রানওয়ে থেকে বিমান সোজা উড্ডয়ন করলেও পরে বাঁকা পথ অনুসরণ করেই তা গন্তব্যে পৌঁছায়। কেন বিমান সোজা না গিয়ে বাঁকা পথে যায় তার কারণ রয়েছে। বিমানের এমন চলাচলের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রেট সার্কেল রুট’ বা ‘মহাগোলক রুট’র কারণেই এমন হয়।
সহজ করে বললে বিমানের ফ্লাইট পথগুলো সোজা না হয়ে বাঁকা হয়। কারণ পৃথিবী গোলাকার ও বিমানের পথে ‘গ্রেট সার্কেল রুট’ বা ‘মহাগোলক রুট’ অনুসরণ করা হয়। এটি এমন এক রুট যেখানে পৃথিবীর বৃত্তের কেন্দ্র দিয়ে সবচেয়ে ছোট পথ তৈরি হয়। এটি পৃথিবীর বৃত্তের মতো কনভেক্স বা ভাঁজানো অংশে উড়ে চলে, যেটি দেখলে সোজা মনে হলেও পৃথিবীর বক্রতার কারণে এটি আসলে সবচেয়ে কম দূরত্বে পৌঁছানোর পথ।

বিমানের ফ্লাইট পথগুলো সব সময়ই সোজা না হয়ে বাঁকা হয়, ছবি: ফোর্বস ম্যাগাজিন
লন্ডন থেকে যদি কোনো বিমানের ফ্লাইট নিউইয়র্কে যাত্রা শুরু করে তবে বিমান সরাসরি সোজা পথে যাবে না। একটু বাঁকানো পথ হয়ে যাবে। কারণ এটি পৃথিবীর বক্রতার উপর ভিত্তি করে গ্রেট সার্কেল রুট অনুসরণ করবে। এই রুটটি বাস্তবিকভাবে সোজা পথের থেকে ছোট ও দ্রুত। হ্যালো বাংলাদেশ’র পাঠকদের জন্য বিমান সোজা পথে না চলার কারণগুলো নিচে দেয়া হলো-
পৃথিবীর গোলাকার আকৃতি
পৃথিবী যদি সোজা থাকতো, তখন সোজা পথে যাওয়া সম্ভব হত, কিন্তু গোলাকার পৃথিবীর কারণে সোজা পথটি বড় হয়ে যায়। গ্রেট সার্কেল রুট কম দূরত্বে পৌঁছাতে সাহায্য করে।
দ্রুততম পথ
গ্রেট সার্কেল রুট পৃথিবীকে কেন্দ্র করে কম ভ্রমণযোগ্য দূরত্ব তৈরি করে। তাই বিমানের জ্বালানি সাশ্রয়ী হয়। পাশাপাশি যাত্রার সময় কমে।

গ্রেট সার্কেল রুট পৃথিবীকে কেন্দ্র করে কম ভ্রমণযোগ্য দূরত্ব তৈরি করে, ছবি: ফ্রিপিক
বায়ুমণ্ডল ও পরিবেশ
বিমান চলাচল করার ক্ষেত্রে কম নটিক্যাল মাইল অতিক্রম করার জন্য সাধারণত বিষুব রেখাকে এড়িয়ে উত্তর গোলার্ধের সর্বোচ্চ উত্তর বা দক্ষিণ গোলার্ধের সর্বনিম্ন দক্ষিণ দিক দিয়ে যাতায়াত করে। এ ক্ষেত্রেও সমুদ্রের সম্ভাব্য বিপদগুলো অর্থাৎ যেখানে ঢেউয়ের উচ্চতা বেশি সেই স্থানগুলো এড়িয়ে চলা হয়।
কিছু রুট বায়ুর গতির কারণে আরও উপযুক্ত হতে পারে, যেমন প্যাসাট উইন্ড ও বিমানকে সুবিধাজনক অবস্থানে রাখতে সাহায্য করতে পারে। আকাশযাত্রায় বিমানটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উচ্চতায় উড়তে পারে এবং বিভিন্ন বাতাসের গতির ওপর নির্ভর করে, যা কখনও কখনও উড়ন্ত পথ বাঁকা হতে সাহায্য করে।

বিমানের যাত্রাপথ বিপদমুক্ত করার জন্য স্থল ভাগের উপর দিয়ে হয়, ছবি: সিম্পল ফ্লাইং
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে সব বিমান যাত্রার সময় রাশিয়ার নর্দান হেমিস্ফিয়ার হয়ে ইউরোপের উপর দিয়ে যায়। কারণ যাত্রাপথে বিমান সম্ভাব্য বিমানবন্দরের ছুঁয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। যাতে কোনরকম দুর্ঘটনা সম্মুখীন হলে জরুরি অবস্থায় অবতরণ করা যায়।
সহজ করে বললে বিমানের যাত্রাপথ বিপদমুক্ত করার জন্য স্থল ভাগের উপর দিয়ে হয়। এ ক্ষেত্রে বিমানে যাত্রা পথ যতটা সম্ভব আটলান্টিক মহাসাগরকে এড়িয়ে চলে। একইভাবে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে যাওয়ার সময় বিমান উত্তর আমেরিকা হয়ে স্থল ভাগ অতিক্রম করে যাত্রা করে।
তথ্যসূত্র: ফোর্বস ম্যাগাজিন ও সিম্পল ফ্লাইং