Home সফল মুখ সাফল্যের গল্পে অনুপ্রাণিত হয়ে সফল ফ্রিল্যান্সার দিদার

সাফল্যের গল্পে অনুপ্রাণিত হয়ে সফল ফ্রিল্যান্সার দিদার

ইকবাল হোসেন
৬৬৭ views

দিদারুল ইসলাম ওয়েবসাইট ডিজাইনিং ও ডেভেলপিং সেক্টরে কর্মরত একজন ফ্রিল্যান্সার। নিজের দৃঢ় মনোবলের মাধ্যমে অনেক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে আজ তিনি একজন সফল ফ্রিল্যান্সার। শুরুটা কঠিন হলেও লেগে থাকার মানসিকতা তার  সাফল্য এনে দিয়েছে। এ যাত্রায় বিভিন্ন সাকসেস স্টোরি দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছেন। হ্যালো বাংলাদেশের সঙ্গে আলাপচারিতায় তার ফ্রিল্যান্সার হয়ে ওঠার  বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার ইকবাল হোসেন। 

ফ্রিল্যান্সিং শুরুর গল্পটা বলুন?
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেছিলাম অনেকটা অনিচ্ছা আর সন্দেহ নিয়ে। এক বন্ধু ওয়েবসাইট ডিজাইনের কোর্স করছিল,  সে আমাকেও কোর্সটি করার জন্য বারবার বলছিল, অতটা গুরুত্ব দেয়নি। এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর সময়টা অবসরে কাটছিল, ভাবছিলাম কিছু একটা শিখে রাখি অন্তত। তাই ফেনীতে একটা ওয়েবসাইট ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোর্সে ভর্তি হলাম। আস্তে আস্তে শেখা শুরু করলাম। প্রথমে খুব বিরক্ত লাগতো। কোড নিয়ে কাজ করতে হতো। অনেকবার ভেবেছি ছেড়ে দেব। কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষার পর হাতে সময় ছিল অনেক কিছু করার ছিল না, তাই লেগে ছিলাম। পরে আস্তে আস্তে ওয়েবসাইট ডিজাইন করতে ভালো লাগছিল। কাজ শিখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় মোটিভেশন ছিল সাকসেস স্টোরি দেখা। দেখছিলাম যে ফ্রিল্যান্সিং করে আসলেই উপার্জন করা সম্ভব। এই থেকে মোটিভেশন পাওয়ায় কাজের প্রতি মন দিতে লাগলাম। 

শুরুটা কত কঠিন ছিলো?
ফ্রিল্যান্সিংয়ের শুরুটা বেশিরভাগের জন্যই কঠিন হয়ে থাকে। কারণ এখানে ধৈর্য, স্কিল ডেভেলপমেন্ট এবং ক্লায়েন্ট পাওয়ার কৌশল – এই তিনটি জিনিস খুব গুরুত্বপূর্ণ।  একাউন্ট খুলে অপেক্ষা করছিলাম কখন কাজ পাব। কোর্স চলাকালীন অবস্থায় মার্কেটপ্লেস ফাইভার থেকে ১০ ডলারের একটা প্রজেক্ট পেয়েছিলাম। কিন্তু যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে না পারায় আমার প্রজেক্টটা বাতিল হয়ে যায়। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। তখন ভাবছিলাম ফ্রিল্যান্সিং হয়তো আমাকে দিয়ে হবে না। হতাশা নিয়ে আবার চেষ্টা করতে থাকি। পরে ২০২০ সালের রমজান মাসে ১৫ ডলারের আরেকটা প্রজেক্ট পাই ফাইভার থেকে। প্রজেক্টটা পাওয়ার পর প্রায় এক সপ্তাহের মতো ঠিক করে  ঘুমাতে পারিনি। ঘুমের মধ্যেই ভাবতাম প্রজেক্টটা কিভাবে কমপ্লিট করা যায়। ওই প্রজেক্টটা  ছিল দুবাইয়ের এক ক্লায়েন্টের ল্যান্ডিং পেজ   ওয়েবসাইট। আল্লাহর অশেষ রহমতে ধীরে ধীরে প্রজেক্টটা সম্পন্ন করতে পেরেছিলাম। পরে ক্লায়েন্ট আমাকে পাঁচ ডলার এক্সট্রা টিপস দিয়েছিলেন। ভীষণ খুশি  হয়েছিলাম। তখন বুঝতে পারি আসলেই ফ্রিল্যান্সিং করে ঘরে বসে টাকা উপার্জন  করা যায়। এভাবেই আমার ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু হয়।

