Home বিজ্ঞান অজান্তেই খাচ্ছেন প্লাস্টিক? জানুন বাঁচার ১০টি উপায়

অজান্তেই খাচ্ছেন প্লাস্টিক? জানুন বাঁচার ১০টি উপায়

তাসনিম তাবাসসুম
৬৬ views

অনিচ্ছাসত্ত্বেও আমাদের শরীরে প্রতিদিন প্রবেশ করছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা, যা পানীয় জল, প্রক্রিয়াজাত খাবার এমনকি বাতাসের ধুলোর মধ্যেও রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ গড়ে প্রতি সপ্তাহে একটি ক্রেডিট কার্ডের সমান ওজনের প্লাস্টিক খেয়ে ফেলছে! 

যদিও সম্পূর্ণভাবে এড়ানো কঠিন, তবে কিছু সহজ অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা এই ক্ষতিকর উপাদান থেকে অনেকাংশে রক্ষা পেতে পারি।

১. প্লাস্টিকের পরিবর্তে প্রাকৃতিক কাটিং বোর্ড ব্যবহার করুন

রান্নার সময় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত জিনিসগুলোর মধ্যে একটি হলো কাটিং বোর্ড। অনেকেই প্লাস্টিকের কাটিং বোর্ড ব্যবহার করেন, যা খাবার কাটার সময় ক্ষয়ে গিয়ে মাইক্রোপ্লাস্টিক তৈরি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, বছরে একটি পরিবার লক্ষাধিক মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা খেতে পারে শুধু প্লাস্টিক বোর্ড ব্যবহার করার ফলে। তাই বাঁশ, কাঠ বা প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি বোর্ড ব্যবহার করা স্বাস্থ্যকর ও টেকসই বিকল্প।

২. বোতলজাত পানি এড়িয়ে ফিল্টার করা পানি পান করুন

বোতলজাত পানিতে ট্যাপ পানির তুলনায় গড়ে দ্বিগুণ পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিক থাকে। কারণ প্লাস্টিক বোতল তৈরি ও সংরক্ষণের সময় কণা পানিতে মিশে যায়। আধুনিক ও উন্নতমানের পানি ফিল্টার (যেমন অ্যাক্টিভেটেড কার্বন বা রিভার্স অসমোসিস) ব্যবহারের মাধ্যমে ট্যাপের পানিকে অনেকটাই নিরাপদ করতে পারেন এবং বোতলজাত পানির ওপর নির্ভরতা কমাতে পারেন।

5

প্রক্রিয়াজাত খাবারের সাথে প্লাস্টিক খাচ্ছেন নাতো? ছবি: ফ্রিপিক

৩. প্রক্রিয়াজাত খাবার সীমিত করুন

ফ্রোজেন ফুড, ক্যানজাত খাবার কিংবা প্রি-প্যাকেট স্ন্যাকসে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি বেশি পাওয়া যায়। উৎপাদন ও প্যাকেজিংয়ের সময় প্লাস্টিকের সংস্পর্শে এরা দূষিত হতে পারে। বরং ঘরে তৈরি তাজা খাবার খান, যেখানে আপনি নিজেই উপকরণ ও সংরক্ষণ পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।

৪. খাবার সংরক্ষণে টেকসই পাত্র ব্যবহার করুন

অনেকেই রান্না করা খাবার প্লাস্টিকের বক্সে সংরক্ষণ করেন বা ওভেনে গরম করেন। এতে প্লাস্টিক গলে গিয়ে খাবারে মিশে যেতে পারে। এর চেয়ে ভালো হলো গ্লাস, সিরামিক বা স্টেইনলেস স্টিলের পাত্র ব্যবহার করা, যা দীর্ঘস্থায়ী, টক্সিনমুক্ত ও সহজে পরিষ্কারযোগ্য।

