বসন্তের শেষ লগ্নে আমরা। আর কিছুদিন পরে গ্রীষ্মকাল। আবহাওয়া অফিস ইতিমধ্যে সতর্ক করেছে যে এ বছর দেশের তাপমাত্রা অনেক বাড়বে। ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসও ছাড়াতে পারে। এমন গরমে ঘর যেন ওভেন হয়ে ওঠে! বাইরের তাপমাত্রা যেমনই থাকুক, ঘরের ভেতরে শান্তি ও স্বস্তি বজায় রাখা খুবই জরুরি। বিশেষ করে আমাদের মতো গরম-আর্দ্র আবহাওয়ার দেশে, ঘর ঠান্ডা রাখার কিছু কার্যকর উপায় জানা থাকা দরকার।
সঠিকভাবে পর্দা ব্যবহার করুন
রোদ সরাসরি ঘরের মধ্যে ঢুকলে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তাই দিনের সবচেয়ে গরম সময়টায় (দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা) মোটা, গাঢ় রঙের পর্দা দিয়ে জানালা ঢেকে দিন। হিট-ব্লকার বা থার্মাল পর্দা ব্যবহার করলে আরও ভালো ফল পাবেন।
বাতাস চলাচলের পথ তৈরি করুন
ঘরের ভেতরে বাতাস আটকে থাকলে ঘরময় উষ্ণতা জমে। তাই জানালা ও দরজা এমনভাবে খুলে রাখুন যেন বাতাস সহজে ঢুকতে ও বের হতে পারে। ভেন্টিলেশন যত ভালো, ঘর তত ঠান্ডা থাকবে।সকাল-বিকেলের ঠান্ডা বাতাস ঢুকতে দিন। চাইলে দরজার নিচে বা জানালায় ছোট ফ্যান বসিয়ে ক্রস ভেন্টিলেশন তৈরি করতে পারেন। এতেও ঘর ঠান্ডা হবে।
ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি কম ব্যবহার করুন
টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার কিংবা ওভেন— এসব যন্ত্র চলার সময় তাপ ছড়ায়। চেষ্টা করুন দুপুরের সময় এসব যন্ত্র কম ব্যবহার করতে। দুপুরে রান্নার সময় গ্যাসের চুলার বদলে ইনডাকশন কুকার ব্যবহার করতে পারেন।

ডেকোরেশনে সাদা বা নীল অথবা যেকোনো কুল টোন ব্যবহার করলে ঘরের পরিবেশ ঠান্ডা থাকে, ছবি: ফ্রিপিক
ঘরের ছাদ ও দেয়ালে প্রতিফলক রঙ ব্যবহার করুন
ছাদ বা দেয়ালে হালকা রঙ (বিশেষ করে সাদা বা হালকা নীল) সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে, ফলে ঘরে তাপ কম ঢোকে। ছাদে পানির ট্যাঙ্কের নিচে ঘন ছায়া তৈরি করুন। ছাদে সবুজ গাছপালা বা গ্রিন রুফ করলে তাপমাত্রা অনেকটা কমে।
ঘরেই তৈরি করুন “কুলার”
একটি সাধারণ ফ্যানের পেছনে বা সামনে বরফের পানি ভর্তি বোতল বা বাটি রেখে দিন। ব্যস! তৈরি হয়ে সাশ্রয়ী এয়ার কুলার। ফ্যানের বাতাস বরফ ছুঁয়ে ঠান্ডা হয়ে ঘরে ছড়িয়ে পড়বে।

এভাবে ফ্যানের পিছনে বা চাইলে সামনে বরফ রেখে তৈরি করতে পারেন ঘরোয়া এয়ার কুলার, ছবি: লাইফহ্যাকার
মেঝে ঠান্ডা রাখার কৌশল
টাইলস বা মার্বেলের মেঝে গরমে ঠান্ডা থাকে। কিন্তু যদি মেঝে সিমেন্ট বা কাঠের হয়, তাহলে কুলিং ম্যাট বা পাতলা হালকা রঙের কার্পেট ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে শীতলপাটি বেশ ভালো কাজ করবে।
গাছপালা লাগান
ঘরের বারান্দা, জানালা বা ছাদে টবে গাছ লাগান। গাছ শুধু অক্সিজেন দেয় না, বরং আশপাশের পরিবেশ ঠান্ডাও রাখে। স্পাইডার প্ল্যান্ট, মানি প্ল্যান্ট, অ্যালোভেরা — ঘরের তাপমাত্রা কমাতে কার্যকর।

গরমে ঘর সাজান গাছ দিয়ে, ছবি: হোম ট্রায়াঙ্গল
সঠিক কাপড় বেছে নিন
ঘরের শীতলতা রক্ষায় আপনি কী ধরনের বিছানার চাদর, পর্দা বা কুশন কাভার ব্যবহার করছেন, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। হালকা সুতির কাপড় গরমে আরাম দেয় এবং বাতাস চলাচল সহজ করে।
রাতের ঠান্ডা ধরে রাখুন
রাতের ঠান্ডা বাতাসকে ঘরে ধরে রাখতে জানালা খোলা রেখে ঘর ঠান্ডা করুন। দুপুরের আগে আগে জানালা বন্ধ করে দিন, যাতে গরম বাতাস ঢুকতে না পারে।
ছাদে পানি ছিটিয়ে দিন
গরম দিনে ছাদে পানি ছিটিয়ে দিলে তা বাষ্প হয়ে ছাদ ঠান্ডা রাখে, ফলে ঘরের তাপমাত্রাও কিছুটা কমে যায়।
সবসময় এসি বা কুলার ব্যবহার করাও সম্ভব নয়— না খরচের দিক থেকে, না পরিবেশগত কারণে। তাই গরমে ঘর ঠান্ডা রাখার জন্য এসব প্রাকৃতিক ও সাশ্রয়ী উপায় আমাদের জীবনযাত্রায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। একটু চেষ্টা করলে গরমেও ঘরের মধ্যে আপনি উপভোগ করতে পারেন শীতল ও স্বস্তিকর পরিবেশ।