Home বাণিজ্য মুনাফা বাড়িয়ে ‘প্রবাসীবান্ধব’ সঞ্চয় বন্ড

মুনাফা বাড়িয়ে ‘প্রবাসীবান্ধব’ সঞ্চয় বন্ড

ইকবাল হোসেন
১৩২ views

প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সঞ্চয় বন্ডে বিনিয়োগ আকর্ষণীয় করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য ‘জাতীয় সঞ্চয় স্কিম’-এর আওতাভুক্ত ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড ও ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের মতো ‘ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড’ এ বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা এবং সময়সীমাও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সঞ্চয় বন্ডের মুনাফার হারও বাড়নো হচ্ছে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতাধীন তিন ধরনের বন্ড প্রচলিত রয়েছে। এগুলো হচ্ছে ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড এবং ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড।

মুনাফার হার
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) সম্প্রতি তিন বন্ডের মুনাফার হার বৃদ্ধিবিষয়ক প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের কাছে উপস্থাপন করেছে। অনুমোদন পাওয়ার পর আইআরডি এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করবে।

বর্তমানে মেয়াদান্তে সবচেয়ে বেশি ১২ শতাংশ মুনাফা ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে। এটি পাঁচ বছর মেয়াদি। তবে ছয় মাস অন্তর মুনাফা তোলার সুযোগ রয়েছে। ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড তিন বছর মেয়াদি। মেয়াদান্তে এটির মুনাফার হার সাড়ে ৬ শতাংশ। আর ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ডও তিন বছর মেয়াদি, মেয়াদান্তে যার মুনাফার হার সাড়ে ৭ শতাংশ। মেয়াদের আগে ভাঙালে মুনাফা আরও কম। তিন বন্ডেরই বিনিয়োগের বিপরীতে পাওয়া মুনাফা করমুক্ত।

ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে ১৫ লাখ টাকা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফা ১২ শতাংশ হলেও ১৫ লাখ ১ টাকা থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ১১ শতাংশ, ৩০ লাখ ১ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ এবং ৫০ লাখ ১ টাকা থেকে ১ কোটি পর্যন্ত ৯ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়।

যেসব সুবিধা মিলবে
মুনাফার হার বৃদ্ধির উদ্যোগের আগে বন্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন কিছু সুবিধা চালু করেছে সরকার। যেমন গত ১ ডিসেম্বর থেকে ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে এক মেয়াদে বিনিয়োগ ও দুই মেয়াদে বর্তমানে পুনর্বিনিয়োগ করা যায়। আর ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড ও ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে এক মেয়াদে বিনিয়োগ ও চার মেয়াদে পুনর্বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।

বিদেশি মালিকানাধীন শিপিং বা এয়ার ওয়েজ কোম্পানির বিদেশের অফিসে চাকরিরত অনাবাসী বাংলাদেশি নাবিক (মেরিনার), পাইলট ও কেবিন ক্রুদের জন্য ওয়েজ আর্নার বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল আগের সরকার। গত ডিসেম্বর থেকে নতুন সরকার আবার তা চালু করে। শুধু তা-ই নয়, এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমাও রাখা হয়নি, অর্থাৎ বর্তমানে যত খুশি ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগ করা যায়।

আইআরডি জানায়, প্রবাসী আয় দিয়ে একবার কেউ ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড এক মেয়াদে কিনলে পরপর দুই মেয়াদের জন্য পুনর্বিনিয়োগ সুবিধা দেওয়া হবে। অর্থাৎ তিন মেয়াদে মোট ১৫ বছরের জন্য বিনিয়োগ করা যাবে।

কোথায় থেকে কেনা যায়?
বাংলাদেশ ব্যাংক, এক্সচেঞ্জ হাউস, এক্সচেঞ্জ কোম্পানি ও তফসিলি ব্যাংকের বিদেশি ও অনুমোদিত ডিলার (এডি) শাখায় এসব বন্ড কেনা যায়। বন্ডের বিপরীতে ঋণ নেওয়ার সুযোগও আছে। এ ছাড়া বন্ড কিনতে ফরেন কারেন্সি বা বৈদেশিক মুদ্রায় (এফসি) হিসাব থাকারও বাধ্যবাধকতা নেই। এ বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী (ওয়েজ আর্নার) নিজে।

ওয়েজ আর্নার তার মনোনীত ব্যক্তির নামেও এ বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত সরকারের কর্মচারীরাও বিনিয়োগ করতে পারেন ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে। এতে বিনিয়োগ করলে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মৃত্যুঝুঁকির সুবিধা রয়েছে।

মেয়াদ পূর্তির আগে বন্ডধারীর মৃত্যু হলে তার মনোনীত নমিনি বা ব্যক্তিকে যে আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়, সেটাই হচ্ছে মৃত্যুঝুঁকির সুবিধা। মৃত্যুঝুঁকির সুবিধা অবশ্য ২০ লাখ টাকার বেশি দেওয়া হয় না এবং বন্ডধারীর বয়সও হতে হয় ৫৫ বছরের নিচে। নমিনিকে মৃত্যুঝুঁকির সুবিধাটি নিতে গেলে বন্ডে বিনিয়োগকারী মারা যাওয়ার তিন মাসের মধ্যে আবেদন করতে হয়। বন্ডধারীর মৃত্যুর পর বন্ডের মেয়াদপূর্তিতে আসল ও মুনাফা পাবেন তার উত্তরাধিকারীরা।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা (উপ-সচিব) জাকির হোসেন হ্যালো বাংলাদেশকে বলেন, ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট ছাড়া বাকি দুই বন্ডের বিপরীতে মুনাফার হার বাজারদরের চেয়ে অনেক কম। আইআরডি বিষয়টা দেরিতে হলেও অনুধাবন করতে পেরেছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেট-ঘাটতি মেটাতে সরকার তিন বন্ডসহ সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। 

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