয়ে মানি এক্সচেঞ্জ থেকে নগদ অর্থ নিয়ে আসতেন কিংবা অন্য দেশের মুদ্রায় পাঠাতেন।

গ্যাংস্টার তানিয়া ২০২১ সালে সুইডেন ত্যাগ করে স্পেনে আত্মগোপন করেন, ছবি: ডেইলি মেইল
পুলিশি অভিযানের সময় তার অফিসের ব্যাগগুলোতে প্রায় এক মিলিয়ন ইউরো নগদ পাওয়া যায় এবং তানিয়ার বিরুদ্ধে এই অফিসের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়, যা মাদক ব্যবসায়ী ও মাফিয়া সদস্যদের আশ্রয়স্থল।
মাদক পাচার ও অর্থ পাচারের মতো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকা এই নারীকে বিচারের মুখোমুখি করবে সুইডিশ পুলিশ। দোষী সাব্যস্ত হলে তার জন্য ১৪ বছরের কারাদণ্ড হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গ্যাংস্টার তানিয়া ২০২১ সালে তার জন্মস্থান সুইডেন ত্যাগ করে স্পেনের ল্যাঞ্জারোটে আত্মগোপন করেন।

২০২০ সালে অভিযানে স্টকহোমে ১০ কেজি কোকেন পায় পুলিশ, ছবি: ইয়াহু নিউজ
২০২০ সালের মে মাসের অভিযানে স্টকহোমে ১০ কেজি কোকেন পায় পুলিশ। স্টকহোমে ওই অভিযানের পরে গোমেজ তার বাবার কাছে স্পেনে পালিয়ে যান। স্প্যানিশ ও সুইডিশ পুলিশের যৌথ অভিযানে গত সপ্তাহে ল্যাঞ্জারোটের ক্যানারি দ্বীপের নীরব শহর টায়াসে তার গোপন আস্তানার সন্ধান মেলে।
কয়েক মাস ধরে ওয়ান্টেড পার্সনস বিভাগের নতুন তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পরে উভয় দেশের পুলিশ তাকে ধরতে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেয়। যার জালে আটকা পড়ে তানিয়া গোমেজ।

লাস্যময়ী তানিয়া গোমেজ, ছবি: টেলিগ্রাফি
সুইডিশ কর্তৃপক্ষ তানিয়াকে দেশে ফেরাতে ‘একটি প্রত্যর্পণের অনুরোধ জমা দিয়েছে, যা এখন স্পেনে পরীক্ষা করা হচ্ছে’। প্রক্রিয়াটি শেষ হতে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। তাকে সুইডেনে প্রত্যর্পণের কাজ চলছে। তানিয়া গোমেজের ১০ সহযোগী ইতিমধ্যে সুইডেনে কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
সূত্র: ইয়াহু নিউজ, ডেইলি মেইল ও টেলিগ্রাফ ইউকে