পৃথিবীর সবচেয়ে প্রতিকূল পরিবেশে যেখানে বৃষ্টিপাত নেই, খরা মাসের পর মাস বা এমনকি বছরের পর বছর চলতে পারে সেখানে কিছু উদ্ভিদ টিকে থাকে। এদের পাতা শুষ্ক বাদামি রঙের, গাছগুলো দেখলে মনে হবে গাছগুলো মৃত।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো এক ফোঁটা পানি পেলেই গাছগুলোর মৃত পাতা মুহূর্তেই সতেজ হয়ে সবুজ রং ধারণ করে। যেন কোনো এক অলৌকিক ক্ষমতায় এই মৃত গাছগুলো জীবন ফিরে পায়। এদের বলা হয় পুনরুত্থান উদ্ভিদ বা ‘জম্বি প্ল্যান্ট’।
পুনরুত্থান উদ্ভিদ চরম শুষ্কতা সহ্য করতে পারে। দেহের প্রায় ৯৫% পানি হারিয়ে ফেলে তবুও মারা যায় না। যখন পানির সংস্পর্শে আনা হয়, তখন কিছুক্ষনের মধ্যেই জীবিত হয়ে যায়—এমনকি স্বাভাবিকভাবে ফটোসিনথেসিস শুরু করে।
এই উদ্ভিদগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত সেলাজিনেলা লেপিডোফিলা (Selaginella lepidophylla), যাকে রোজ অব জেরিকো নামেও ডাকা হয়। এটি মরুভূমির গাছ, বিশেষ করে চিহুয়াহুয়ান মরুভূমিতে পাওয়া যায়। খরার সময় একটি গোল বলের মতো শুকিয়ে যায়, পানির সংস্পর্শে এলেই খোলে ও সবুজ রঙের জীবন্ত গাছে রূপান্তরিত হয়। এছাড়া Myrothamnus flabellifolia (দক্ষিণ আফ্রিকা) ও Haberlea rhodopensis (বলকান অঞ্চল) নামেও এমন উদ্ভিদ আছে যারা একইভাবে বাঁচে।

সেলাজিনেলা লেপিডোফিলা (Selaginella lepidophylla), ছবি: বিবিসি
এই পুনর্জীবনের ক্ষমতার পেছনে রয়েছে রাসায়নিক ও জেনেটিক কৌশল। এরা ট্রেহালোস (trehalose) ও রাফিনোজ (raffinose) নামক বিশেষ চিনি উৎপন্ন করে, যা কোষের প্রোটিন ও ঝিল্লিগুলোকে শুষ্ক অবস্থায়ও স্থিতিশীল রাখে। সেইসাথে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করে, যা সাধারণত পানি হারালে হয়।
উদ্ভিদগুলোর জিনগত ক্রিয়ার কারণে শুষ্কতার সময় এরা LEA (Late Embryogenesis Abundant) প্রোটিনসহ নানা রক্ষাকারী প্রোটিন তৈরি করে, যা কোষের ভেতরে স্পঞ্জের মতো কাজ করে এবং পানি না থাকলেও গঠন অটুট রাখে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খরা আরও বাড়ছে, তাই গবেষকরা চেষ্টা করছেন পুনরুত্থান উদ্ভিদের শুষ্কতা সহনশীল জিনগুলো প্রধান ফসলে প্রয়োগ করতে। সফল হলে ধান, গম কিংবা ভুট্টার মতো ফসল খরায়ও বেঁচে থাকতে পারবে। কিছু উদ্ভিদ যেমন ক্রেটেরোস্টিগমা প্ল্যানটাজিনিয়াম (Craterostigma plantagineum), শুষ্কতার ফলে সৃষ্ট ডিএনএ ক্ষতিও মেরামত করতে পারে, যা ভবিষ্যতে চিকিৎসা ক্ষেত্রেও কাজে লাগতে পারে।
সূত্র: বিবিসি ও ডেইলি মেইল