বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, সাময়িক মজুতদারির জন্য চালের বাজার অস্থিতিশীল। মনিটরিং করা হচ্ছে। খুব শিগগির চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) সকালে তেজগাঁও বেগুনবাড়ি দীপিকার মোড়ে নিম্নআয়ের পরিবারের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে শুধু স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, চালের বাজারে মূল্যবৃদ্ধির সমস্যা স্বীকার করতে হবে। ভোক্তা পর্যায়ে বিশেষ করে নাজিরশাইল ও মিনিকেট—এ দুটি চালের দাম বেশ খানিকটা বেড়েছে। পাইকারি পর্যায়ে যে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, তার চেয়ে খুচরা পর্যায়ে অনেক বেশি দাম বেড়েছে। এর কারণ খোঁজার চেষ্টা চলছে। সার্বিকভাবে এই মূল্যবৃদ্ধি অযৌক্তিক মনে হয়েছে।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী বাজারে চালের ঘাটতি নেই। সরকারের চালের মজুত, স্থানীয় উৎপাদন ও সংগ্রহে ঘাটতি নেই। আমনের ভরা মৌসুম চলছে; এখন চালের বাজার বেড়ে যাওয়ার যৌক্তিক কারণ নেই। এটা সাময়িক মজুতদারির কারণে হয়েছে।
চালের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সরকার আমদানি উদারীকরণের নীতিতে যাচ্ছে বলে জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আমদানি উদার করতে গত দুই দিন আমরা গভর্নর, খাদ্য উপদেষ্টা, টিসিবি ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাজারে সরবরাহব্যবস্থার উন্নতিতে আপাতত আমদানিকেন্দ্রিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
শেখ বশিরউদ্দীন আরও বলেন, বিপুল পরিমাণে চাল আমদানির প্রস্তুতি চলছে। তাঁর আশা, এতে স্থানীয় বাজারে দাম কমবে। আলুর ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা দেখা গেছে। আলুর মূল্যবৃদ্ধির পরে আমদানি উদার করলে আলুর দাম কমে আসে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, প্রথমে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিতরণ কার্যক্রমে যে নৈরাজ্য ও দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে তা স্বীকার করে নেওয়া দরকার ছিল। তা আমরা করেছি। সেটা দূর করতে ডিজিটালাইজ করে অনিয়ম দূর করার কাজ করছি।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, এরইমধ্যে ৬৩ লাখ স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। শুধু বিতরণ কার্যক্রম ন্যায়ভিত্তিক না, ক্রয় কার্যক্রমকেও আরও বেশি স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক করতে চাই। কাগুজে ব্যবস্থার পরিবর্তে স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে এখন থেকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
টিসিবির কার্যক্রম বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টিসিবি মোট ১২ হাজার কোটি টাকার পণ্য ক্রয় করে। এতে সরকারি ভর্তুকি সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। অতএব টিসিবি একটি বড় ক্রেতা। টিসিবির ক্রয় কার্যক্রমে আমরা অধিক সংখ্যক ব্যবসায়ীকে সংযুক্ত করতে চাই। ১২ হাজার কোটি টাকার পণ্য ক্রয় হতে যদি ১ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করতে পারি তাহলে আরো বেশি সংখ্যক উপকারভোগীদের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবির পণ্য পৌঁছে দিতে পারবো।
আলুর বাজার প্রসঙ্গে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, এ বছরের অভিজ্ঞতায় আগামী বছরের জন্য সরকারিভাবে আলু মজুত করা হবে। সংরক্ষণাগারে আলু সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আমদানি করা আলু ও দেশে উৎপাদিত আলু সেখানে সংরক্ষণ করা হবে। আগামীতে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডধারী একজন গ্রাহক ভোজ্যতেল ২ লিটার ২০০ টাকা, মশুর ডাল ২ কেজি ১২০ টাকা এবং ১ কেজি চিনি ৭০ টাকায় কিনতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোস্তফা ইকবাল বক্তব্য রাখেন। নবনিযুক্ত টিসিবি চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. ফয়সাল আজাদও এসময় উপস্থিত ছিলেন।