কোন ফ্লাটফর্মে কি ধরনের কাজ করেন?
আমি আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেস ফাইভার ও আপওয়ার্ক এ ওয়েবসাইট ডিজাইনার এন্ড ডেভলপার হিসেবে করে থাকি।  এই দুটি ফ্লাটফর্মে কাজ করছি গত চার বছর ধরে। 

ফ্রিল্যান্সিং এ অনুপ্রাণিত করেছেন এমন কেউ কি আছেন?
আমি যখন শুরু করি নাসির নামে একজন ফ্রিল্যান্সার ছিলেন।  তাকে ফলো করতাম। তার বিভিন্ন এক্টিভিটি দেখতাম। তার আর্নিং; কাজের দক্ষতাগুলো শুনতাম। এ থেকে অনেক মোটিভেশন নিতাম। আর আমাদের ইনস্টিটিউটের কয়েকজন সিনিয়র ভাই ছিল যারা ফ্রিল্যান্সিং করে ঘরে বসে টাকা উপার্জন  করতেন। এগুলা শুনে মোটিভেট হতাম। ভেতর থেকে কাজ করার আগ্রহ জাগত, তারা যদি পারে আমি কেন পারব না। ওদের থেকে অনুপ্রেরণা পেতাম।

কেন ফুলটাইম ফ্রিল্যান্সিং করছেন?
স্বাধীনতা ও ফ্লেক্সিবিলিটি ফ্রিল্যান্সিং মানে নিজেই নিজের বস। কখন কাজ করবে, কার জন্য করবে, কতটা করবে – সব সিদ্ধান্ত আমার। অফিসের ৯-৫ রুটিনের মধ্যে বাঁধা পড়তে হয় না। নিজের শখ, পরিবার, এবং ব্যক্তিগত জীবনের জন্য বেশি সময় পাওয়া যায়। একটা চাকরিতে ইনকাম ফিক্সড, কিন্তু ফ্রিল্যান্সিংয়ে সঠিক স্কিল আর স্ট্র্যাটেজি থাকলে ইনকাম বাড়ানোর সুযোগ অনেক বেশি। চাহিদাসম্পন্ন স্কিল থাকলে মাসে হাজার ডলার বা তার বেশি আয় করা সম্ভব। কাজের পরিমাণ ও ক্লায়েন্ট বাড়িয়ে ইনকাম স্কেল বাড়ানো যায়। ফ্রিল্যান্সিং থেকে পাওয়া ইনকাম দিয়ে প্যাসিভ ইনকাম বা বিজনেস শুরু করার সুযোগ থাকে।

d2 3

দিদারুল ইসলাম

কিভাবে দক্ষতা অর্জন করে থাকেন?
ফ্রিল্যান্সিংয়ে দক্ষতা অর্জন করার অনেক উপায় রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইউটিউব। আমার জন্য ইউটিউব সবচেয়ে বড় গাইড হিসেবে কাজ করছে। এমন অনেক ধরনের কাজ আছে যেটা আমি করিনি, কিন্তু ইউটিউব আমাকে সাহায্য করছে এটা কিভাবে করতে হবে আর এটা কি কাজ। 

আমাদের অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের কাজ ক্লাইন্ট অফার করে কিন্তু সঠিক গাইড লাইন না থাকার কারণে কাজগুলো ডিক্লাইন করে দেই। এমন অনেক ধরনের কাজ করেছি যেটা আগে কখনো করিনি কিন্তু ক্লাইন্ট থেকে কাজটা নিয়েছি। পরে ইউটিউব ও গুগল বিশ্লেষণ করে কাজটা সঠিকভাবে কমপ্লিট করেছি ক্লায়েন্ট সাটিসফেকশনসহ। তাই দক্ষতা অর্জন নিয়ে বলতে হয়- নতুন কিছু শেখার জন্য সেরা প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে অনলাইন।

