বিশ্বব্যাপী শিল্পখাতে রোবটের ব্যবহার বাড়ছে। গত কয়েক বছরে উন্নত দেশগুলোতে শিল্পখাতে রোবট বিপ্লব হয়েছে। আর এ বিপ্লবের নেতৃত্ব দিচ্ছে এশিয়া। এ মহাদেশের অনেক দেশ অটোমেশন এবং উন্নত উৎপাদন প্রযুক্তিতে প্রচুর বিনিয়োগ করছে। শিল্পখাতে রোবট ব্যবহারে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে অর্ধেকের বেশি এশিয়ার। তালিকার শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। এছাড়া সিঙ্গাপুর, জাপান, চীন, হংকং ও তাইওয়ান এই তালিকায় রয়েছে৷
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রোবটিকসের (আইএফআর) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। গত সপ্তাহে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী উৎপাদন খাতে ২০১৬ সালেও প্রতি ১০ হাজার কর্মরত ব্যক্তির মধ্যে রোবট ছিল ৭৪টি। ২০২০ সালে এ সংখ্যা ছিল ১১৩। আর ২০২৪ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫১টি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালেই দক্ষিণ কোরিয়া ১০ হাজার শ্রমশক্তিপ্রতি ৮৫৫টি রোবট প্রতিস্থাপন করে। ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০১২টিতে। মূলত ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক শিল্পে এসব রোবট বেশি কাজ করছে। দক্ষিণ কোরিয়া উন্নত রোবট শিল্পের জন্য পরিচিত। স্যামসাং, এলজি, হুন্দাই ও কিয়ার মতো অনেক বড় ইলেকট্রনিক্স ও স্বয়ংক্রিয় ব্র্যান্ডের প্রধান কেন্দ্র দেশটিতে।
আইএফআরের তথ্য মতে, দক্ষিণ কোরিয়া বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর কারখানা রোবটের মাধ্যমে পরিচালনা করে। বর্তমানে দেশটির সব শিল্প কারখানায় প্রায় ৩০ শতাংশ রোবট ব্যবহৃত হয়। ইলেকট্রনিক্স উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় ২৬ শতাংশ।
ছবি: ফ্রীপিক
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সাল থেকে প্রতি বছর গড়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় রোবটের ব্যবহারের হার বেড়েছে ৫ শতাংশ। গোটা বিশ্বে গত সাত বছরে কাজের ক্ষেত্রে গড় রোবটের ব্যবহার হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। দেশটিতে প্রতি দশ হাজার কর্মীর মধ্যে রোবটের ব্যবহার বেড়েছে ৭৪ থেকে ১৬২ ইউনিট। বিভিন্ন শিল্প খাতে রোবট ব্যবহার করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির হাসপাতাল থেকে শুরু করে রেস্তোরাঁ পর্যন্ত সবখানেই বিভিন্ন মেশিন চালাতে ভূমিকা রাখছে রোবট। এ বছরের শুরুর দিকে দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্য, শিল্প ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় ‘ফোর্থ ইন্টেলিজেন্ট রোবট বেসিক প্ল্যান’ ঘোষণা করে, যেখানে দশকের শেষ নাগাদ সরকারি ও বেসরকারি খাতে ২৪০ কোটি ডলার বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে দেশটি।
শিল্পখাতে রোবট ব্যবহারে শীর্ষ দেশের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুর। দক্ষিণ কোরিয়াকে অনুসরণ করে ২০২৪ সালে সিঙ্গাপুর ১০ হাজার শ্রমশক্তিপ্রতি ৭৩০টি রোবট প্রতিস্থাপন করেছে। কীভাবে কম জনসংখ্যা দিয়ে প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্মক্ষেত্রে সর্বোচ্চ রোবট ব্যবহার করা যায়, সে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে সিঙ্গাপুর।
শিল্পখাতে রোবট ব্যবহারে শীর্ষ দেশের তালিকায় এরপর রয়েছে জার্মান (৩য়) ও জাপান (৪র্থ)। জাপান ও জার্মান মূলত গাড়িশিল্পের জন্য বিখ্যাত। জার্মানিতে প্রতি ১০ হাজার শ্রমশক্তিপ্রতি ৪১৫টি ও জাপানে ৩৯৭টি রোবট ব্যবহৃত হয়। বিশ্বব্যাপী রোবট তৈরির দিক থেকে এগিয়ে জাপান। বিশ্বের অর্ধেক রোবটই সরবরাহ করে জাপান।
রোবটের ঘনত্বের দিক থেকে খানিকটা পিছিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ২৮৫টি (১০ম)। তবে ভবিষ্যতের জন্য বড় লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে চীন। তাদের লক্ষ্য ছিল ২০২৫ সালের মধ্যে রোবট ঘনত্বের দিক থেকে শীর্ষ ৩ দেশের মধ্যে স্থান করে নেওয়া। ২০১৩ সালে চীনে প্রতি ১০ হাজারে কর্মরত রোবট ছিল ২৫টি, ২০১৭ সালে তা বেড়ে হয় ৯৭, আর ২০২৪ তা ৩৯২টি (৫ম)। শিল্পখাতে রোবট ব্যবহারে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে এরপর রয়েছে সুইডেন (ষষ্ঠ), হংকং (৭ম), সুইজারল্যান্ড (৮ম) ও তাইওয়ান (৯ম)। প্রতি ১০ হাজার শ্রমশক্তিতে সুইডেনে ৩৪৩টি, হংকংয়ে ৩৩৩টি, সুইজারল্যান্ডে ২৯৬টি ও তাইওয়ানে ২৯২টি রোবট ব্যবহৃত হয়।
