বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারীর তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছেন অ্যালিস ওয়ালটন। তিনি রিটেইল জায়ান্ট ওয়ালমার্টের প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ওয়ালটনের মেয়ে। ২০২৪ সালে ওয়ালমার্টের শেয়ার দর সর্বকালের সর্বোচ্চে পৌঁছানোর সুবাদে অ্যালিস এখন বিশ্বের শীর্ষ ধনী নারী।
মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস- সম্প্রতি বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনী নারীর তালিকা প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা যায় ফ্রান্সের প্রসাধন ব্র্যান্ড ল’রিয়ালের উত্তরাধিকারী ফ্রাঁসোয়া বেটেনকোর্ট মেয়ার্সকে টপকে শীর্ষ স্থান দখল করেছেন অ্যালিস ওয়ালটন।
সম্পত্তির পরিমাণ
অ্যালিস ওয়ালটন এখন ১১২.৫ বিলিয়ন ১১ হাজার ২৫০ কোটি ডলার সম্পত্তির মালিক। অন্যদিকে ফ্রাঁসোয়া বেটেনকোর্টের সম্পত্তির পরিমাণ এখন ৭৪.৮ বিলিয়ন বা ৭ হাজার ৪৮০ কোটি ডলার। ফোর্বসের রিয়েল-টাইম ট্র্যাকার অনুযায়ী, সব মিলিয়ে অ্যালিস এখন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় ১৫তম অবস্থানে আছেন। এ তালিকায় ২০তম স্থানে আছেন ফ্রাঁসোয়া বেটেনকোর্ট মেয়ার্স। ২০২৪ সালে ওয়ালমার্টের শেয়ারের দাম ৭২ শতাংশ বেড়েছে; অন্যদিকে এ সময়ে ল’রিয়ালের শেয়ারের দাম কমেছে ১০ শতাংশ।
যেভাবে সম্পত্তির মালিক
গত এক দশকে ওয়ালমার্টের ২২ বিলিয়ন ডলারের বেশি শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে। তার পরও ওয়ালটনের উত্তরাধিকারীরা এখনো তাদের বাবার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির ৪৬ শতাংশ শেয়ারের মালিক। স্যাম ওয়ালটন ১৯৯২ সালে মারা যান।
ফোর্বসের প্রাক্কলন অনুযায়ী, পরিবারটির মালিকানাধীন ওয়ালটনের তিন-চতুর্থাংশ অ্যালিস ওয়ালটন আর তার সহোদর জিম ও রব ওয়ালটনের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। বাকি শেয়ারের অধিকাংশের মালিক তাদের মৃত ভাই জন ওয়ালটনের উত্তরাধিকারীরা।
জন্ম ও বেড়ে ওঠা
অ্যালিস ওয়ালটনের জন্ম ১৯৪৯ সালের ৭ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের আরকানসাসের নিউপোর্টে। কলেজ থেকে পাশ করে বেরোনোর পর কয়েক বছর তিনি ইকুইটি অ্যানালিস্ট ও মানি ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছেন। অ্যালিস ওয়ালটন ১৯৭১ সালে টেক্সাসের ট্রিনিটি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি শিল্প সংগ্রহের দিকে ঝোঁকেন। নিজ শহর আরাকানসাসের বেন্টনভিলে পারিবারিক মালিকানাধীন ক্রিস্টাল ব্রিজেস মিউজিয়াম অব আমেরিকান আর্টের চেয়ারপারসন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন এক দশক। অ্যালিসের আর্ট ব্রিজেস ফাউন্ডেশন মার্কিন শিল্পকলার জন্য কাজ করে। তিনি সম্প্রতি অ্যালিস এল. ওয়ালটন স্কুল অব মেডিসিন প্রতিষ্ঠা করেছেন।
অ্যালিসের নানা শখ
মাত্র ১০ বছর বয়সে অ্যালিস দুই ডলারে পাবলো পিকাসোর চিত্রকর্মের একটা অনুলিপি কেনেন। তাঁর ব্যক্তিগত বিশাল শিল্প সংগ্রহ রয়েছে। অ্যালিসের বিশাল শিল্প সংগ্রহে রয়েছে কিংবদন্তি শিল্পীদের আঁকা চিত্রশিল্প।
২০১১ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আরকানসের বেন্টনভিলে ‘ক্রিস্টাল ব্রিজেস মিউজিয়াম অব আমেরিকান আর্ট’ নামের একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেন। এই জাদুঘর ঔপনিবেশিক যুগ থেকে আধুনিক আমল পর্যন্ত মার্কিন শিল্পের একটি বিশাল সংগ্রহশালা। বিনা মূল্যে যে কেউ দুই লাখ বর্গফুটের এই জাদুঘর ঘুরে দেখতে পারেন। বিশ্বের নানা প্রান্তের নামকরা ৬৪টি জাদুঘরকে অ্যালিস নিয়মিত অনুদান দেন। ঘোড়ার রেসে বাজি ধরা অ্যালিসের আরেকটি শখ।
দান ও দাতব্য কাজ
দান ও দাতব্যকাজের জন্য অ্যালিসের নামডাক রয়েছে। দু-একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। ২০১৬ সালে ওয়ালমার্টের একটা শেয়ার পারিবারিক ফাউন্ডেশনে দান করেন অ্যালিস। যার মূল্য ছিল ২২ দশমিক ৫ কোটি ডলার বা ২ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা। পরের বছরই তিনি আরকানস বিশ্ববিদ্যালয়কে ১২ কোটি ডলার বা ১ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা দান করেন আর্ট স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য।
দুর্ঘটনা ও বিয়ে
অ্যালিস বেশ কয়েকবার ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। ১৯৮৩ সালে গাড়ি চালাতে গিয়ে তিনি এমন মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হন যে ২৪ বার অস্ত্রোপচারের ছুরি-কাঁচির নিচে নিজেকে সঁপে দিতে হয়েছে। এরপরও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে দীর্ঘ সময় লেগেছে।
ব্যক্তিজীবনে অ্যালিস দুবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেও তাঁর কোনো বিয়েই টিকেনি। ১৯৭৪ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে তিনি প্রথমবার বিয়ে করেন এক ঠিকাদারকে, যিনি তাঁর বাড়িতে সুইমিংপুল বানিয়ে দিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই সেই বিয়েতে অ্যালিসের পরিবারের কারও মত ছিল না। বিয়ের এক বছর পর থেকেই তাঁরা আলাদা থাকতে শুরু করেন। আড়াই বছরের মাথায় পাকাপাকিভাবে বিচ্ছেদ হয়ে যায় এই দম্পতির। অ্যালিসের কোনো সন্তান নেই। ফলে তার সম্পদের পরবর্তী মালিক কে হবে, তা নিয়ে রয়েছে জোর আলোচনা।