ক্লায়েন্টদের খুশি রাখতে কয়েকটি টিপস বলুন?
ক্লায়েন্টদের খুশি রাখার সেরা টিপস ক্লায়েন্টের চাহিদা ভালোভাবে বোঝো। ক্লায়েন্ট যা চায়, সেটাই যদি বুঝতে না পারো, তাহলে কাজ ভালো হলেও সে সন্তুষ্ট হবে না।  তাই কাজ শুরুর আগেই ক্লায়েন্টের চাহিদা পরিষ্কার করে নিতে হবে। প্রয়োজনে অতিরিক্ত প্রশ্ন করা, যাতে ভুল বোঝাবুঝি না হয়। যদি কোনো কিছু বুঝতে সমস্যা হয়, তাহলে ক্লায়েন্টের কাছ থেকে রেফারেন্স বা উদাহরণ চেয়ে যেতে হবে। ডেডলাইনের আগে কাজ শেষ করার চেষ্টা করা। ক্লায়েন্টের মেসেজের দ্রুত রিপ্লাই দিতে হবে, অন্তত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। চ্যাটে শ্রদ্ধাশীল ও পেশাদার আচরণ করতে হবে। একবার কাজ শেষ হলে ক্লায়েন্টের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।

ফ্রিল্যান্সিংয়ের সবচেয়ে ভালো ও খারাপ দিকগুলো কি?
ভালো দিক হচ্ছে- স্বাধীনতা ও ফ্লেক্সিবিলিটি। নিজের সময় মতো কাজ করা যায়, অফিসের ৯-৫ রুটিন নেই। যেখানে খুশি বসে কাজ করা যায়—বাসা, ক্যাফে, বা ট্রাভেল করতে করতেও। চাইলে নিজের পছন্দের ক্লায়েন্ট ও প্রজেক্ট বেছে নেওয়া যায়। চাকরির মতো নির্দিষ্ট বেতন নেই, যত বেশি দক্ষতা ও ক্লায়েন্ট তত বেশি আয়। ভালো স্কিল থাকলে মাসে এক থেকে ৫ হাজারের বেশি  উপার্জন করা সম্ভব। একাধিক সোর্স থেকে উপার্জন করা যায়—মার্কেটপ্লেস, ডাইরেক্ট ক্লায়েন্ট, এজেন্সি, কোর্স বিক্রি, ব্লগিং ইত্যাদি।

খারাপ দিক হচ্ছে- শুরুর দিকটা কঠিন ও অনিশ্চিত। প্রথম কাজ পাওয়া কঠিন, অনেকদিন ধৈর্য ধরে চেষ্টা করতে হয়। মার্কেটপ্লেসে অনেক প্রতিযোগিতা থাকে। স্থায়ী ইনকামের নিশ্চয়তা নেই, কখনো কাজ বেশি থাকে, কখনো কম। আয়ের অনিশ্চয়তা ও উপার্জন কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। এক মাসে ভালো উপার্জন হতে পারে, আবার পরের মাসে কমে যেতে পারে। নিয়মিত ক্লায়েন্ট না থাকলে উপার্জন কমে যেতে পারে। কাজের চাপ বেশি হতে পারে। ক্লায়েন্টদের সময়মতো কাজ ডেলিভারির জন্য কখনো অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হয়। একই সঙ্গে একাধিক প্রজেক্ট হ্যান্ডেল করা কঠিন হতে পারে। অনেক সময় ক্লায়েন্ট বেশি রিভিশন চাইতে পারে, যা বাড়তি চাপ তৈরি করে।

নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য আপনার পরামর্শ কি ?
নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সঠিক গাইডলাইন থাকাটা খুবই জরুরি, কারণ ভুল পথে হাঁটলে হতাশা আসতে পারে, আর সঠিক পথে হাঁটলে ফ্রিল্যান্সিং হতে পারে জীবন বদলে দেওয়ার ক্যারিয়ার। একদম শুরুতে দক্ষতা অর্জনের দিকে ফোকাস করতে হবে। অনেকেই মার্কেটপ্লেসে অ্যাকাউন্ট খুলেই কাজ খোঁজা শুরু করে, যা সবচেয়ে বড় ভুল।  প্রথম ২-৩ মাস শুধু একটা ভালো দক্ষতা অর্জনের পেছনে সময় দিতে হবে। একটা নির্দিষ্ট মার্কেটপ্লেস ফোকাস করলে ভালো করা যায়।  

আপনার ভবিষ্যত লক্ষ্য কি?
আমার ভবিষ্যৎ লক্ষ্য ফিন্যান্সিং নিয়ে সামনের বাকি পথটা এগিয়ে যাওয়া। একটা আইটি এজেন্সি খোলা আমার স্বপ্ন। যেখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবো। 

 

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