৫. চা বানাতে প্লাস্টিকমুক্ত বিকল্প বেছে নিন

অনেক আধুনিক চা ব্যাগে প্লাস্টিকের স্তর থাকে, যা গরম পানিতে মাইক্রোপ্লাস্টিক ছাড়ে। ঢালা চা পাতা ব্যবহার করলে আপনি শুধু চায়ের স্বাদই উপভোগ করবেন না, বরং শরীরকেও প্লাস্টিক দূষণ থেকে রক্ষা করবেন। চাইলে পুনর্ব্যবহারযোগ্য স্টেইনলেস স্টিলের চা স্ট্রেইনার ব্যবহার করতে পারেন।

৬. রান্নার যন্ত্রপাতিতে প্লাস্টিক এড়িয়ে চলুন

নন-স্টিক কুকওয়্যার বা প্লাস্টিক হ্যান্ডেলের রান্নার চামচ উচ্চ তাপে গলে গিয়ে মাইক্রোপ্লাস্টিক তৈরি করতে পারে। এর পরিবর্তে কাস্ট আয়রন, স্টেইনলেস স্টিল বা কাঠের তৈরি রান্নার সরঞ্জাম ব্যবহার করুন। এগুলো শুধু নিরাপদই নয়, অনেক বেশি টেকসইও।

৭. ঘরের ধুলো নিয়মিত পরিষ্কার করুন

গবেষণায় জানা গেছে, মাইক্রোপ্লাস্টিক শুধু খাবার বা পানীয় থেকেই নয়, বরং বাতাসের ধুলোর মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করতে পারে। বিশেষত বাচ্চারা যেহেতু মেঝেতে বেশি সময় কাটায়, তাদের জন্য ঝুঁকি আরও বেশি। তাই নিয়মিত ঘর মুছা ও ধুলো পরিষ্কারের মাধ্যমে বাড়ির পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি।

4

সিন্থেটিক কাপড় ধোয়ার সময় পানির সাথে মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা বেরিয়ে আসে, যা পরিবেশ ও আমাদের পানির উৎস দূষিত করে, ছবি: ফ্রিপিক

৮. সিন্থেটিক পোশাকের বদলে প্রাকৃতিক ফাইবার বেছে নিন

পলিয়েস্টার, নাইলন বা অ্যাক্রিলিকের মতো সিন্থেটিক কাপড় ধোয়ার সময় পানির সাথে মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা বেরিয়ে আসে, যা পরিবেশ ও আমাদের পানির উৎস দূষিত করে। তুলা, হেম্প, লিনেন বা উল-এর মতো প্রাকৃতিক ফাইবার থেকে তৈরি পোশাক ও বিছানার চাদর ব্যবহার করুন। এগুলি শুধুমাত্র পরিবেশবান্ধব নয়, ত্বকের জন্যও ভালো।

৯. স্থানীয় ও খোলা বাজার থেকে কেনাকাটা করুন

সুপারমার্কেটের অধিকাংশ খাবারই প্লাস্টিক মোড়কে রাখা থাকে। এর পরিবর্তে স্থানীয় বাজার বা খোলা হাট থেকে তাজা শাকসবজি ও মাছ-মাংস কিনুন এবং নিজের কাপড়ের ব্যাগ বা ঝুড়ি ব্যবহার করুন। এতে প্লাস্টিক ব্যবহারের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।

3 1

সুপারমার্কেটের অধিকাংশ খাবারই প্লাস্টিক মোড়কে রাখা থাকে, ছবি: ফ্রিপিক

১০. সচেতনতা ছড়ান এবং অন্যদের উদ্বুদ্ধ করুন

মাইক্রোপ্লাস্টিক সমস্যা সমাধানে ব্যক্তি উদ্যোগ যেমন জরুরি, তেমনি সামাজিক সচেতনতাও গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের সদস্য, বন্ধু ও প্রতিবেশীদের এ বিষয়ে জানানো, পরিবেশবান্ধব পণ্যের প্রচার করা এবং নীতিনির্ধারকদের দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করাও আপনার করণীয়।

সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