আগামী ৩ বছরের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও ক্লাউড কম্পিউটিং খাতে ৫০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করার ঘোষণা দিয়েছে চীনের টেক জায়ান্ট আলিবাবা। এক বিবৃতিতে আলিবাবা জানায়, ‘ক্লাউড কম্পিউটিং ও এআই অবকাঠামো খাতে আগামী তিন বছরে অন্তত ৩৮০ বিলিয়ন ইউয়ান (৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) বিনিয়োগ করবে আলিবাবা।’
সংস্থাটি আরও জানায়, তারা দীর্ঘ মেয়াদী কারিগরি উদ্ভাবনের প্রতি অঙ্গীকার থেকে এই কৌশল হাতে নিয়েছে। একই সঙ্গে এআই’র ব্যবহারে প্রতিষ্ঠানকে সামনে এগিয়ে নিতেও তারা বদ্ধপরিকর। তবে এই তহবিল কিভাবে বিতরণ করা হবে অথবা সুনির্দিষ্টভাবে কি কি প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে, সে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।
গত সপ্তাহে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং। দেশের অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের অবদানের প্রশংসা করেন তিনি। দেশের অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো সমাধানযোগ্য বলেও জানান তিনি। ওই বৈঠকে আলি বাবার সহ-প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেন।
২০২০ সালে আর্থিক খাত নিয়ে সরাসরি সমালোচনা করার পর ‘গা ঢাকা’ দিতে বাধ্য হন চীনা এই ধনকুবের। দীর্ঘ সময় লোকচক্ষুর আড়ালে থাকার পর ১৭ ফেব্রুয়ারি চীনের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শি’র বৈঠকে জ্যাক মাও উপস্থিত হন। আলিবাবার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কোনো আনুষ্ঠানিক পদে না থাকলে জ্যাক মা এখনো একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব।
শি’র সঙ্গে একই বৈঠকে জ্যাক মার যোগদানের বিষয়টিকে ‘উল্লেখযোগ্য’ ঘটনা হিসেবে মনে করছেন বিশ্লেকরা। এর মাধ্যমে চীনের অর্থনীতিতে জ্যাক মা’র ‘পুনর্বাসন’ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে মনে করেন তারা।
এ বছরের শুরু থেকেই চীনের প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে। সম্প্রতি চীনের সবচেয়ে বড় অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্ম আলিবাবার শেয়ারের দাম গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

চীনা টেক জায়ান্ট আলিবাবা গ্রুপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা, ছবি: বিবিসি
জানা গেছে, আগামী তিন বছরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) জন্য অবকাঠামো নির্মাণ, ডাটা সেন্টারসহ এআই সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন খাতে উন্নয়নে এই অর্থ বিনিয়োগ করা হবে। এই বিশাল বিনিয়োগ ই-কমার্স জায়ান্টটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে নেতৃত্বের স্থানে আসার উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে স্পষ্ট করে তুলেছে।
মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন বলছে, এমন এক সময়ে এই বিষয়ে প্রকাশ্যে এল যার মাত্র কয়েক দিন আগেই, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মাসহ দেশটি শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠকে বসেছিলেন।
জ্যাক মা প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানিটি এআই ও ক্লাউড কম্পিউটিং নেটওয়ার্কের জন্য গত এক দশকের তুলনায় আরও বেশি ব্যয় করার পরিকল্পনা করছে। আলিবাবা চায়, ক্রমবর্ধমান কম্পিউটিং শক্তির প্রয়োজনীয়তা মেটাতে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান অংশীদার হতে, যারা এআই মডেল তৈরি ও বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করছে।
২০২০ সালে শুরু হওয়া সরকারি নিয়ন্ত্রণের ধাক্কা সামলে উঠতে আলিবাবা ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দু পুনর্নির্ধারণ করছে। যেখানে মূলত ই-কমার্স ও এআইকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে, কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এডি উ ঘোষণা করেন, আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স বা সাধারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এজিআই) এখন তাদের প্রধান লক্ষ্য। এআই প্রতিযোগিতায় এরই মধ্যে ওপেনএআই ও মাইক্রোসফট করপোরেশন থেকে অ্যালফাবেট ইনকর্পোরেটেডের মতো মার্কিন টেক জায়ান্টরা এগিয়ে আছে।
মেটা প্ল্যাটফর্মস ইনকর্পোরেটেড থেকে শুরু করে আমাজন ডটকম ইনকর্পোরেটেড পর্যন্ত বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এআই পরিষেবার জন্য প্রয়োজনীয় ডাটা সেন্টার তৈরি ও পরিচালনায় কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এটি প্রযুক্তির ভবিষ্যতের প্রতি তাদের আস্থার প্রতিফলন।
ওয়াল স্ট্রিটের বিশ্লেষকদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে যে, এই বিশাল কম্পিউটিং ক্ষমতার চাহিদা আসলেই থাকবে কিনা, বিশেষ করে যখন চীনা স্টার্টআপ ডিপসিক তুলনামূলক কম ব্যয়ে একটি মডেল তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। মাইক্রোসফট চলতি বছরে এআই ডাটা সেন্টারের জন্য ৮০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করার পরিকল্পনা করছে, আর মেটা ২০২৫ সালে এ খাতে ৬৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
তবু বিনিয়োগকারীরা আলিবাবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় প্রতিযোগিতার প্রত্যয়কে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। উ-র এজিআই-সংক্রান্ত মন্তব্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ আলিবাবার মূল ব্যবসা দীর্ঘদিন ই-কমার্স কেন্দ্রিক ছিল।
২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত আলিবাবার বাজারমূল্য ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। জ্যাক মা সম্প্রতি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের আহ্বানে এক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেন। এই সম্মেলনে চীনের প্রযুক্তি ও ব্যবসায়ের শীর্ষ ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত ছিলেন, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতের উদ্যোক্তারা। এটি আলিবাবার প্রতি সরকারের নতুন মনোভাব ও প্রতিষ্ঠানটির পুনরুত্থানের ইঙ্গিত দেয়।
সূত্র: ব্লুমবার্গ ও এএফপি